ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অবৈধ পথে মোবাইল সেট আসা বন্ধ হচ্ছে না, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬

অবৈধ পথে মোবাইল সেট আসা বন্ধ হচ্ছে না, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

ফিরোজ মান্না ॥ দেশে মোবাইল ফোনের বাজারে ২৫ শতাংশের বেশি সেট অবৈধভাবে আসছে। সরকার এখান থেকে ৫শ’ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব হারাচ্ছে। বিটিআরসি এই বাজার বন্ধ করার নানা উদ্যোগ নিলেও কোন কাজ হচ্ছে না। অবৈধভাবে আমদানি করা মোবাইল সেট বাজার থেকে তুলে নেয়ার জন্য বিটিআরসি কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছে। কিন্তু তাতে অবৈধভাবে মোবাইল সেট আসা বন্ধ হয়নি। তবে বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড. শাজাহান মাহমুদ বলেন, ‘গ্রে মার্কেট’ বা অবৈধভাবে আসা মোবাইল সেটের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে। এসব মোবাইল সেট আসা বন্ধ করা হবে। অবৈধভাবে আসা মোবাইল সেটের কারণে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। মোবাইল ফোন আমদানিকারকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইম্পোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন’ (বিএমপিআইএ) অভিযোগ করে বলেছে, মোবাইল সেট আমদানি করতে বিটিআরসির কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। দেশে এক শ্রেণীর আমদানিকারক রয়েছে তাদের কোন লাইসেন্স নেই। লাগেজে বা অন্য কোন উপায়ে তারা নামী দামী ব্র্যান্ডের মোবাইল সেট দেশে নিয়ে আসছে। এর বিরুদ্ধে বিটিআরসি সোচ্চার থাকলেও কোনভাবেই অবৈধভাবে আসা মোবাইল আমদানি রোধ করতে পারছে না। গত কয়েক মাসে বিভিন্ন মার্কেটে অভিযান চালিয়ে অবৈধ পথে আসা কয়েক লাখ মোবাইল সেট জব্দ করা হয়েছিল। যেসব মার্কেটে অভিযান চালানো হয় ওই সব মার্কেটে আবার পুরোদমে অবৈধভাবে আসা মোবাইল বিক্রি হচ্ছে। বাজারে এ ধারনের সেটের সংখ্যা ২৫ শতাংশের বেশি। দেশে প্রতিবছর মোবাইল সেটের বাজার প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার।। এর মধ্যে অবৈধভাবে আসা মোবাইল সেটের বাজার ১ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকার ওপরে। কয়েক বছর ধরে এই বাজার ক্রমাগত বাড়ছেই। অবৈধভাবে আসা মোবাইল ফোনের বাজার দিন দিন হুমকি হয়ে উঠছে। শুধু তাই নয়, এসব মোবাইল সেট কিনে ক্রেতারা প্রতারণারও শিকার হচ্ছেন। এই মোবাইল সেটগুলোর কোন ‘গ্যারান্টি-ওয়ারেন্টি’ থাকে না। কোন সমস্যা হলে বিক্রেতা এর দায় নেয় না। বৈধ পথে আসা মোবাইল সেটে কোন সমস্যা হলে বিক্রেতা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সেবা দিচ্ছে। এ বছর দেশে প্রায় ৩ কোটি মোবাইল সেট অবৈধভাবে এসেছে। বিটিআরসির কাছে অবৈধ মোবাইল সেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে কয়েক দফা দাবি জানান হয়েছে। বিটিআরসি দাবির পক্ষে অবস্থান নিয়ে বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছে। কিন্তু হঠাৎ করে বিটিআরসির অভিযান না থাকায় বাজার এখন অবৈধভাবে আসা মোবাইলের দখলে। জানা গেছে, অবৈধ পথে দেশে আসে বেশিরভাগই নামী দামী ব্র্যান্ডের ফোন। সব চেয়ে বেশি আসছে আইফোন। এরপরই রয়েছে স্যামসাং, এইচটিসি, শাওমিসহ আরও কয়েকটি ব্র্যান্ড। একটি মোবাইল ফোনসেট আমদানি করতে শুল্ক বাবদ (মোবাইলের দামের ওপর) আমদানিকারকদের পরিশোধ করতে হয় ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ টাকা। আগের তুলনায় মোবাইল সেটের ওপর শুল্কসহ অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ায়, অবৈধ পথে মোবাইল ফোনের আমদানি রাতারাতি বেড়ে গেছে। দেশে আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইক্যুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) ডাটাবেজে ও পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় এই বাজার বেড়েই চলেছে। বিএমপিআইএ এক কর্মকর্তা বলেন, অবৈধ পথে আসা মোবাইল ফোনের কারণে আমাদের সংগঠনের সদস্যরা বাজার হারাচ্ছে। বাজারে অবৈধভাবে আসা নামী দামী মোবাইল সেট অনেক কম দামে বিক্রি হওয়ায় গ্রাহক ওই সব মোবাইল সেট কিনছে। ওদের আমাদের মতো ওয়ারেন্টি গ্যারান্টি সার্ভিস দিতে হয় না। আইএমইআই ডাটাবেজ তৈরি ও নিবন্ধনের ব্যবস্থা থাকলে এসব মোবাইল আমদানি হতো না। আইএমইআই হলো মোবাইল ফোনের অপরিহার্য একটি উপাদান। এই আইএমইআই দিয়েই গ্রাহকের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। কেউ যদি এক লাখ মোবাইল ফোন সেট আমদানি করতে চায় তাহলে আগেই ওই সব মোবাইলের আইএমইআই নম্বরগুলো টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বিটিআরসি) কাছে জমা দিতে হয়।
×