ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চাইছে সরকারের নির্বাহী আদেশ

কুখ্যাত মোনায়েম খান ও মুজাহিদের প্লট বাতিল নিয়ে বিপাকে রাজউক

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬

কুখ্যাত মোনায়েম খান ও মুজাহিদের প্লট বাতিল নিয়ে বিপাকে রাজউক

মশিউর রহমান খান ॥ তদানীন্তন পূর্বপাকিস্তানের গবর্নর কুখ্যাত মোনায়েম খান ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দ- কার্যকর হওয়া জামায়াত নেয়া আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের নামে বরাদ্দকৃত প্লট বাতিল করা নিয়ে বিপাকে পড়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। রাজউকের আইনানুযায়ী বরাদ্দ ব্যবস্থায় তেমন কোন ত্রুটি খুঁজে পাচ্ছে না সংস্থাটি। তবে বরাদ্দে অনিয়ম ও ত্রুটি নিরুপণের কাজ চলমান রেখেছেন কর্মকর্তারা। অপরদিকে মোনায়েম খানের বনানীর প্লট বরাদ্দ নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা চলমান থাকায় ও এ বিষয়ে আদালতে কোন সুরাহা না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না রাজউক। এদিকে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীর প্লটের মতোই তাদেরও প্লট বাতিলের জন্য দোষত্রুটি নিরূপণ করে অতি দ্রুত তাদের প্লট বাতিলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মৌখিক নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। তবে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন প্রকার লিখিত নির্দেশনা বা আদেশ প্রদান করা হয়নি। এর ফলে প্লট দুটির বরাদ্দ বাতিল করা নিয়ে বিপাকে পড়েছে সংস্থাটির কর্মকর্তাগণ। যুদ্ধাপরাধের দায়ে আদালত কর্তৃক ফাঁসির দ- কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও আমৃত্যু দ-প্রাপ্ত দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বরাদ্দকৃত প্লট বরাদ্দে অনিয়ম খুঁজে পাওয়ায় রাজউক ইতোমধ্যেই তাদের বিপরীতে দেয়া প্লট বাতিল করেছে। তবে শুধুমাত্র ’৭১ সালে স্বাধীনতার বিরোধিতার কারণে মোনায়েম খান ও আদালতের রায়ে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ফাঁসি কার্যকর হওয়া মুজাহিদের প্লট বাতিল করা যাচ্ছে না। এজন্য প্রয়োজন প্লট বরাদ্দে নিয়ম ভঙ্গ করা বা কোন প্রকার অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়েছে কি না তা খুঁজে বের করা। তাই বিভিন্ন মহলের দাবি এবং গণপূর্ত মন্ত্রীর জোরালো নির্দেশনার পরও রাজউক বিষয়টির কোন সুরাহা করতে পারছে না। প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের দাবি, শুধু এ দু’জনই নয়, যে কোন যুদ্ধাপরাধীর প্লট বাতিল করতে হলে এ বিষয়ে সরকারকেই একক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এজন্য প্রয়োজন সরকারের নির্বাহী আদেশ। এছাড়া আদালত কর্তৃক প্লট বরাদ্দে অনিয়ম বা ত্রুটি রয়েছে প্রমাণিত হলে রাজউক সহজেই মোনায়েম খানের প্লট বাতিল করতে পারবে। দুটি পর্যায়ের একটিরও কোন উত্তর না পাওয়ায় বিপাকে রয়েছে রাজধানীর ভূমি সংশ্লিষ্ট অন্যতম সেবাদানকারী সংস্থাটি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বরাদ্দ প্রদানে কোন প্রকার অনিয়ম বা ত্রুটি না পাওয়া গেলে বা আদালতের আদেশ না পেলে যুদ্ধাপরাধীদের প্লট বরাদ্দ বাতিলের এখতিয়ার রাজউকের নেই। যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে নিজামী ও সাঈদীর প্লট যুদ্ধাপরাধী হিসেবে নয়, বরং প্লট বরাদ্দের সময় বিভিন্ন অসঙ্গতি থাকায় তাদের প্লট বরাদ্দ বাতিল করা হয়। অপরদিকে প্লট বরাদ্দে কোন অনিয়ম না থাকায় মুজাহিদের প্লট বাতিল করতে পারছে না রাজউক। কিন্তু গত নবেম্বরে রাজউকের প্রধান কার্যালয়ে এক সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সব যুদ্ধাপরাধীর প্লট বাতিল করা হবে। এ সময় রাজউক চেয়ারম্যানকে প্লট বাতিল করার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা (রাজউক) প্লট বাতিল করে দেন, আমরা মন্ত্রণালয় থেকে ‘ওকে’ করে দেব। এরপরই রাজউকের পক্ষ থেকে ওই দু’জনের প্লট বাতিলের জন্য বরাদ্দে অনিয়ম ও ত্রুটি খুঁজতে অনুসন্ধানে নামে রাজউক। অপরদিকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে এখনও প্লট বাতিলের বিষয়ে কোন নির্দেশনা বা আদেশ জারি করা হয়নি। রাজউক সূত্র জানায়, মুজাহিদের প্লট বরাদ্দ ও ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত কোন ত্রুটি এখন পর্যন্তÍ পাওয়া যায়নি। এ কারণে রাজউকের নিয়ম অনুসারে তার প্লট বরাদ্দ বাতিল করা যাচ্ছে না। তবে, তার প্লটটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। ত্রুটি না পাওয়া গেলে বিদ্যমান আইনে তার প্লট বাতিলের কোনও সুযোগ নেই। উল্লেখ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৫ সালের ২২ নবেম্বর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয় মুজাহিদের। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ উত্তরা আবাসিক এলাকার ১১ নম্বর সেক্টরের ১০ নম্বর সড়কে ৫ নম্বর প্লটটি বরাদ্দ নেন। প্লট বরাদ্দ পাওয়ার পর তিনি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান মিশন ডেভেলপারকে দিয়ে ছয়তলা ভবন নির্মাণ করে বসবাস করতেন। এছাড়া ২০০৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বনানী আবাসিক এলাকার ১৮ নম্বর সড়কের ১৮ নম্বর প্লটটি নিজামীর নামে বরাদ্দ দেয়া হয়। নিজামীকে এই প্লট বরাদ্দ দেয়ার বেলায় রাজউকের প্লট বরাদ্দ বিধিমালা ১৯৯৬-এর ১৩/এ ধারা অনুসরণ করা হয়। উল্লেখ্য, ১৩/এ ধারাটি দেশের প্রতি যারা অবদান রেখেছেন তাদের প্লট বরাদ্দ দেয়ার জন্য প্রযোজ্য। গত ২৮ জুলাই অনুষ্ঠিত রাজউকের ০৭/২০১৬তম সাধারণ সভায় মতিউর রহমান নিজামী ও দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর প্লট দু’টির বরাদ্দ বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক উপস্থিত রাজউকের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানান, প্লট বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নিজামীর প্লটের ৫টি ত্রুটি এবং সাঈদীর প্লটের ১টি ত্রুটির শুনানি হয়। বরাদ্দের সময় বিভিন্ন ত্রুটি থাকায় নিজামীর প্লট বাতিল করা হয়। অন্যদিকে, কিস্তির টাকা পরিশোধ না করায় বাতিল করা হয় সাঈদীর প্লট। তবে এক্ষেত্রে তাদের অপরাধ আমলে আনা হয়নি। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে নিজামীর ফাঁসি চলতি বছর ১০ মে কার্যকর করা হয় এবং সাঈদী বর্তমানে আমৃত্যু কারাভোগ করছেন। এ বিষয়ে রাজউক চেয়ারম্যান বজলুল করিম চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, ইতোমধ্যে প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও বিভিন্ন প্রকার ত্রুটি থাকায় আমরা নিজামী ও সাঈদী এ ২ যুদ্ধাপরাধীর প্লট বাতিল করেছি। বাকি যুদ্ধাপরাধীদের প্লট বরাদ্দে ত্রুটি পাওয়া গেলে রাজউক আইনগত ব্যবস্থা নেবে। এছাড়া মুজাহিদের নামে প্লট বরাদ্দের বিষয়টিও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে যুদ্ধাপরাধীদের প্লট বাতিল করার বিষয়ে আদালতের কোন লিখিত নির্দেশনা আমরা পাইনি। এ জন্যই প্রচলিত আইনে যুদ্ধাপরাধীদের প্লট বাতিল করতে ত্রুটি খোঁজা হচ্ছে। এছাড়া সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে রাজউক আইন অনুযায়ী প্লট বরাদ্দের অনিয়ম ও ত্রুটি আছে কি না তা যাচাই করছি। কাজটি চলমান রয়েছে। মোনায়েম খানের প্লট বাতিলের বিষয়ে তিনি বলেন, বনানীর এ প্লটটি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। তাই বিষয়টি আদালতে চূড়ান্ত সুরাহা না হওয়ায় আমরা এ বিষয়ে কোন কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারছি না। তবে আমাদের পক্ষ থেকে মোনায়েম খানের প্লটের বিষয়ে আদালতে প্রয়োজনীয় সকল তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
×