ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রশাসন নীরব

পাহাড় কাটার মহোৎসব

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬

পাহাড় কাটার মহোৎসব

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ উখিয়ার পার্শ্ববর্তী নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তে পাহাড় কাটার মহোৎসব চলছে। টুপাইস কামাইকল্পে পাহাড় কাটতে জামায়াত নেতা হাবিবুর রহমান ফন্দি এঁটেছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রি সড়ক নির্মাণকাজে উখিয়ার টিভি সম্প্রচার কেন্দ্রের পাশে ও ঘুমধুমে একাধিক পাহাড় কেটে সমতল ভূমিতে পরিণত করছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। কক্সবাজারের জামায়াত নেতা ওই সিন্ডিকেটকে পাহাড় কাটতে উৎসাহ ও সুবিধাজনক আয় বলে উদ্বুদ্ধ করায় দিনে রাতে এস্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে ১৫-২০টি ডাম্পার দ্বারা সড়ক নির্মাণে একাধিক জলাশয় ভরাট কাজে বালু সরবরাহ দিচ্ছে তারা। এতে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান সচেতন মহল। কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা এবং উপজেলা প্রশাসন প্রকাশ্যে পাহাড় কাটার দৃশ্যটি দেখেও যেন দেখেন না। জানা যায়, সরকার পাহাড় কাটা নিষিদ্ধ করে আইন প্রণয়ন করেছে। ইতোপূর্বে পরিবেশ অধিদফতর ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযান জোরদার করায় ভূমিদস্যুদের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার অসংখ্য পাহাড়। বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রি সড়ক নির্মাণ কাজে মাটি ও বালু দিয়ে জলাশয় ভরাট কাজের দায়িত্ব নিয়ে কক্সবাজার জামায়াতের নেতা হাবিবুর রহমান ইতোপূর্বে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে সাবেক মেম্বার আলী চানের পাহাড় কেটে সমতল করে ফেলেছে। বর্তমানেও অসংখ্য উঁচু পাহাড় কেটে চলছে নির্বিচারে। সচেতন মহল জানান, জেলা প্রশাসনের ইজারা দেয়া বহু বালু মহাল রয়েছে জেলার বিভিন্ন স্থানে। সেখান থেকে নির্ধারিত মূল্যে বালু কিনে ওসব জলাশয় ও খানা-খন্দক ভরাট করা যেতে পারে। কিন্তু তা না করে ওই জামায়াত নেতা স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক কতিপয় নেতাকর্মীদের নিয়ে সিন্ডিকেট করে অন্তত ১৫০ ফুট উঁচু পাহাড় কেটে সরকারের আইন উপেক্ষা করছে। স্থানীয়রা জানান, বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রি সড়ক থেকে অন্তত ১ হাজার গজ দূরে অবস্থিত পাহাড়গুলো কেটে বালু ও মাটি নিয়ে যাওয়ায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। তুমব্রু থেকেও পাহাড় কেটে বালু আনছে তারা। অভিজ্ঞজনরা জানান, মিয়ানমার সীমান্ত থেকে মাত্র পাঁচশ’ গজ অদূরে পাহাড়গুলো বিজিবির জন্য টহলে ওৎ পেতে থাকার উপযোগী স্থান। অনেক সময় সীমান্ত রক্ষার খাতিরে বিজিবি ওই পাহাড়গুলোকে ঢাল হিসেবেও ব্যবহার করতে পারে। বর্তমানে ওসব পাহাড় কেটে সাবাড় করে ফেলা হচ্ছে। রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রভাবশালী ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় যুবলীগ-ছাত্রলীগের প্রায় ২০ জনের সিন্ডিকেট ঘুমধুমের নয়াপাড়ার মামুনের পাহাড়, ছৈয়দ নুর, আলমের ও ভুলুর পাহাড় কাটছে নির্বিচারে। পাহাড়ের মালিকদের ধমক ও অভয় দিয়ে সিন্ডিকেট সদস্যরা সরকারের পাহাড় কাটা নিষেধ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সিন্ডিকেট সদস্যরা সাতশ’ টাকা হারে প্রতি গাড়ি বালু সরবরাহ করছে ওই জামায়াত নেতাকে। আর পাহাড় মালিককে দেয়া হচ্ছে গাড়ি পিছু মাত্র ৫০ টাকা। অনেক সময় বালু ও মাটির সারিবদ্ধ ডাম্পার পাহাড়খেকোরা অন্যত্রও সরবরাহ দিচ্ছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ নিষেধ। ঘুমধুমে পাহাড় কাটার সংবাদ পেয়েছি। শীঘ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সর্দার শরিফুল ইসলাম রবিবার জনকণ্ঠকে বলেন, ঘুমধুমে পাহাড় কাটার বিষয়ে কোন ধরনের অনুমতি নেয়া হয়নি। প্রচলিত আইন অনুসারে পাহাড় কাটা নিষেধ। রাষ্ট্রীয় কাজে হলেও সরকারের অনুমতি প্রয়োজন। ঘুমধুমে পাহাড় কাটা বন্ধে অভিযান এবং পাহাড়খেকোদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×