ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি আংশিক সফল ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬

বিএনপি আংশিক  সফল ॥  ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে বিএনপির ভোট ও গণতন্ত্রের অধিকার আদায়ের আন্দোলন আংশিক সফল হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। ফখরুল বলেন, বিএনপির চাপে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোটে নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে বাধ্য হয়েছে। এটি বিএনপির সফলতা। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনকে আমি একটু ভিন্নভাবে দেখি। সেখানের নির্বাচনে আমাদের যে দীর্ঘকালের সুষ্ঠু নির্বাচনের সংগ্রাম, সেই সংগ্রামের আংশিক বিজয় আমরা লক্ষ্য করেছি। মির্জা ফখরুল বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বাহ্যিকভাবে সুষ্ঠু হলেও ভেতরে কী হয়েছে, সে সম্পর্কে ইতোমধ্যে আমাদের দলের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেয়া হয়েছে। আমরা এ বিষয়টা আরও পরীক্ষা করছি, আমরা দলের পক্ষ থেকে তদন্ত করছি। এরপর সাংবাদিকদের কাছে আরও ভালভাবে বলতে পারব আসলে কী ঘটেছে। নারায়ণগঞ্জবাসী ভোটের মাধ্যমে বিএনপিকে জবাব দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, উনি কেন এমন বক্তব্য দিয়েছেন জানি না। তবে আমরা যেটা মনে করি, সেটা হচ্ছে যে, নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন একটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এই স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিয়ে কখনও জাতীয় নির্বাচনের কোন ফল বা তার সম্পর্কে ধারণা করা সঠিক নয়। কারণ, স্থানীয় নির্বাচনে জাতীয় ইস্যুগুলো সেভাবে প্রাধান্য পায় না। শনিবার বেলা সোয়া ১১টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ৩০২ নম্বর কেবিনে মাহমুদুর রহমানকে দেখতে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি মাহমুদুর রহমানের হাতে ফুল দিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানান এবং চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। প্রায় আধঘণ্টা কেবিনে থেকে মান্নার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেয়ার পর বাইরে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। উল্লেখ্য, প্রায় ২২ মাস কারাভোগের পর ১৮ ডিসেম্বর মুক্তি পান মাহমুদুর রহমান মান্না। ফখরুল বলেন, আমি নাসিক নির্বাচনকে ভিন্নভাবে দেখি। কারণ এটি একটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এ নির্বাচনের ফল দিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিচার করা যাবে না। নাসিক নির্বাচনে জাতীয় ইস্যু ছিল না। বাহ্যিক দিক দিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু হলেও ভেতরে কি হয়েছে তা তদন্ত করতে হবে। তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমান মান্না সকলের কাছে জনপ্রিয় ও সংগ্রামী নেতা। ২২ মাস পর তিনি জামিন পেয়েছেন। এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক সালেকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি কিডনি জটিলতা, হৃদরোগসহ শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মাহমুদুর রহমানকে দেখতে যাওয়ার সময় মির্জা ফখরুলের সঙ্গে ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, দলের সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম, নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ আলী সেলিম প্রমুখ। নাসিক নির্বাচনে আইভি বেশি সুবিধা পেয়েছেন- মওদুদ ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থী ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভি বিএনপির প্রার্থী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের চেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে নাগরিক ফোরাম আয়োজিত ‘স্বাধীন, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনে বিএনপির প্রস্তাব : নাসিক নির্বাচন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, নাসিক নির্বাচনে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড ছিল না। সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন সবই তো সরকারী দলের প্রার্থীর সঙ্গে বন্ধুপ্রতিম আচরণ করেছে। আর বিএনপির প্রার্থীর সঙ্গে তো তারা এ-ধরনের আচরণ করেনি। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনা। আর গণতন্ত্র ফেরাতে স্বাধীন শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন দরকার। বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বলেই নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রস্তাব দিয়েছে। সরকারের উদ্দেশে মওদুদ বলেন, নাসিক নির্বাচনে জনগণ যদি আপনাদের ভোট দিয়েই থাকে তাহলে অবিলম্বে নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিন। এ নির্বাচনে যারা জিতবেন তারাই দেশ পরিচালনা করবেন। এখন তো সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় সুযোগ। মওদুদ বলেন, নির্বাচন কমিশন নিয়ে রাষ্ট্রপতি যে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছেন তা ইতিবাচক। আমরা সংলাপে অংশ নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আমাদের প্রস্তাব পেশ করেছি। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতিকে আলোচনা অব্যাহত রাখা দরকার। যাতে নিরপেক্ষ।নির্বাচন কমিশন নিয়ে সবাই মিলে মতৈক্যে পৌঁছা যায়। তিনি বলেন, দেশে আজ কোন রাজনীতি নেই। যা আছে অপরাজনীতি এবং একদলীয় রাজনীতি। সরকারবিরোধী দলের কোন প্রয়োজনীয়তাই বোধ করছে না। বিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করতে সমস্ত আয়োজন তারা করেছে। এ জন্যই কি আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি আবদুল্লাহিল মাসুদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নী প্রমুখ।
×