ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

ছায়ানটে তিনদিনের কত্থক নৃত্য উৎসব শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬

ছায়ানটে তিনদিনের  কত্থক নৃত্য  উৎসব শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সম্মাননা পদক প্রদান, নৃত্যের ছন্দ আর বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শুরু হলো কত্থক নৃত্য উৎসব। পঞ্চমবারের মতো এ উৎসবের আয়োজন করেছে কত্থক নৃত্য সম্প্রদায়। ধানম-ির ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবন মিলনায়তনে শনিবার সন্ধ্যায় মঙ্গলপ্রদীপ জ্বেলে তিন দিনব্যাপী এ উৎসবের উদ্বোধন করেন উপমহাদেশের কিংবদন্তি নৃত্যগুরু প-িত বিরজু মহারাজ। উৎসব উদ্বোধনের সময় তিনি বলেন, এখানে যারা নাচ করছেন, তারা আমার আত্মীয়। মঞ্চ আমাদের কাছে মন্দির। মঞ্চে আমরা নাচের মাধ্যমে ধর্মীয় নানা আচারও পালন করি। উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতার পর ‘জীনাত জাহান স্মৃতি সম্মাননা পদক-১৪২৩’ প্রদান করা হয় নৃত্যশিল্পী শ্বাশতী সেনকে। প-িত বিরজু মহারাজের অন্যতম প্রধান শিষ্য শ্বাশতি, যিনি কত্থক নৃত্যকে সমসাময়িক ভাবনার সঙ্গে একীভূত করে একটি সুশোভিত শিল্পের রূপদান করেছেন। নিজের গুরুর হাত থেকে সম্মাননা পদক গ্রহণ করার সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। কত্থক নৃত্য পরিবেশনার পূর্বে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন নৃত্যশিল্পী লায়লা হাসান, মিনু হক ও আমিনুল ইসলাম হিরু। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কত্থক নৃত্য সম্প্রদায়ের কর্ণধার সাজু আহমেদ। শুরুতেই সাজু আহমেদের পরিচালনায় প্রতিষ্ঠানের শিল্পীরা বন্দনা ও ছন্দমালিকা নৃত্য পরিবেশন করে। পরে বৈশাখী মজুমদারের পরিচালনায় পুষ্পাঞ্জলি নৃত্য সংগঠনের শিল্পীরা পরিবেশন করে কম্পোজিশন। এরপর আবুল কালাম আজাদের পরিচালনায় রংপুরের শিল্পীরাও আরেকটি কম্পোজিশন পরিবেশন করে। মুনমুন আহমেদের পরিচালনায় অপরাজিতা মোস্তফা পরিবেশন করেন ধামার ও ঠুমরি। শিবলী মহম্মদের পরিচালনায় তারানা পরিবেশন করে রেওয়াজ পারফর্মিং আর্টসের শিল্পীরা। তাবাসসুম আহমেদের পরিচালনায় টেকনিক্যাল ত্রিতাল পরিবেশন করে আঙ্গিকামের শিল্পীরা। বিপ্লব দাসের পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করে মৌলভীবাজারের নুপুর নিক্কনের শিল্পীরা। নৃত্যে আরও অংশ নেয় বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস ও নৃত্যাশ্রমের শিল্পীরা। সাজু আহমেদের পরিচালনায় কত্থন নৃত্য সম্প্রদায়ের শিল্পীদের অংশগ্রহণে বসন্ত তারানা পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথম দিনের আয়োজন। আজ রবিবার সকাল ১০টা ৫ মিনিটে শুরু হবে দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানমালা উৎসব। শুরুতে রয়েছে ‘প-িত বিরজু মহারাজ সংস্কৃতির শিকড়ে গতিময় সঞ্চারণ’ শীর্ষক সেমিনার। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করবেন শেখ মেহেদী হাসান। আলোচনা করবেন বিদুষী শ্বাশতী সেনসহ বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পীরা। সন্ধ্যা ছয়টায় শুরু হবে দ্বিতীয় পর্বের আয়োজন। এতে অতিথি থাকবেন নৃত্যশিল্পী শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুনমুন আহমেদ ও দীপা খন্দকার। নৃত্য পরিবেশন করবেন দেশের স্বনামধন্য শিল্পী ও জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিশু-কিশোর শিল্পীরা। সবশেষে পরিবেশিত হবে নৃত্যনাট্য ‘প্রসঙ্গ ১৯৪৭’। আগামীকাল সমাপনী দিনে থাকছে প-িত বিরজু মহারাজ ও শ্বাশতী সেনের নাচের যুগলবন্দী। চারুকলার আনন্দ আয়োজন ‘এসো গাহি মঙ্গলের জয়গান’ ॥ বাঙালীর সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক উৎসব পহেলা বৈশাখ। যার অন্যতম অনুষঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে আয়োজিত এ শোভাযাত্রা এখন সার্বজনীন। যেখানে বলা হয় মানুষের কথা, দেশের কথা, কল্যাণের কথা। উৎসবের রঙে রাঙানো এ আয়োজন সম্প্রতি পেয়েছে বিশ্ব স্বীকৃতি। ইউনেস্কোর স্পর্শানাতীত ঐতিহ্যের স্বীকৃতির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এসেছে চলতি বছরের ৩০ নবেম্বর। সে আনন্দকে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার অনুষদ শনিবার এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ‘এসো গাহি মঙ্গলের জয়গান’ সেøাগান ধারণ করে চারুকলার বকুলতলায় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে দেশবরেণ্য শিল্পীদের পাশাপাশি সংস্কৃতি অঙ্গনের ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্বের দরবারে উপস্থাপনা করা এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আনার ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালনের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি এবং ইউনেস্কোয় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও ফ্রান্সে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলামকে সম্মাননা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন সংস্কৃতি সচিব আকতারী মমতাজ এবং বাংলা একাডেমির সম্মাননা গ্রহণ করেন মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। এম শহীদুল ইসলামের পক্ষে সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন সংস্কৃতি সচিব আকতারী মমতাজ। তাদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। উত্তরীয় পরিয়ে দেন চারুকলা অনুষদের অঙ্কন ও চিত্রায়ন বিভাগে সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক রফিকুন নবী। মঙ্গল শোভাযাত্রার সূচনা লগ্নে ১৩৯৬ সালে (১৯৮৯) যারা যুক্ত ছিলেন এমন ২৭ জন শিল্পীকে বিশেষ সম্মাননা জানানো হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন শিল্পী নিসার হোসেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের সাহস আর অশুভের বিরুদ্ধে গৌরবময় লড়াই এবং ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার আকাক্সক্ষার প্রতীক ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আহ্বানে ইউনেস্কো যে স্বীকৃতি দিয়েছে, তাতে আমি এবং চারুকলা বিভাগ অত্যন্ত গর্ববোধ করছি। এটা একটি প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিপর্যায়ে কোন কৃতিত্ব নয়। এই কৃতিত্ব বাংলার মানুষের। কারণ তাদের সম্মিলিত অংশগ্রহণ ছাড়া মঙ্গলশোভা যাত্রাটি এখনকার মতো জনপ্রিয়তা পেত না। এটি এখন সার্বজনীন উৎসব। অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, সামরিক রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে কিছু উদ্যামী তরণ প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করেছিল বলেই আজ বাংলাদেশে ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ইউনেস্কো যে স্বীকৃতি দিয়েছে তার দাবিদার সবাই। তাই আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার জন্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।আকতারী মমতাজ বলেন, গৌরব অর্জনে অংশীদার হতে পেরে আমি গর্বিত ও আনন্দিত। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন ‘পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করার উদ্দেশ্য দুটিÑ দেশের লোকজ সংস্কৃতিকে তুলে ধরা এবং তার মাধ্যমে সবাইকে সত্য ও সুন্দরের পথে আহ্বান করা। শেষ হলো উদীচীর ২০তম জাতীয় সম্মেলন ॥ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন আহমদকে সভাপতি এবং জামসেদ আনোয়ার তপনকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ২০তম জাতীয় সম্মেলন। শনিবার সম্মেলনের তৃতীয় ও শেষ দিন ৯১ সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটি নির্বাচন করা হয়। এদিন সকালে দুটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে শুরু হয় সম্মেলনের তৃতীয় ও শেষ দিনের সাংগঠনিক অধিবেশন। ‘জনতার ঐক্য দানবের দম্ভ ভাঙবেই’ সেøাগানে ২২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের শহীদ বেদিতে বীর ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তিন দিনব্যাপী সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা।
×