ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিদায়বেলায় আশাহত লাবনী...

ক্রিকেটার থেকে এ্যাথলেট

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬

ক্রিকেটার থেকে এ্যাথলেট

রুমেল খান ॥ পরিবারের সবাই আদর করে ডাকে ‘লাবু’। ভাল নাম শারমিন নাহার লাবনী। কিন্তু পাসপোর্টে নাম লেখার সময় সেটা পাকে-চক্রে কিভাবে যেন লাবনী আক্তার হয়ে গেল! শনিবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জাতীয় এ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় মেয়েদের শট পুটে তাম্রপদক জেতেন লাবনী। নামের মতো চেহারাটাও বেশ লাবণ্যময়ী এই অষ্টাদশী সুদর্শনার। বিকেএসপির শট পুটার। গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের জামিরবাড়িতে। তবে বাবার কর্মস্থলের সুবাদে জন্ম হয়েছে যশোরের কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতালে। বাবা ফারুক হোসেন ছিলেন সেনাবাহিনীর কর্পোরাল (অবসর নেয়ার পর এখন ব্যবসা করছেন)। মা মিনা পারভীন, গৃহিণী। ২ বোন, ১ ভাই লাবনীরা। তিনি সবার মেজো। ২০১৩ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হন লাবনী। উচ্চমাধ্যমিকের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন মানবিক বিষয় নিয়ে। এত খেলা থাকতে শটপুটে কেন? ‘আমি মূলত ছিলাম ক্রিকেটার। টপ অর্ডারে ভাল ব্যাটিং করতাম। স্কুল বিভাগীয় পর্যায়েও খেলেছি। ২০১২ সালে লালমনিরহাটের হয়ে খেলে রানার্সআপ হয়েছি। স্থানীয় কিশোরী ক্লাবেও খেলেছি। এছাড়া স্কুলে পড়ার সময় (লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের করিমউদ্দিন পাবলিক পাইলট উচ্চবিদ্যালয়) ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্ট, হাই জাম্প, লং জাম্প, জ্যাভলিন থ্রো এবং সাইক্লিংও খেলেছি। এগুলো খেলে ২৫টিরও বেশি পদক জিতেছি। মজার ব্যাপার হচ্ছে স্কুলে পড়তে কখনই শটপুট খেলিনি। শটপুট বেছে নিয়েছি বিকেএসপিতে ভর্তি হয়ে। জেএসসি পরীক্ষার পর লালমনিরহাটে একটি ট্রায়াল হয় বিকেএসপিতে এ্যাথলেট ভর্তি করার জন্য। ভর্তি হবার পর একদিন অনুশীলনে শট পুটে আমার দক্ষতা দেখে কর্তৃপক্ষই আমাকে শটপুট খেলাটি বেছে নিতে বলেন। আর আমারও আগ্রহ ছিল। সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল বাবা-মায়ের। এভাবেই শটপুট বেছে নেয়া।’ লাবনীর নাতিদীর্ঘ ভাষ্য। বিকেএসপিতে যে বছর ভর্তি হন, সে বছরই জাতীয় জুনিয়র এ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় অংশ নেন লাবনী। শটপুটে তিনি অভিষেকেই জেতেন রৌপ্যপদক। এছাড়া অধরা স্বর্ণপদকও জেতেন লাবনী। সেটা এ বছরই অনুষ্ঠিত সামার জাতীয় এ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় জুনিয়র বিভাগে রেকর্ড স্কোর গড়ে। শনিবার শেষ হলো জাতীয় এ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতা। এ আসরে অবশ্য তাম্রপদক জিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে লাবনীকে। এর ব্যাখ্যাও দেন তিনি, ‘এবার কোমরে চোট থাকায় এবং মাত্র দেড় মাস অনুশীলনের কারণে ভাল পারফর্ম করতে পারিনি। তাছাড়া শেষের দিকে একটু নার্ভাসও হয়ে পড়ি। সবচেয়ে বড় কথা, বিকেএসপির হয়ে এটাই আমার শেষ বারের মতো জাতীয় পর্যায়ে খেলা। কারণ এইচএসসি পাশের পর স্বাভাবিকভাবেই আমাকে বিকেএসপি ছেড়ে যেতে হবে। বিদায়বেলায় স্বর্ণ জিততে পারলে খুশি হতাম। রৌপ্য জিতলেও হতো। ব্রোঞ্জ আশা করিনি। কিন্তু কপালে লেখা ছিল ব্রোঞ্জই জিতব! যাহোক আমার পদকপ্রাপ্তির জন্য অবশ্যই আমি কৃতজ্ঞ আমার কোচ আব্দুল জব্বার স্যারের কাছে।’ ভবিষ্যত লক্ষ্য? ‘পড়াশোনা করে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী বলে আপাতত খেলাধুলা আর করব না। তবে বিশ^বিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি সময়-সুযোগ পেলে আবার খেলাতে ফিরে আসতেও পারি। এটা আমার বাবারও ইচ্ছা। তাছাড়া যে খেলাটি খেলি, সেটাকে পেশা হিসেবে নেয়ার কোন সুযোগ আমাদের দেশে নেই। তাছাড়া বিকেএসপি থেকে বের হবার পর অন্যদের মতো বিভিন্ন সার্ভিসেস সংস্থাগুলোতে যোগ দেয়ার কোন ইচ্ছে নেই।’ শটপুট ছাড়া লাবনীর অন্য প্রিয় খেলা ক্রিকেট। প্রিয় ক্রিকেটার দুজনÑ মুশফিকুর রহীম এবং মাশরাফি মর্তুজা। অবসরে গান শোনা এবং রুমমেটদের সঙ্গে আড্ডা দেয়া লাবনীর শখ। এছাড়া বাবা এবং ছোট ভাইয়ের সঙ্গে বাইকে চড়ে ঘুরতে ভাল লাগে তার।
×