ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৩৪ নৌকায় আসা চার শতাধিক রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬

৩৪ নৌকায় আসা চার শতাধিক রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে  ফেরত

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে ॥ গত কয়েকদিনে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ কিছুটা কমে আসলেও হঠাৎ করে ৩৪ নৌকায় করে প্রায় চার শতাধিক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ চেষ্টা ভাবিয়ে তুলেছে সচেতন মহলকে। টেকনাফ সীমান্তের তিনটি পয়েন্টে ৩৪ নৌকায় করে এবং উখিয়া ও ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে ৩৩ নারী-পুরুষ ও শিশুসহ বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে তাদের ফেরত পাঠায় বিজিবি সদস্যরা। রবিবার সকাল ৮টায় ওসব রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়। টেকনাফ ২বিজিবি ব্যাটালিয়ন সূত্র জানায়, রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত নাফ নদী পার হয়ে হ্নীলা, দমদমিয়া, টেকনাফ পৌরসভার সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা বোঝাই ৩৪ নৌকা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে। ওই সময় বিজিবির সদস্যরা তা প্রতিহত করে। ৩৪ নৌকায় প্রায় সাড়ে তিন শ’ মতো মিয়ানমার নাগরিক ছিল। এছাড়াও কক্সবাজার ৩৪বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার জানান, রবিবার সকালে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে ৩৩ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়। এদের মধ্যে ১৪ পুরুষ, ১১ নারী ও ৮ শিশু ছিল। রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তের প্রতিটি পয়েন্টে বিজিবি টহল জোরদার রয়েছে। আন্তর্জাতিক ও রোহিঙ্গাদের সেবায় নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থার মতে, মিয়ানমার সেনা সদস্যদের নির্যাতনের মুখে অন্তত ২৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। এদের অনেকে ইতোমধ্যে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জাতির বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের (আরএসও) সশস্ত্র ক্যাডাররা রোহিঙ্গাদের দেশ ত্যাগ করতে বিভিন্নভাবে উস্কে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে দলে দলে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার থেকে এদেশে পালিয়ে আসার চেষ্টা করছে। গত ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বিজিপি ক্যাম্পে হামলা পরবর্তী অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট ঘটনার পর রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর নির্যাতন শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর হত্যা, ধর্ষণ, বাড়ি-ঘরে আগুন ও পুরুষদের গুমের ঘটনার আড়াই মাস পার হলেও এ পর্যন্ত সমাধানের সঠিক কোন পথ বাতলাতে পারেনি মিয়ানমার সরকার। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি মিয়ানমারে সরেজমিন পরিদর্শন করে এসেছেন। স্থানীয়রা জানান, বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারলে বিভিন্নভাবে আর্থিক সহযোগিতা পায় রোহিঙ্গারা। এ কারণেই রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের অসহায়ত্বের দোহাই তুলে আরএসও ক্যাডাররা বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা এনে কিছু কিছু তাদের মধ্যে বণ্টন করে সিংহভাগ টাকা আত্মসাত করতে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের এদেশে পালিয়ে আসতে উদ্ভুদ্ধ করছে বলে সূত্র জানিয়েছে। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা কক্সবাজার ও টেকনাফের উপকূলীয় ঝাউ বাগান ও বনভূমি দখল করে বসবাস ও দৃষ্টিনন্দন ঝাউবিথি সাবাড় করে দিচ্ছে। নিত্য নতুন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা অবাধে ঝাউ বাগান কেটে বসতি স্থাপন করে চলছে। বর্তমানে যে হারে রোহিঙ্গাদের বসতি স্থাপন বৃদ্ধি এবং ঝাউ গাছ কাটা যাচ্ছে, তা রোধ করা না গেলে অচিরেই দৃষ্টিনন্দন ঝাউ বাগান উজাড় হয়ে যাবে। প্রতিদিন ঝাউ গাছ কেটে নতুন নতুন ঝুপড়ি তৈরি করা হচ্ছে কক্সবাজার ও টেকনাফে। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও আরএসও ক্যাডাররা ওসব অবৈধ রোহিঙ্গাদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় ও বিভিন্নভাবে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। সচেতন মহল জানান, সাগরের করাল গ্রাস ও ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা করতে টেকনাফ উপকূলে সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থা এবং উপকূলীয় বন বিভাগ বিভিন্ন জাতের বাগান, ম্যানগ্রোভ বঙ্গোপসাগরের উপকূলে দৃষ্টিনন্দন ঝাউ বাগান সৃজন করেছিল। সাবরাং, টেকনাফ সদর ও বাহারছড়া হারিয়াখালী থেকে শামলাপুর পর্যন্ত প্রায় ৪৫ কিলোমিটার উপকূল জুড়ে সৃজিত ঝাউ বাগানে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে বসবাস করছে। তারা আরও জানান, রোহিঙ্গাদের কারণে এলাকায় চুরি, ডাকাতি, মারামারি, পতিতাবৃত্তি, মানব পাচার ও ইয়াবাসহ এমন কোন অপকর্ম নেই, যা ইতোপূূর্বে ঘটেনি। অপরাধমূলক ঘটনা ও সামাজিক অবক্ষয় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে কক্সবাজারের সর্বত্র। জানা গেছে, আরএসও জঙ্গীরা সরকারের অনুমতি না নিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে নগদ টাকা, কাপড়, চালের বস্তা, ডাল, তেল, চিনি, সেমাই, দুধ, পেঁয়াজ ইত্যাদি বিতরণ করায় রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশে উৎসাহী হয়ে উঠছে। বর্তমানে রোহিঙ্গা বস্তি ও ক্যাম্পে এনজিও কর্মকর্তা, অপরিচিত লোকদের আনাগোনাও রয়েছে। তবে স্থানীয় প্রশাসন রোহিঙ্গাদের মধ্যে অবৈধ ত্রাণ বিতরণের খবর পেলে তৎক্ষণাৎ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
×