ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কুড়িগ্রামে অবহেলা অনাদরে গণকবর

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬

কুড়িগ্রামে অবহেলা অনাদরে  গণকবর

রাজুমোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম ॥ উল্লেখযোগ্য সম্মুখযুদ্ধের মধ্যে নাগেশ^রী উপজেলার নিলুর খামার ও হাসনাবাদ একটি। এটি হয় একাত্তরের ১৭ নবেম্বর গণহত্যার দিন। সন্তোষপুর ইউনিয়নের নিলুর খামার গ্রামে ৭৯ জনকে আগুনে পুড়িয়ে এবং বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে পাকবাহিনী। এটি নাগেশ্বরীর সর্ববৃহৎ এবং কুড়িগ্রাম জেলায় দ্বিতীয় গণহত্যার ঘটনা। একই দিনে হাসনাবাদ গ্রামের ২৯ নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে পাকিরা। একাত্তরের ১৭ নবেম্বর রাতে শব-ই-কদরের ইবাদত করছিল মানুষ। পাকসেনারা খবর পায় নাগেশ^রীর সন্তোষপুরের আলেপেরতেপথি, চরুয়াটারী, কাইটটারী, সূর্যেরকুটি, সাতানি, ব্যাপারীহাটসহ কয়েকটি গ্রামে স্থানীয়রা মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করছে। খবরের ভিত্তিতে স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় রাতেই পাকবাহিনী গ্রামে প্রবেশ করে। নিলুর খামার গ্রামে পাকবাহিনী যায়নি শুনে আশপাশের গ্রামের মানুষ এ গ্রামে আশ্রয় নেয়। এ খবর জানতে পেরে পাকিরা ওই গ্রামটিকে তিন দিক থেকে ঘিরে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে। আগুনে পুড়ে মারা যায় আপর আলী, বাচ্চানী খাতুন, মইনুদ্দিন মুন্সী, আব্দুস সালাম মুন্সী, হাজেরা খাতুন, আজিজুর রহমানসহ অসংখ্য মানুষ। এছাড়াও বেয়োনেটের খোঁচায় এবং বন্দুকের গুলিতে ৭৯ জন জীবন হারায়। দূরের গ্রামে যখন আজােেনর ধ্বনি শোনা যায়, পুবের আকাশ ফর্সা হতে থাকে তখন পাকবাহিনী চলে যায়। সেদিনের বীভৎস স্মৃতি নিয়ে গুলিবিদ্ধ এবং আগুনে পুড়েও বেঁচে আছেন ওই গ্রামের রোকেয়া বেগম, মালেকা বেগম, জামাল, মিছির আলীসহ কয়েকজন। সেদিনের স্মৃতির কথা জানতে চাইলে ঝর ঝর করে কেঁদে ফেলেন। তারা বলেন, পাকবাহিনী চলে যাওয়ার পর গ্রামের মানুষ এক-দুজন করে ঘর থেকে বের হয়। তখনও জ্বলছিল ঘরবাড়ি। সদ্যমৃত মানুষগুলোর রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল পুরো এলাকা। পালিয়ে প্রাণ বাঁচানো মানুষরা ভয়ে সব লাশ একত্রিত করে গ্রামের এক প্রান্তে গর্ত করে দ্রুত মাটিচাপা দেয়। উপজেলার সর্ববৃহৎ ও জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম গণকবরটি স্বাধীনতার এতদিনেও পড়ে রয়েছে অবহেলায়। সেখানে নির্মাণ হয়নি স্মৃতিসৌধ। শহীদ স্বজনরা আক্ষেপ করে বলেন, সবাই শুধু দেখে যায়।
×