ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামের দুই প্রকল্পে হাজার কোটি টাকা ব্যয় বাড়ল

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬

চট্টগ্রামের দুই প্রকল্পে হাজার কোটি টাকা ব্যয় বাড়ল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চট্টগ্রামের উন্নয়নে নির্মিত আউটার রিং রোড ও ডিটি-বায়েজিদ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে নতুন করে ১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা খরচ বেড়েছে। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) এই দুইটি প্রকল্পে অতিরিক্ত এই অর্থ বরাদ্দ অনুমোদন পেয়েছে। সম্প্রসারণ ও নতুন ডিজাইনের জন্য আউটার রিং রোড প্রকল্পে ১ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও গত সভায় তা বাড়িয়ে ২ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা এবং ডিটি-বায়েজিদ সংযোগ সড়কে ১৭২ কোটি টাকার বরাদ্দ থাকলেও নতুন করে সেটা বাড়িয়ে ৩২০ কোটি টাকা করা হয়েছে। এতে দুই প্রকল্পের জন্য ১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা অতিরিক্ত অনুমোদন দেয় একনেক। প্রকল্প দুইটি বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, আউটার রিং রোড প্রকল্পে নতুন করে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত থেকে হালিশহরের দিকে ৫ কিলোমিটার জুড়ে স্পেশাল পর্যটন জোন হবে। এখানে থাকবে ৬টি জেটি, যা দিয়ে পর্যটকরা বোটিং করতে পারবেন। এছাড়া সৈকতে ৫০ ফুট জায়গা ওয়াকওয়ে, বেঞ্চ, দোকান, কিডস জোন, গ্রিন জোন ও পার্কিং সুবিধা থাকবে। প্রকল্পের মধ্যে ১০টি ফুট ওভার ব্রিজ থাকবে। এছাড়া রোডের সাগরের অংশে গাছ লাগানো এবং পুরো ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ রোডে সাগরের ভেতরের অংশে সিমেন্টের ব্লক বসানো হবে। আউটার রিং রোডের মাটি ভরাটের কাজ প্রায় ৫৫ থেকে ৬৫ শতাংশ মতো শেষ হয়েছে। রাস্তার বিভিন্ন অংশে ইতোমধ্যে ব্লক বসানো ও সøুইস গেট নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এখন মাটির ক্ষমতা পরীক্ষার কাজ চলছে। ডিটি-বায়েজিদ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের সংযোগ সড়কটি ২ লেনের পরিবর্তে ৪ লেন করার পাশাপাশি ধীর গতির বাহন চলাচলের জন্য ২টি পৃথক লেন থাকবে। ফলে এই প্রকল্পের খরচ বেড়েছে ১৩৮ কোটি। সিডিএ এর নথিপত্র থেকে জানা যায়, আউটার রিং প্রকল্পের কাজ জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। চুক্তি অনুসারে ১ হাজার ৪১৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকার মধ্যে ৬৯৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা বাংলাদেশ সরকার এবং ৭১৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা জাইকা দেবে। জাইকা চুক্তি অনুসারে আগের অর্থ প্রকল্পে ব্যয় করবে। তবে নতুন করে বর্ধিত অর্থ বাংলাদেশ সরকারকে বহন করতে হবে। আউটার রিং রোড প্রকল্পটির পরিচালক প্রকৌশলী হাসান বিন শামন বলেন, প্রথম চুক্তি অনুসারে জাইকার যে পরিমাণ অর্থ এই প্রকল্পে খরচ করার কথা ছিল এখন তারা সেই টাকা দেবে। গত একনেকে যে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়েছে সেটা সরকারকে বহন করতে হবে। কারণ বাজেট চুক্তি হবার পর কোন কারণে যদি নতুন করে অর্থের পরিমাণ বাড়ানো হয় তখন সেই অতিরিক্ত অর্থ সরকারকেই বহন করতে হয়। দাতা সংস্থারা ওই অতিরিক্ত অর্থ বহন করবেন না বলে চুক্তিতে লেখা থাকে। তবে ক্ষেত্র বিশেষ এর ব্যতিক্রম দেখা যায়। নতুন বরাদ্দের বিষয়ে সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য আমরা সিডিএ যে নতুন ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম সেটা গত একনেকে পাস করা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় চট্টগ্রামের উন্নয়নে সরকার কতটা আন্তরিক। আশা করি নতুন করে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হলে চট্টগ্রাম একটি আধুনিক শহরে পরিণত হবে। প্রকল্প পরিবর্তন সম্পর্কে জানা যায়, সম্প্রতি আউটার রিং রোড প্রকল্পে সরেজমিন পরিদর্শনকালে গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এই প্রকল্পে নতুন করে সংযোজন করে নতুন ডিজাইন করে সিডিএকে আউটার রিং রোডের ডিপিপি (বিস্তারিত প্রকল্প প্রস্তাবনা) পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে মন্ত্রীর নির্দেশ অনুসারে সিডিএ নতুন ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে পাঠালে গত বৃহস্পতিবার তা পাস করা হয়। প্রসঙ্গত, আউটার রিং রোড বাস্তবায়িত হলে সহজেই ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক দিয়ে কক্সবাজারমুখী গাড়িগুলো ট্যানেল হয়ে ওপারে চলে যেতে পারবে। অন্যদিকে বিপরীত দিকে ফৌজদারহাটে ডিটি রোডের পোর্ট এক্সেস রোডের মোড় থেকে ডিটি-বায়েজিদ সংযোগ সড়ক নামে ৪ লেনে উন্নীত হলে রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজার ও খাগড়াছড়ির গাড়িগুলো শহরের ভেতরে না এসে এই রোড দিয়ে চলাচল করতে পারবে।
×