ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী বছর মেরকেলের জন্য চ্যালেঞ্জের

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬

আগামী বছর মেরকেলের জন্য চ্যালেঞ্জের

জার্মানির চ্যান্সেলর এ্যাঙ্গেলা মেরকেল এমন এক ইউরো সঙ্কটের মুখে পড়েছেন যা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) জন্য এক অস্তিত্ব সঙ্কটে পরিণত হয়েছে। তিনি ইউক্রেনে রাশিয়ার ভূখ- দখল নিয়ে সংঘাতে জড়িয়েছেন। কার্যত তিনি এককভাবে তার দেশে গ্রহণ করেছেন প্রায় ১০ লাখ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে, যারা ভিড় জমিয়েছিল ইউরোপের বিভিন্ন সীমান্তে। সমকক্ষদের মধ্যে এ বিষয়ে তিনি ছিলেন বলতে গেলে একা। মেরকেল সে চরম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বিভিন্ন প্রকট সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। বার্লিনে সোমবার সন্ত্রাসী হামলায় ১২ জন নিহত হওয়ার পর তার ১১ বছরের দায়িত্ব পালনের সময়ে এ পরিস্থিতিকে সচচেয়ে কঠিন বলে অভিহিত করেছেন দেশের প্রায় সবাই। ইসলামিক স্টেট (আইএস) গ্রুপ হামলার দায় স্বীকার করেছে। কর্তৃপক্ষ মুসলিম উগ্রপন্থী সালাফিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত এক তিউনিসীয়কে খুঁজছে। মেরকেলের দল এর মধ্যেই এ বছর কয়েকটি আঞ্চলিক নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে। ২০১৭ সালের জাতীয় নির্বাচন সামনে। কিন্তু দলটি আরও নাজুক পরিস্থিতিতে রয়েছে। নির্বাচনে মেরেকেলের পরাজয় হলে বিশ্ব পরিস্থিতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইউরোপে দক্ষিণপন্থীরা সাধারণ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় মেরকেলকে দেখা হচ্ছে রক্ষণশীল গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে এক শক্তি হিসেবে। তিনি দুর্বল হলে এবং ফ্রান্সে আগামী বসন্তের নির্বাচনে একজন পপুলিস্ট প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে এর মধ্যেই মারাত্মভাবে দুর্বল হয়ে পড়া ইইউ এমনকি বিপর্যয়করভাবে কাহিল হয়ে মরণদশায় পড়তে পারে। মেরেকেলের জীবনী লেখক ম্যাকুলিন বয়সেন বলেছেন, এমন পরিস্থিতি হবে সন্ত্রাসের চেয়ে আরও উদ্বেগজনক। সন্ত্রাস ভয়াবহ ও ভীতিকর। কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত অত্যন্ত অনিশ্চিত। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি বলেন, আমরা জানি না আমেরিকায় কী ঘটবে এবং রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে কী নীতি গ্রহণ করবেন ট্রাম্প। এমনকি ইউরোপকেও বিবেচনায় নেয়া হবে না এবং সত্যিই তা উদ্বেগের বিষয়। বর্তমানে মেরকেলের জন্য প্রধান উদ্বেগ হচ্ছে নিজ দেশের পক্ষ থেকে। সংবাদপত্র বিল্ড বুধবার এ বিষয়ে জাতীয় মানসিকতা তুলে ধারার চেষ্টা করেছে ‘এ্যাংস্ট’ বা ফিয়ার শিরোনামে। এ বিশাল শিরোনামে নিকোলাস ব্লোম লিখেছেন, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়টি নির্ভর করে রাজনীতিবিদদের ওপর। বিশেষ করে মেরকেলের ওপর। কিন্তু তা হবে বেশ কঠিন। তিনি দীর্ঘদিনের আস্থা ও বিশ্বস্ততার ওপর নির্ভর করতে পারছেন না। তাতে তিনি নিশ্চিতও নন যেমনটা ছিলেন দু’বছর আগে। দেশের অনেকে তাদের ক্ষোভ, তাদের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে এ্যাঞ্জেলা মেরেকেলের ওপর। তাই বর্তমান পরিস্থিতি হবে তার জন্য এক কঠিন পরীক্ষা। মেরকেল তৃতীয় মেয়াদে প্রতিযোগিতার জন্য তার অনীহার বিষয়ে প্রকাশ্যেই সতর্কতার সঙ্গে ভাবছেন। কিন্তু এ রকম ভাবার কারণ ঠিক তার দল বা তার দেশ নয়। কারণ হচ্ছে ইউরোপে পপুলিস্ট শক্তি ক্রমেই প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে। প্রায় যে কোন গণতান্ত্রিক নেতা তিন মেয়াদ ক্ষমতায় থাকার পর এ ধরনের অভিপ্রায় পোষণে নাজুক হয়ে উঠবেন। তিনি প্রতিকূল পরিস্থিতির ব্যাপারে সজাগ রয়েছেন। দলীয় সম্মেলনে প্রতিনিধিরা আভাস দিয়েছেন প্রায় ১০ লাখ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে দেশে আশ্রয় দেয়ার সিদ্ধান্তে অনেক জার্মানিই তার ওপর অসন্তুষ্ট ও শরণার্থীদের বেশিরভাগই মুসলিম। মেরকেল তাদের কাছে সমর্থন দাবি করে বলেছেন, আপনাদের অবশ্য সহযোগিতা করতে হবে আমাকে। তিনি দক্ষিণপন্থী অলটারনেটিভ ফর জার্মানির কাছ থেকে বিপদের সম্মুখীন হবেন বলে ভাবছেন। অলটারনেটিভ ফর জার্মানি ইউরোবিরোধী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত য়র ২০১৩ সালে। এ অবস্থায় মেরকেলের জন্য অপেক্ষা করছে কঠিন রাজনৈতিক পরীক্ষা। Ñনিউইয়র্ক টাইমস
×