ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

২৭ ডিসেম্বরের পর শীত বাড়তে পারে

পশ্চিমা লঘুচাপে শীত কম, ঢাকায় দিনের বেলায় পাখা চলে

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬

পশ্চিমা লঘুচাপে শীত কম, ঢাকায় দিনের বেলায় পাখা চলে

শাহীন রহমান ॥ প্রকৃতিতে চলছে শীত ঋতু। আজ পৌষের ১২ তারিখ। শীতের ১১ দিন পেরিয়ে গেলেও রাজধানী ঢাকায় শীতের অনুভূতি এখন পর্যন্ত সামান্যই। গরম কাপড়ের ব্যবহার নেই বললেই চলে। বাসাবাড়িতে দিনের বেলায় পাখা চলে। শেষ রাতের দিকে কিছু সময়ের জন্য হচ্ছে কাঁথা-কম্বলের ব্যবহার। এর বাইরে শীত বলতে যা বোঝায় তা ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না। অথচ প্রতিবছর এই সময় রাজধানীতে জাঁকিয়ে পড়ে শীত। এবার তার ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ভরা মৌসুমে শীতের কেন এই ব্যতিক্রমী আচরণ? এর জবাবে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে পশ্চিমা লঘুচাপের কারণে শীতের প্রভাব কম রয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিমা লঘুচাপটি নেপাল, ভুটান হয়ে দেশের ভেতর দিয়ে পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ কারণে যে উচ্চচাপ বলয়ের কারণে দেশে শীত নামে তা অত্যন্ত দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। আজ ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ অবস্থা চলতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে ২৭ ডিসেম্বর পশ্চিমা লঘুচাপটি দুর্বল হয়ে গেলে তাপমাত্রা কমে আসতে পারে। তখন শীত বাড়তে শুরু করবে। এমনকি শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে। তবে তারা বলছেন, শীতে শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও বেশি পরিমাণ কুয়াশা থাকলে রাত-দিনের তাপমাত্রা কাছাকাছি থাকায় এবং পর্যাপ্ত সূর্যের আলো না থাকায় ঠা-া অনুভূত হয়। উচ্চচাপ বলয়ের কারণেও শীত বেশি পড়ে। এছাড়া পশ্চিমা লঘুচাপের কারণে বৃষ্টিপাত হলেও তামপাত্রা কমে গিয়ে শীত অনুভূত হয়। যার একটিও রাজধানী ঢাকায় দেখা মিলছে না। এ কারণে শীতের প্রকোপ অনুভূত হচ্ছে না। তবে গ্রামাঞ্চলে শীতের এসব প্যারামিটার যথেষ্ট পরিমাণ থাকায় জাঁকিয়ে শীত পড়ছে। ঢাকা আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষজ্ঞ আব্দুল মান্নান জনকণ্ঠকে বলেন, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের কারণেই মূলত শীত নামে। সুদূর সাইবেরিয়া থেকে উচ্চচাপ বলয় হিমালয় পেরিয়ে এদেশে প্রবেশ করে। কিন্তু উপমহাদেশ জুড়ে এখন পশ্চিমা লঘুচাপ বিরাজ করছে। এই লঘুচাপটি দুর্বল না হওয়া পর্যন্ত শীতের অনুভূতি কমই থাকবে। তিনি বলেন, ২৬ ডিসেম্বর নাগাদ লঘুচাপটি কেটে গিয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলে হালকা থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হতে পারে। বৃষ্টিপাত হলেও তাপমাত্রা আরও কমতে থাকবে। তখন শীতের প্রকোপ বাড়বে বলে জানান। ডিসেম্বরের শেষ সময়ে স্বাভাবিক কারণে দেশে তাপমাত্রা কম থাকলেও রাজধানীতে শীতের