ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বড়দিনে উৎসবের আমেজ সোনারগাঁয়

ঘোড়ার গাড়ি, বানরের খেলা, পাপেট শো- আনন্দঘন সময়

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬

ঘোড়ার গাড়ি, বানরের খেলা, পাপেট শো- আনন্দঘন সময়

মোরসালিন মিজান ॥ বড় দিন। আয়োজনগুলোও ছোট ছিল না। হাসিরাশি আনন্দে রবিবার মুখরিত ছিল ঢাকা। খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের বিশেষ দিবসে যোগ দেন অন্য ধর্মের মানুষজনও। সবাই মিলে দারুণ মজা করে সময় কাটান। এদিন বিভিন্ন হোটেলে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়। তবে আলাদা করে বলতে হয় সোনারগাঁ হোটেলের কথা। পাঁচ তারকা হোটেল প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আয়োজন করে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার। সকাল থেকে শুরু। চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। আভিজাত্য যেমন ছিল, তেমনি যোগ হয় লোক জীবন ও সংস্কৃতির নানা উপাদান। হোটেলে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে আলোঝলমলে ক্রিসমাস ট্রি। মরিচবাতি পেঁচিয়ে তৈরি করা ট্রি চারপাশ আলোকিত করে রেখেছে। ভূমিসংলগ্ন অংশে পেটমোটা গিফট বক্স। একটা দুটো নয়। অগুনতি! লবি ধরে সামান্য হাঁটলে টেরাকোটা কর্নার। তবে, টেরাকোটা শিল্পকর্ম দেখা যায় না। জায়গাটিজুড়ে বড়দিনের আকর্ষণীয় ডিসপ্লে। এখানে নিজের বলগা হরিণগুলোসহ সান্তা ক্লজ দাঁড়িয়ে। কিংবদন্তি অনুসারে, সান্তা বাস করেন সুদূর উত্তরের এক চিরতুষারাবৃত দেশে। সেই তুষারপাত এখানে সুন্দর দৃশ্যমান করা হয়। বড়দিন উদ্যাপন করতে আসা বিভিন্ন বসয়ী মানুষ এখানে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেন। মূল আয়োজনটি ছিল পুল-সাইডে। এখানে রক্ত মাংসের সান্তা ক্লজ। মোটাসোটা বিশালদেহ নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। শশ্রƒম-িত সান্তার গায়ে সাদা কলার ও কাফযুক্ত লাল কোট। সাদা কাফযুক্ত লাল ট্রাউজার্স। কালো চামড়ার বেল্ট। পায়ে বুটজুতো। আর পকেট ভর্তি চকোলেট। সেদিকেই বেশি খেয়াল ছিল বাচ্চাদের। হাত বাড়িয়ে তার কাছ থেকে চকোলেট সংগ্রহ করছিল। পাশেই আরেক আকর্ষণ বানরের খেলা। চৌকির ওপর দারুণ সব খেলা দেখাচ্ছিল মধু নামের একটি বানর। কখনও সে বরের সাজে। রুমাল মুখে দিয়ে বিয়ে করতে যাচ্ছে। কখনও এক লাফে পাড়ি দিচ্ছে যমুনা সেতু! এখানেই শেষ নয়, সরু লাঠিকে বন্দুক বানিয়ে যুদ্ধ করে দেখাচ্ছে বানর। খেলার ফাঁকে ফাঁকে আবার হ্যান্ডশেক করছে অতিথিদের সঙ্গে। প্রশিক্ষিত বানরের ওস্তাদের নাম আসমত আলী। তিনি জানান, বানরেরও নাম আছে। মধু নামে ডাকলে মানুষের মতোই সাড়া দেয়। ৩৫ বছর বয়সী বানর প্রতিবছর বড়দিনে এখানে খেলা দেখাতে আসে বলে জানান তিনি। তার ঠিক পাশের টেবিলে টিয়া পাখি। প্রশিক্ষিত টিয়া ঠোঁট দিয়ে খাম তুলছে। খামের ভেতরে ভবিষ্যত লেখা। সেটি পড়ে শোনাচ্ছেন টিয়ার মালিক। অন্যপাশে চলছিল ম্যাজিক শো। চেয়ারে বসে মজার মজার সব ম্যাজিক দেখছিল বাচ্চারা। স্পাইডারম্যানও খুব আকর্ষণ করছিল তাদের। জনপ্রিয় চরিত্রের বেশ কয়েকটি শরীরিক গড়ন তৈরি করে রেখেছিলেন হোটেল কর্তৃপক্ষ। সেই শরীরে নিজের মস্তক বসিয়ে ছবি তুলছিল বাচ্চারা। পুল সাইড থেকে ঢাল বেয়ে নেমে গেলে সবুজ খোলা প্রান্তর। এখানে ট্রেন লাইন পাতা। বাচ্চারা ট্রেনে চড়ে কয়েক চক্কর দিয়ে ফের প্ল্যাটফর্মে আসছিল। বাদ যায়নি ঢাকার অতি পুরনো বাহন টমটমও। হোটেলের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষা রাস্তা দিয়ে চলছিল ঘোড়ার গাড়ি। পাঁচ তারকা হোটেলের এমন বৈচিত্র্যপূর্ণ আয়োজন দিনভর উপভোগ করেন শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষ। পারিজাত শিক্ষাঙ্গনের ক্লাস ওয়ান পড়ুয়া ছাত্রী ফাতিহা এসেছিল বাবা-মার সঙ্গে। বলল, বড়দিনে আরও কয়েক জায়গায় ঘুরেছি। কিন্তু এখানে বেশি মজা করেছি। বানরের সঙ্গে দু’বার হ্যান্ডশেক করার কথাও জানায় সে। তরুণ ব্যাংকার প্যাট্রিক এসেছিলেন স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে। বললেন, একাধিক গীর্জায় গিয়েছি আমরা। আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করেছি। তবে হোটেলের আয়োজনটা অন্যরকম। উৎসবের আমেজটা এখানে পাওয়া যায়। এখান থেকে বড় দিনের বিশেষ ডিনার শেষ করে বাড়ি ফিরবেন বলে জানান তিনি। বাঙালীর অসাম্প্রদায়িক চেতনারও চমৎকার প্রকাশ ঘটে এখানে। মুসলিমসহ অন্য সব ধর্মের মানুষ এসেছিলেন। তারাও হাসিরাশি আনন্দে মাতেন। ছবি তুলেন সান্তাক্লজের পাশে দাঁড়িয়ে। সব মিলিয়ে অন্যরম একটি দিন। আয়োজনের বিস্তারিত তুলে ধরে হোটেলের মার্কেটিং ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী পরিচালক সালমান কবির বলেন, অন্য হোটেলের তুলনায় অনেক বেশি খোলা জায়গা আছে সোনারগাঁর। বড়দিনে জায়গাটুকুর সর্বোত্তম ব্যবহার করার চেষ্টা করেছি আমরা। ক্রিসমাস কিডস পার্টি, ফান গেমস রাইড, পাপেট ও ম্যাজিক শো, ডিজেÑ কোনকিছুই বাদ যায়নি। সবাই আয়োজনগুলো উপভোগ করেছেন। তাদের আনন্দের অংশ হতে পেরে হোটেল কর্তৃপক্ষও খুশি বলে জানান তিনি।
×