ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিমানে বিপত্তি!

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬

বিমানে বিপত্তি!

রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সে আদৌ কোন প্রশাসন আছে কিংবা কাজ করছে বলে মনে হয় না। সর্বশেষ, নোজ হুইল বা নাকের ডগার চাকা ফেটে যাওয়ায় মাসকট থেকে আসা একটি বিমান চট্টগ্রামে না নেমে ঢাকায় জরুরী অবতরণে বাধ্য হয়। এতে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কমপক্ষে দু’ঘণ্টা সব ধরনের ফ্লাইটের ওঠানামা বন্ধ রাখতে হয়। ফলে ক্ষয়ক্ষতি এবং ব্যাপক যাত্রী দুর্ভোগের বিষয়টি সহজেই অনুমান করা যেতে পারে। মাসকট থেকে ফ্লাইটটি উড্ডয়ন করার পরপরই এর ত্রুটি ধরা পড়ে। এ ঘটনায় চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর আগে ২৭ নবেম্বর হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের একটি বোয়িং যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে জরুরী অবতরণে বাধ্য হয় তুর্কমেনিস্তানে। প্রাথমিক তদন্তে ওই উড়োজাহাজের ইঞ্জিন অয়েলের ট্যাঙ্কের একটি নাট ঢিলা থাকায় এই বিপত্তি ঘটে বলে অনুমিত হয়। এ ঘটনার দুই সপ্তাহ পর বিমানের আরেকটি উড়োজাহাজ মিয়ানমারের উদ্দেশে যাত্রা করে চট্টগ্রাম পর্যন্ত যাওয়ার পর সমস্যা দেখা দিলে ফিরে আসতে বাধ্য হয় ঢাকায়। তদুপরি রাষ্ট্রপতিকে বহনকারী একটি বিমানের পাখা দাহ্য পদার্থ দিয়ে ধোঁয়ার অভিযোগও আছে, যা এভিয়েশন আইন অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ ও নিষিদ্ধ। উপর্যুপরি এসব ঘটনায় সহজেই প্রতীয়মান হয়, যে বা যারা বাংলাদেশ বিমানের প্রশাসন, রক্ষণাবেক্ষণ, নিরাপত্তা ও উড্ডয়নের সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের সবাই না হোক অন্তত অধিকাংশ অযোগ্য, অদক্ষ, অমনোযোগী, সর্বোপরি দায়িত্বজ্ঞানহীন। সাম্প্রতিককালে অবশ্য সর্বাধিক আলোচিত ঘটনা হাঙ্গেরিগামী প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের মারাত্মক ত্রুটি। প্রধানমন্ত্রী শুধু একজন ভিভিআইপি নন, তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা। সর্বোপরি তাঁর জীবনাশঙ্কা প্রবল। এর আগে তাঁকে বহুবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে বহুল আলোচিত একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ। সে অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের ত্রুটি চিহ্নিত করাসহ এজন্য দায়ীদের চিহ্নিত করতে গঠন করা হয় একাধিক তদন্ত কমিটি। ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় শেষ পর্যন্ত এর তদন্তভার দেয়া হয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের হাতে। ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত ৯ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং কয়েকজনকে নেয়া হয়েছে রিমান্ডে। সার্বিক অবস্থাদৃষ্টে এর পেছনে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যোগাযোগ এমনকি পাকিস্তানের কুখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সম্পৃক্ততার কথাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটির যেখানে অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে থেকে চূড়ান্ত সেফ কাস্টডিতে থাকার কথা, সেখানে সেই বিমানে রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতি পরিলক্ষিত হবে এবং নাট-বল্টু ঢিলা থাকবে, এটা নিঃসন্দেহে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। এর দায়দায়িত্ব বাংলাদেশ বিমানের ‘টপ টু বটম’ কেউই এড়াতে পারেন না। দ্বিমতের অবকাশ নেই যে, এর ফলে দেশে-বিদেশে বিমানের ভাবমূর্তি ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর আগেও প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী একটি বিমানের ঢাকায় অবতরণকালে রানওয়েতে একাধিক ধাতব বস্তু পাওয়া গিয়েছিল। বিমানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ বৈঠকে তিনি বাংলাদেশ বিমানের সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে রীতিমতো হতাশা প্রকাশ করে একে পুরোপুরি ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিয়েছেন। অগ্রাধিকার ও জরুরী ভিত্তিতে তা করা না হলে বাংলাদেশ বিমান মুখ থুবড়ে পড়বে অচিরেই।’ এমন আশঙ্কা অমূলক নয়।
×