আমেজ নেই বললেই চলে। শীতের অন্যতম সঙ্গী গরম কাপড়ের ব্যবহার দিনের বেলায় নেই। তবে রাতের বেলায় প্রয়োজন বিশেষে কেউ কেউ ব্যবহার করছে হালকা ধরনের গরম কাপড়। দিনের বেলায় অধিকাংশ বাড়িতে পাখা ব্যবহার করতে হচ্ছে। শীতের গরম কাপড়ের বেচাকেনা একেবারেই কম। তবে রাজধানীতে টের পাওয়া না গেলেও ঠিকই শীতে কাঁপছে গ্রামাঞ্চল। এমনকি সকাল-সন্ধ্যায় কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে। সকালে উঠে সূর্যের আলোর অপেক্ষায় থাকছে সবাই। শীতের কামড় থেকে বাঁচতে চলছে নানা আয়োজন। গায়ে জড়িয়ে চলছে গরম কাপড়। সন্ধ্যা থেকে সকাল অবধি ঝড়ছে শিশিরবিন্দু। গ্রাম এবং শহরের শীতের তারতম্যের বিষয়ে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন মূলত রাত ও দিনের তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রীর নিচে নেমে আসলে তাকে শীত হিসেবে ধরা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মধ্যে বড় ধরনের ফারাক থাকায় রাজধানীতে শীতের প্রকোপ কম অনুভূত হচ্ছে। মূলত পশ্চিমা লঘুচাপের কারণেই এমনটি হচ্ছে। ২৭ ডিসেম্বরের পরে এই ব্যবধান কমে আসবে। তখন শীতের প্রকোপ বেড়ে যাবে। তারা বলছেন ডিসেম্বরের শেষে সারাদেশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এ সময় তাপমাত্রা ১০ থেকে ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে নেমে যেতে পারে। এছাড়া আগামী মাসে তীব্র শৈত্যপ্রবাহের আভাসও দেয়া হয়েছে। এ সময় তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রীতে নেমে আসতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই মূলত আবহাওয়া বৈচিত্র্যহীন হয়ে পড়ছে শীতকালে। ঋতু বৈচিত্র্যের ধরন অনুযায়ী প্রতিবছর প্রকৃতিতে শীত আসলেও তার ধারাবাহিকতা থাকছে না। কোন বছর কনকনে ঠা-ায় মানুষজন যেমন জবুথবু হয়ে পড়ছে আবার কোন বছর প্রকৃতিতে শীত ঋতু চলছে তা বোঝাই মুসকিল হয়ে পড়ছে। আবহাওয়া অফিসের হিসাব অনুযায়ী প্রতিবছর ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ থেকে জানুয়ারির ১৫ তারিখ পর্যন্ত শীতের আধিক্য থাকে প্রকৃতিতে। এরপর কমে যেতে থাকে শীত। তবে মাসের হিসাবে পৌষের আজ ১২ দিন হলেও রাজধানীতে শীতের দেখা নেই। অন্যান্য বছরের ন্যায় এখন পর্যন্ত বড় ধরনের শৈত্যপ্রবাহ দেখা মেলেনি। বিশেষজ্ঞদের মতে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়া বিশেষ কোন নিয়মকানুন অনুযায়ী চলছে না। এ কারণেই শীতও তার রুটিন মতো আচরণ করছে না। শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারাবিশ্বেই আবহাওয়া তার রুটিন মেনে চলছে না। মেরু অঞ্চলে বরফের স্তর ক্রমেই কমছে। আবহাওয়ার এ পরিবর্তনের জন্য জনসংখ্যার বৃদ্ধি, নগরায়ন, বায়ু দূষণ, কলকারখানার দূষণ, অতিরিক্ত কার্বন নির্গমনসহ আরও বহুবিধ কারণ রয়েছে। বহুতল ভবন ও কলকারখানার সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে উষ্ণতা বাড়াচ্ছে। যার প্রভাব শহর অঞ্চলে বেশি পড়ছে। তাদের মতে আবহাওয়ার এ হেয়ালি আচরণে বাংলাদেশে দিনে দিনে বদলে যাচ্ছে ঋতুচক্র। প্রভাব পড়ছে জনজীবনে।
×