ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৩শ’ ৩০ মেগাওয়াটের এ বিদ্যুত কেন্দ্রে ব্যয় হবে তিন হাজার ২শ’ ৫৩ কোটি

খুলনায় পুরনো বিদ্যুত কেন্দ্রের স্থলে নতুন কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬

খুলনায় পুরনো বিদ্যুত কেন্দ্রের স্থলে নতুন কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে

রশিদ মামুন ॥ খুলনায় অতি পুরাতন বিদ্যুত কেন্দ্রর স্থলে নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। দ্বৈত জ্বালানির ৩৩০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় হবে তিন হাজার ২৫৩ কোটি টাকা। বিদ্যুত প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, গত ২০ ডিসেম্বর প্রস্তাবটি বিদ্যুত বিভাগ থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। খুলনায় পুরাতন পিডিবির ১৭০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটি ফার্নেস তেলে বিদ্যুত উৎপাদন করত। বিদ্যুত কেন্দ্রটি খুলনা কেন্দ্রটির ৩২ বছরের পুরাতন। শেষ দিকে এসে খুলনা কেন্দ্রটি প্রতি ইউনিট বিদ্যুত উৎপাদন করত ২৭ থেকে ৩০ টাকায়। অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে বিদ্যুত কেন্দ্রটি বন্ধ রাখা হয়েছে। বিদ্যুত বিভাগ অনেক দিন ধরেই পুরাতন বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো অবসরে দেয়ার কথা বলে আসছিল। এ ধরনের আরও চারটি বিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে। যার সবগুলোর উৎপাদন ব্যয় কয়েকগুণ বেশি। সবগুলো বিদ্যুত কেন্দ্রর স্থলে নতুন কেন্দ্র নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। খুলনায় প্রস্তাবিত বিদ্যুত কেন্দ্রটি স্থাপনে তিন হাজার ২৫৩ কোটি টাকার মধ্যে পিডিবি নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৪৯ কোটি টাকা এবং সরকারী তহবিল থেকে ৮৯০ কোটি টাকা দেয়া হবে। সব মিলিয়ে এক হাজার ২৩৯ কোটি টাকা সরকার বিনিয়োগ করবে। বাকি অর্থ ঋণ নেয়া হবে। পিডিবি বলছে আগামী জানুয়ারি থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। কেন্দ্রটি নির্মাণ শেষ হবে ২০১৯ সালের জুনে। সারাদেশে ক্যাপটিভ কেন্দ্রসহ ১৫ হাজার বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। এখন অতিপুরাতন কেন্দ্রগুলো অবসরে দেয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে বলে বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়। খুলনা জোনে এখন এক হাজার ২৭৩ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হচ্ছে। যদিও এখানের ভেড়ামারা দিয়ে ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানিকে ধরে এই হিসেব করা হয়। এর বাইরে প্রকৃতঅর্থে কেন্দ্র রয়েছে ৭৭৩ মেগাওয়াটের। এর মধ্যে সরকারী কোম্পানির একটি বিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে। অন্যসবগুলো বিদ্যুত কেন্দ্রই বেসরকারী ভাড়ায় চালিত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন খুলনা-৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদনে আসলে ভাড়ায় চালিত কেন্দ্রর সঙ্গে আর চুক্তি নবায়নের প্রয়োজন হবে না। এর বাইরে খুলনা এলাকায় নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি এবং বাংলাদেশ ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশীপ কোম্পানি দুটি বড় বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু গত বছর মাঝামাঝি সময়ে অতি পুরাতন কেন্দ্র অবসরে দেয়ায় ঘোষণা দেন। তিনি ওই সময় জানান, এজন্য সরকারের একটি পরিকল্পনা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে পিডিবি এসব কেন্দ্র সরিয়ে সেখানে নতুন কেন্দ্র নির্মাণ করবে। পিডিবি সূত্র জানায় যে পাঁচটি অতি পুরাতন বিদ্যুত কেন্দ্র সাধারণ উৎপাদন ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত দরে বিদ্যুত উৎপাদন করছে। কেন্দ্রগুলোর মধ্যে আরও চারটি কেন্দ্র হচ্ছে ভেড়ামারা পাওয়ার স্টেশন-৬০ মেগাওয়াট, বরিশাল গ্যাস টারবাইন পাওয়ার স্টেশন-৪০ মেগাওয়াট, রংপুর এবং সৈয়দপুরে ২০ মেগাওয়াট করে দুটি গ্যাস টারবাইন পাওয়ার স্টেশন। চারটি কেন্দ্রই ডিজেল চালিত। বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ভেড়ামারার ইউনিটগুলোর বয়স ৩৬ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, সৈয়দপুর এবং বরিশাল কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল ২৯ বছর আগে আর ২৮ বছর আগে রংপুরের কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছে। যদিও পিডিবির একটি সূত্র জানায়, পুরাতন বিদ্যুত কেন্দ্রে তেল সরবরাহ এবং সংস্কারের জন্য যন্ত্রাংশের একটি বড় ব্যবসা রয়েছে। বেশি পুরাতন হওয়ায় বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো ঘন ঘন সংস্কারের প্রয়োজন হয়। বছরে বিপুল পরিমাণ অর্থ সংস্কারের পেছনে ব্যয় করায় বিদ্যুত কেন্দ্রের পরিচালন ব্যয়ও অন্য কেন্দ্রের চেয়ে বেশি বলে দেখা গেছে। পিডিবি সূত্র জানায়, ভেড়ামারা কেন্দ্রে প্রতি ইউনিটের জন্য ৩১ দশমিক ৫০ টাকার জ্বালানি ব্যয় এবং অন্যান্য ব্যয় তিন টাকা মিলিয়ে প্রতি ইউনিটের উৎপাদন ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৩৪ দশমিক ৫০ টাকায়। সৈয়দপুরে জ্বালানি ব্যয় ৩০ টাকা আর অন্যান্য ব্যয় ৪ টাকা মিলিয়ে ইউনিট প্রতি উৎপাদন ব্যয় দাঁড়ায় ৩৪ টাকা। রংপুর কেন্দ্রেও জ্বালানি ব্যয় ৩১ টাকা এবং অন্যান্য ব্যয় ৪ টাকা মিলিয়ে ইউনিট প্রতি ৩৫ টাকা ব্যয় হচ্ছে। বরিশাল কেন্দ্রে জ্বালানি ব্যয় আরও বেশি এখানে ইউনিট প্রতি জ্বালানিতে ৩৩ দশমিক ৫০ টাকা প্রতি ইউনিটে ব্যয় হচ্ছে আর অন্যান্য ব্যয় দুই টাকা মিলিয়ে ৩৫ দশমিক ৫০ টাকা ব্যয় হচ্ছে।
×