ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দূষণের কবলে ঢাকার শীত

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬

দূষণের কবলে ঢাকার শীত

শীতকালে স্বাভাবিক শীত পড়বে, আর গরমকালে গরমÑ এটাই প্রকৃতির নিয়ম। কিন্তু রাজধানীর জন্য সেই নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটতে দেখা যাচ্ছে কয়েক বছর। গরমকালে ঢাকায় স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি গরম অনুভূত হয়। ঢাকা এমন ইটকাঠ-কংক্রিটের জঙ্গলে পরিণত হয়ছে, তার বহুতল ভবনের সংখ্যা এত বিপুল পরিমাণে বর্ধিত হয়েছে যে এখন সেই সব ভবনের ফ্ল্যাটের ভেতর গরম আটকে থাকে, আর বায়ু চলাচল সুগম না হওয়ায় হাঁসফাঁস গরমের শিকার হয় ফ্ল্যাটবাসী। এ তো গেল গরমের কথা। শীতকালে উল্টো ছবি, ঢাকার বাইরে জেলাগুলোয় শীতের তীব্রতা পৌষের শুরু থেকে বিরাজ করলেও ঢাকা মোটেই কাতর হচ্ছে না শীতে। ঢাকায় শীত নেই তেমন, বরং বলা যায় কোন কোন এলাকার ফ্ল্যাট বাড়িতে দিনেরবেলা, এমনকি রাতেও গরমে গলদঘর্ম হয়ে উঠতে হয়। সত্যি সেলুকাস, বিচিত্র এ ঢাকা! শেষ পর্যন্ত দূষণের কবলে পড়েছে ঢাকার শীত! এটা বহুল উচ্চারিত যে আয়তনের তুলনায় অতিরিক্ত মানুষ বসবাস করছে এই শহরে। জনতার চাপে রীতিমতো ভারাক্রান্ত ঢাকা। তার ওপর রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত যানবাহনের চাপ এবং নানাবিধ কলকারখানা। ঢাকার পরিবেশের এমন বিপর্যয় ঘটেছে যে শীতকাল এসে গেলেও এখানে তেমন শীত আর অনুভূত হচ্ছে না। বায়ু দূষণের ফলে ঢাকার দম রীতিমতো বন্ধ হওয়ার যোগাড়, নাভিশ্বাস উঠে গেছে শহরটির। তবু আমাদের কর্তৃপক্ষ তীব্র জোরালো কোন প্রোগ্রাম হাতে নিতে পারছেন না। সত্যি বলতে কি ঢাকার বায়ু দূষণসহ অন্যান্য দূষণ থেকে বাঁচতে হলে আমাদের প্রত্যেককেই সচেতন হতে হবে এবং কিছু না কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তবে সবচেয়ে বড় উদ্যোগ যে সরকারকেই নিতে হবে সেটা বলাই বাহুল্য। ঢাকার বায়ু দূষণ নিয়ে নতুন তথ্যের প্রতি অনেকেরই দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। বায়ু দূষণ কমাতে রাজধানী ও এর আশপাশের ইটভাঁটি, যানবাহন ও ট্যানারিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ডিএনসিসির মেয়র যথার্থই বলেছেন, ‘প্রতিদিন হাজার হাজার টন নির্মাণ বর্জ্য, মেডিক্যাল বর্জ্য, বাসাবাড়ির বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর বেশিরভাগই বাতাসের সঙ্গে মিশে যায়।’ সবুজ ঢাকা গড়তে আগামী দুই বছরে ঢাকায় তিন লাখ ২৫ হাজার গাছ লাগানো হবে এমন সংবাদ আমাদের আশাবাদী করে বটে। তবে বায়ু দূষণ থেকে মুক্তির জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের কোন বিকল্প নেই। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কথা জোরেশোরে বলে আমরা নিজেদের অপরিণামদর্শী ভূমিকাকে আড়াল করতে চাই। আমরা যদি একটি গাছও কাটি, কিংবা এক ঝুড়ি বর্জ্য ফেলি নদীতে তবে পরিবেশ দূষণে আমাদের ভূমিকাকে খাটো করে দেখা যাবে কি? শব্দ দূষণকে আমরা যেন তোয়াক্কাই করি না। অথচ এটি মানুষের কর্মক্ষমতা হ্রাসের অন্যতম কারণ। ঢাকা শহরে নানাভাবে চলছে বিবিধ দূষণ। বহু প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে নাগরিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি সর্ম্পূণ উপেক্ষা করে। এতে মারাত্মক পরিবেশ দূষণ ঘটেছে। বনভূমি, নদী ও জলাশয় দখল এবং দূষণ প্রতিরোধ ও বর্জ্য পরিশোধনÑএই কাজগুলো যথাযথভাবে চললেও পরিবেশের অনেকটা ভারসাম্য রক্ষা পায়। পরিবেশ সুস্থ অবস্থায় ফিরলে ঢাকায় প্রকৃতিসম্মতভাবে শীত পড়বেÑ পরিবেশবিদদের এ কথা উপেক্ষা করা যাবে না।
×