ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দেখানো হলো বিশ্বমানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের নমুনা

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬

দেখানো হলো বিশ্বমানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের নমুনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর দেশের একটি অপ্রাতিষ্ঠানিক বিজ্ঞান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। হাতে কলমে আনন্দের মাধ্যমে বিজ্ঞানের শিক্ষা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া ও মানুষকে বিজ্ঞান মনস্ক করে গড়ে তুলতে সাহায্য করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর। বাংলাদেশের বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর বিশ্বমানের না হওয়ায় দেশের তরুণরা বিজ্ঞান থেকে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। বর্তমান ভবনটি অপসারণের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশ্বমানের জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল গত দেড় বছর আগে। এবার বহু প্রত্যাশিত এ জাদুঘরের সম্ভাব্য নমুনা প্রদর্শন করা হলো। শনিবার ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর শেরেবাংলা নগর জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে দ্বিতীয়বারের মতো ‘বিশ্বমানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর নির্মাণের উদ্যোগ ও আমাদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়কমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ সিরাজুল হক খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক স্বপন কুমার রায়। ‘বিশ্বমানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর নির্মাণের উদ্যোগ ও আমাদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক সেমিনারে বিশ্বমানের জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের একটি নক্সা প্রদর্শন করা হয়। প্রদর্শিত জাদুঘরের জমির পরিমাণ ২০ একরের বেশি। কিন্তু জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের বর্তমান অবস্থানের জমির পরিমাণ ৫ একরেরও কম। এজন্য স্থাপত্য অধিদফতরকে সঠিকভাবে স্থাপত্য নক্সা প্রণয়নের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেখানে-ভৌত বিজ্ঞান গ্যালারি (১-৩), জীববিজ্ঞান গ্যালারি (১-৩), প্রযুক্তি (১-৩), মজার বিজ্ঞান, মিশু, মহাকাশ, কৃষি, বিদ্যুত, হেরিটেজ, মেরিটাইম, বাহন বিজ্ঞানের ইতিহাস (১, ২), গণিত, পরিসংখ্যান, মানবদেহ ইত্যাদিসহ মোট ২৬টি গ্যালারি অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছে। এছাড়া মাটির নিচে যানবাহন পার্কিংয়ের জন্য ৩টি বেজমেন্ট ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোরে সায়েন্স পার্কের ব্যবহারের পাশাপাশি অন্যান্য সুবিধা বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। ২০১৫ সালের (১৭-২৮) এপ্রিল থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মহোদয়ের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি দল জার্মানির- মিউনিকের ডয়েচেস মিউজিয়াম, উলফসবার্গের ফিনো সায়েন্স সেন্টার, ব্রেমেনর ইউনিভার্সাম সায়েন্স সেন্টারসহ দক্ষিণ কোরিয়ার গ¦চিওন ন্যাশনাল সায়েন্স মিউজিয়াম, ডিজিউন শহরের ন্যাশনাল সায়েন্স মিউজিয়াম পরিদর্শন করে মিউজিয়ামসমূহের অপারেশনাল সিস্টেম, বিজ্ঞানী প্রদর্শনী এবং স্থাপনাগুলোর স্থাপত্য কৌশল ও বিশেষ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক, স্থাপত্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট স্থপতি এবং গণপূর্ত বিভাগের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীগণ ইতোমধ্যেই ভারত ও স্পেনের বেশ কয়েকটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর পরিদর্শন করেন। বিশ্বমানের এসব জাদুঘর প্রদর্শনের উপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশের জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের সম্ভাব্য নমুনা প্রদর্শন করা হয়েছে। সেমিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোকাম্মেল এইচ ভূঁইয়া, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কীপার (অব) জাহাঙ্গীর হোসেন ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কীপার ড. শিখা নূর মুনসী। অনুষ্ঠানে তারা সকলেই বিশ্বমানের এই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের সম্ভাব্য নক্সায় আরও কিছু বিষয়ের অন্তর্ভুক্তকরণের প্রস্তাব জানান। এছাড়া সেমিনারে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মকর্তা মিডিয়াকর্মী, তরুণ উদ্ভাবক, বিজ্ঞানসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের জনগণ অংশগ্রহণ করেন। এ সময় তারাও নির্ধারিত একটি ফরমে বিশ্বমানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের নক্সায় আরও কি কি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে সে বিষয়ে নিজেদের মতামত প্রদান করেন। প্রধান অতিথি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়কমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান তার বক্তব্যে বলেন, ‘বিশ্বমানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের সম্ভাব্য নক্সা ইতোমধ্যেই প্রস্তুত করা হয়েছে। দেশকে বিজ্ঞান মনস্ক জাতি হিসেবে গড়ে তোলা বিজ্ঞান জাদুঘরের মূল লক্ষ্য। আশা করছি প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় বিশ্বমানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর স্থাপিত হলে ভিশন-২০৪১ এর আলোকে বিজ্ঞান মনস্ক জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’ ১৯৬৬ সালের ৭ নবেম্বর থেকে বাংলাদেশের বর্তমান জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ২০১০ সালের ৭ নবেম্বর রাষ্ট্রীয় আইনী কাঠামোতে একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করে এই জাদুঘরটি। তবে অন্যান্য বিশ্বের জাদুঘরের তুলনায় বাংলাদেশের এই জাদুঘরটি একেবারেই প্রাচীন সংস্করণ। এ কারণে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বমানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের বর্তমান ভবনের উন্নয়নের জন্য একটি নির্দেশনা প্রদান করেন।
×