ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

হোটেল ভাড়া তিনগুণ বৃদ্ধি মোটেল-কটেজেও ঠাঁই নেই

নববর্ষে কক্সবাজারে ৫ লাখ পর্যটকের সমাগমের আশা

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬

নববর্ষে কক্সবাজারে ৫ লাখ  পর্যটকের সমাগমের আশা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ইংরেজী পুরনো বছরকে বিদায় ও নববর্ষকে স্বাগত জানাতে বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস নামবে সমুদ্র সৈকতের নগরী কক্সবাজারে। আর ২৩ থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা তিন দিন সরকারী ছুটি থাকায় গত কয়েকদিন ধরে কক্সবাজারে পর্যটকের আনাগোনা বেড়েছে অন্য সময়ের তুলনায় তিনগুণ বেশি, যার ফলে আবাসন সঙ্কটে পড়েছেন পর্যটকরা। ১ জানুয়ারি পর্যন্ত হোটেল-মোটেল ও কটেজের কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারে ইংরেজী নববর্ষ উৎযাপন করতে পাঁচ লাখ পর্যটকের সমাগম হবে। ফলে আগে যে হোটেল কক্ষগুলো ৩০০ টাকায় পাওয়া যেত, সেগুলো এখন তিন হাজার টাকা দিয়েও পাচ্ছেন না কক্সবাজারে আসা পর্যটকরা। এছাড়া আবাসিক কটেজগুলো (সর্বোচ্চ চারজনের উপযোগী) দুই মাস আগেও ভাড়া পাওয়া যেত ৭০০ থেকে এক হাজার টাকায়, সেই কটেজে এখন ভাড়া গুনতে হচ্ছে চার থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। আর দামী হোটেল-মোটেলগুলো এক মাস আগে থেকে বুকিং হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানের হোটেলগুলো ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে খাবারের দোকানের মালিকরা বাড়িয়ে দিয়েছে খাবারের দামও। কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, চলতি মৌসুমের সবচেয়ে বড় মিলনমেলা ৩১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে মার্চ মাস পর্যন্ত থাকবে। এ ভিড় এখন বাড়তেই থাকবে। নগরীর প্রায় চার শতাধিক হোটেল, সরকারী-বেসরকারী অর্ধশতাধিক রেস্ট হাউসের কক্ষগুলোও আগাম বুকড হয়ে গেছে। এখন ভাড়া দেয়া হচ্ছে ফ্ল্যাটবাড়ি ও নির্মাণাধীন ভবন। কক্সবাজারের স্থায়ী বাসিন্দা দক্ষিণ বন বিভাগের কর্মকর্তা আতিকুল আলম রনি জানান, ঢাকা থেকে পাঁচ বন্ধু আসছে কাল। তাদের জন্য আবাসিক হোটেল খুঁজতে গিয়ে বুঝতে পারি হোটেল মালিকরা তিনগুণ ভাড়া বাড়িয়েছে। বাড়তি ভাড়ার পরও কোন হোটেল-কটেজে রুম পাইনি। কোন উপায় না দেখে এক বন্ধুর ব্যাচেলর রুমে তুলে দিয়েছি তাদের। কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর এ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এসএম কিবরিয়া খান ফোনে জানান, প্রতিদিন লক্ষাধিক পর্যটক এখন কক্সবাজারে বেড়াতে আসছেন। এর মধ্যে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ জাহাজ, স্পিডবোট ও ট্রলারযোগে সেন্টমার্টিনে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এছাড়া ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক, মহেশখালী আদিনাথ মন্দির, হিমছড়ি, দরিয়ানগর, ইনানী বীচ এবং পার্শ্ববর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি ও লামা উপজেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলোতেও প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বেড়াতে যাচ্ছেন। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানান, এবারের থার্টিফার্স্ট নাইট ও বর্ষবরণে কক্সবাজারের প্রতি পর্যটকরা বিপুল সাড়া দিয়েছেন, যা বিগত বছরকে হার মানাবে। তারা ডিসেম্বরের শুরু থেকেই হোটেল বুকিং দেয়া শুরু করেন। ফলে এ মাসের প্রথম সপ্তাহেই কক্সবাজারের ৭০ ভাগ হোটেল বুকিং হয়ে গেছে। আর এখন ফ্ল্যাট বাসাগুলোও বুকিং নিচ্ছেন পর্যটকরা। কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রায়হান কাজেমী ফোনে জানান, ‘সৈকতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের শতভাগ প্রস্তুতি রয়েছে। দর্শনীয় স্থান ও বিপণিকেন্দ্রগুলোতেও পুলিশী টহল জোরদার করা হয়েছে। সমুদ্র সৈকত, হিমছড়ি, ইনানী বীচ, দরিয়ানগরসহ ৭টি পর্যটন স্পটে কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।’ এছাড়া বাড়তি পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যসহ যাবতীয় সরঞ্জাম বাড়ানো হয়েছে। এছাড়াও জেলা পুলিশও পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে বলে জানান তিনি। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক আলী হোসেন জানান, ব্যাপকহারে পর্যটক আসার সুযোগে কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন সে ব্যাপারে প্রশাসন সজাগ রয়েছে। পর্যটন এলাকায় জেলা প্রশাসনের একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে। নাশকতার আশঙ্কায় হোটেলের বাইরে থার্টিফার্স্ট নাইটের সকল অনুষ্ঠান সন্ধ্যার আগেই শেষ করতে আদেশ দেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, বর্ষবিদায় এবং বর্ষবরণের উৎসবকে রাঙিয়ে তুলতে ৩০ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সৈকতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বীচ কার্নিভ্যাল। এ কার্নিভ্যাল পুরো উৎসবকে অনন্য মাত্রা দেবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।
×