ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বৈদেশিক ঋণ ও পরনির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসার পরিকল্পনা নিয়ে নতুন উন্নয়ননীতি তৈরি হচ্ছে;###;কয়েক বছর ধরে সব সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

বিদেশী ঋণ নয়

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬

বিদেশী ঋণ নয়

এম শাহজাহান ॥ পরনির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসার পরিকল্পনা নিয়ে নতুন উন্নয়ননীতি প্রণয়ন করা হচ্ছে। দেশের সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে এই নীতি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। কয়েক বছর ধরেই অর্থনীতির সব সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুসহ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এতে দেশ আত্মনির্ভরশীলতার দিকে এগুচ্ছে। এজন্য নতুন উন্নয়ননীতিতে আত্মনির্ভরশীলতাকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা পাঠিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। রূপকল্প-২১ বাস্তবায়ন এবং আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন পূরণে সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এরই ধারবাহিকতায় বৈদেশিক ঋণ ও সহায়তা কমিয়ে আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে বড় বড় অবকাঠামোসহ সব ধরনের উন্নয়ন এগিয়ে নিতে চায় সরকার। সরকারের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সম্প্রতি অর্থ বিভাগে একটি নির্দেশনা পাঠানো হয়। নির্দেশনায় বলা হয়, দেশের সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। পরনির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আত্মনির্ভরশীল জাতিতে পরিণত হতে সকলকে সচেষ্ট হতে হবে। এতে আরও বলা হয়, বঙ্গবন্ধু দেশ ও মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের মধ্যেও সে আলো ছড়িয়ে দিতে হবে। রাষ্ট্রের সকল কাজকর্মে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতিফলন থাকতে হবে। সূত্রমতে, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে বৈদেশিক সাহায্য, ঋণ ও অনুদানের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ধরা হয়েছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়িয়ে নিজেদের মধ্যে চাহিদা বাড়ানো। সেই সঙ্গে নিজেদের চাহিদা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে পূরণের চেষ্টা করা। বিশেষ করে উন্নয়ন প্রকল্পে নিজেদের অর্থায়নের অংশ বাড়িয়ে আনা। ধীরে ধীরে বৈদেশিক সাহায্য বা ঋণ নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসা। এদিকে চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি সামান্য কিছু বাড়লেও অর্থ ছাড়ের পরিমাণ কমেছে। বাজেটের পরিকল্পনা অনুযায়ী, চলতি বছর বাজেটে বড় অঙ্কের ঘাটতি সত্ত্বেও বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্য ধরা হয়েছে মাত্র ৩০ হাজার কোটি টাকার। অবশ্য, বাংলাদেশ জাতিসংঘের কাছ থেকে মধ্যমআয়ের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেলে বৈদেশিক ঋণ বা অনুদানের পরিমাণ নিয়ম অনুযায়ী কমে আসবে, যার অনুশীলন ইতোমধ্যে শুরু করেছে সরকার। জানা গেছে, ভবিষ্যতে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প নিজেদের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হবে। সেই সঙ্গে অন্যসব উন্নয়ন প্রকল্পে উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থায়নের পরিমাণ কমিয়ে আনা হবে। শুধু তাই নয়, বিশাল ব্যয়ের মেগা প্রকল্প ২৮ হাজার কোটি টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে নিজস্ব অর্থায়নে। এছাড়া পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পসহ মেট্রোরেলের মতো বড় প্রকল্পেও বিদেশী অর্থায়নের পাশাপাশি দেশীয় মুদ্রার যোগান দেয়া হবে। শুধু তাই নয়, এ পর্যন্ত সরকার কর্তৃক গৃহিত সব বড় প্রকল্পে দেশীয় বিনিয়োগ করা হবে। এ প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের অভ্যন্তরে অনেক অব্যবহƒত সম্পদ রয়েছে, যার ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ ধরনের পলিসি গ্রহণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের সব বড় প্রকল্পের জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই অর্থ খরচ করা গেলে দশ মেগা প্রকল্প নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। তিনি বলেন, ব্যক্তিখাতের স্বতঃস্ফূত বিকাশ এবং যোগ্য নেতৃত্বের কৌশল কার্যক্রম অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছে। প্রতি দশকেই জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়েছে প্রায় ১ দশমিক ০ শতাংশ হারে। এর ফলে বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশ আজ এক উন্নয়ন বিস্ময় হয়ে দেখা দিয়েছে। এদিকে, আগামী দিনের বাংলাদেশ বিনির্মাণে একটি রোডম্যাপ দিতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই রোডম্যাপ অনুসরণ করে দলটি আগামী ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে তাদের নির্বাচনী ইশতেহার প্রস্তুত করবে। শুধু তাই নয়, বর্তমান সরকারের আগামী জাতীয় বাজেটগুলোতেও রোডম্যাপ অনুযায়ী কর্মসূচী গ্রহণ করার ঘোষণা দেয়া হবে। অর্থ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভিশন-২১ বাস্তবায়নের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার রূপকল্প-৪১ দিতে যাচ্ছেন। আগামী ২৫ বছরের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে চলে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন শেখ হাসিনা। এজন্য ব্যাপকভিত্তিতে অর্থনৈতিক কর্মসূচীর নতুন নতুন ঘোষণা আসছে। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের উন্নয়ন দর্শনে এবার নতুন যুক্ত হয়েছে ব্লু-ইকোনমি। এছাড়া বিদ্যুত, জ্বালানি ও আইসিটি, বেসরকারী খাত এবং বাজার ব্যবস্থার সম্প্রসারণের মতো বিষয় উন্নয়ন দর্শনে নিয়ে আসা হবে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা দ্রুত গণপরিবহন, এলএনজি ফ্লোটিং স্টোরেজ এ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট, মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র, পায়রা সমুদ্রবন্দর, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ এবং চট্টগ্রাম হতে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২৯ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন করা হচ্ছে। দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এতে ইতোমধ্যে ৫৬টি (সরকারী খাতে ৪২ টি এবং বেসরকারী খাতে ১৪টি) অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে সাতটি বাস্তবায়নের কাজ চলছে। আগামী ১৫ বছরের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। এর মাধ্যমে অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন ডলার আয় বৃদ্ধি ও এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
×