ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রিমান্ডে সাত কর্মকর্তা উদাসীনতা ও অদক্ষতার কথা স্বীকার করেছেন

প্রধানমন্ত্রীর বিমানের নাট ঢিলার দায়ভার নিচ্ছেন না কেউই

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬

প্রধানমন্ত্রীর বিমানের নাট ঢিলার দায়ভার নিচ্ছেন না কেউই

আজাদ সুলায়মান ॥ বাংলাদেশ বিমানের প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইটের নাট ঢিলা হবার কারণ সম্পর্র্কে এখনও নিশ্চিত হতে পারছেন না গোয়েন্দারা। রিমান্ডে থাকা বিমানের সাত কর্মকর্তার কাছ থেকেও কোন তথ্য আদায় করতে পারছে না তদন্তকারী সংস্থা কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। যদিও এ সাত জনের কাছ থেকেই আলাদা আলাদা লিখিত বক্তব্য নেয়া হয়েছে। আসামিরা নিজেদের দায়িত্ব পালনে উদাসীনতা ও অদক্ষতার কথা স্বীকার করলেও নাট কেন ঢিলা হয়েছিল, কেউ ওই নাটে হাত দিয়েছেন কিনা তা স্বীকার করছেন না। ডিসি মহিবুল ইসলাম খান জনকণ্ঠকে বলেছে, তারা অনেক কিছু স্বীকার করছে, ঘটনা সম্পর্কে নিজেরা কে কতুটুকু ভুল ত্রুটি করেছে, সবই প্রকাশ করছে। কিন্তুুু নাট কেন ঢিলা হয়েছিল সেটা কেউ বলতে পারছেন না। নাট ঢিলার দায়ভার নিচ্ছেন না এদের কেউই। সূত্র জানায়-শনিবার দিনভর আশকোনায় জঙ্গী বিরোধী অপারেশনে ডিবির শীর্ষ কর্মকর্তারা সবাই ব্যস্ত থাকায় এ সাত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হয়নি। এ দিকে বিমানের এই ঘটনায় প্রকৌশল বিভাগের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে কারা কারা ছিলেন, আগের ভিভিআইপি ফ্লাইটের দায়িত্ব কারা কিভাবে পালন করেছেন, সে সব তথ্যও সংগ্রহ করছে তদন্তকারী সংস্থা। এ জন্য প্রকৌশল বিভাগের আরও কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিবির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্ত। প্রয়োজনে ওই ফ্লাইটের পাইলটদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। বিমান সূত্র জানায়- বিমানের ইতিহাসে এর আগে কখনও এ ধরনের কোন ভিভিআইপি ফ্লাইট নিয়ে মামলা মোকদ্দমা হয়নি। বিমানের প্রকৌশল শাখার ব্যর্থতায় এ প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইটে ত্রুটির ঘটনায় শুধু মধ্যম সারির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হলেও সিনিয়রদের এ ঘটনার বাইরে রাখা হয়েছে। বিমানের নিজস্ব তদন্তেও উর্ধতন কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আনা হয়নি। যে কারণে তদন্তকারী সংস্থা নতুন করে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করার আগে এ বিষয়ে আর নিশ্চিত হতে চাইছে। বিশেষ করে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখার পর ককপিট ক্রুরা কেন চেকলিস্ট অমান্য করে জরুরী অবতরণ করেছেন তাও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের ডিসি মহিবুল ইসলাম খান। বলেছেন, প্রয়োজনে পাইলটদেরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হতে পারে। সিটিটিস সূত্র জানায়- চাঞ্চল্যকর এই মামলাটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও সতর্কতায় তদন্ত করা হচ্ছে। কোন নিরীহ লোক যাতে না ফাসে আবার কোন দোষীও যাতে রেহাই না পায় সেটা বিবেচনায় রেখে ধাপে ধাপে প্রয়োজনে পাইলটসহ বিমানের উর্ধতন কর্মকর্তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। যেখানেই অসংলগ্ন দেখা দেবে সেখানেই তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। সাত দিনের রিমান্ডে থাকা আসামিরা নিজেদের অদক্ষতার কথা অপকটে স্বীকার করলেও নাট ঢিলা হবার কোন বিশ্বাসযোগ্য কারণ সম্পর্কে কিছুই বলতে পারছেন না। যে কারণে ইতোপূর্বে গঠিত তিনটি তদন্ত কমিটির দেয়া রিপোর্টের আলোকেই এ সব আাসমিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মামলায় গ্রেফতারকৃত বিমানের ৭ জন সাত দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। তারা হলেন, বিমানের প্রধান প্রকৌশলী (প্রডাকশন) দেবেশ চৌধুরী, প্রধান প্রকৌশলী (কোয়ালিটি এ্যাসুরেন্স) এস এ সিদ্দিক, প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার (মেইনটেন্যান্স এ্যান্ড সিস্টেম কন্ট্রোল) বিল্লাল হোসেন, সামিউল হক, লুৎফর রহমান, মিলন চন্দ্র বিশ্বাস ও জাকির হোসাইন। এ মামলার অপর দুই আসামি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রকৌশল কর্মকর্তা এস এম রোকনুজ্জামান ও টেকনিশিয়ান সিদ্দিকুর রহমান আত্মসমর্পণ করেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠান বিচারক।
×