ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আরও ৪ কোম্পানির অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাখ্যান

এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে দরপত্র আহ্বানের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬

এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে দরপত্র আহ্বানের  নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

রশিদ মামুন ॥ এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্প্রতি চারটি কোম্পানিকে নতুন করে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দিয়েছেন। অর্থাৎ বিদ্যুত জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইনে এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের যে প্রক্রিয়া চলছিল তা বন্ধ হচ্ছে। এতে করে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রে সরকার আরও কম দামে সেবা কিনতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য আরও চারটি কোম্পানির সঙ্গে নন বাইন্ডিং অর্থাৎ বাধ্যতামূলক নয় এমন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের অনুমোদন চাওয়া হয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ওই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। যদিও এর আগে আরও চারটি কোম্পানির সঙ্গে এমওইউ করার অনুমোদন দেয় সরকার। সরকার মহেশখালি এবং পায়রাতে এলএনজি টার্মিণাল নির্মাণের ঘোষণা দিয়ে বেসরকারী উদ্যোক্তারা আগ্রহ দেখাচ্ছে। তাদের আগ্রহের ভিত্তিতেই সরকার এলএনজি টার্মিণাল নির্মাণের প্রস্তাব যাচাই বাছাই করে আগ্রহীদের সঙ্গে এমওইউ করছে। এর আগে ভারত, চীন, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরের অভিজ্ঞ চারটি কোম্পানির সঙ্গে এমওইউ করার বিষয়ে অনুমোদন দিলেও নতুন চারটি কোম্পানির অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী নতুন এই নির্দেশনা দিলেন। নতুন যে চারটি কোম্পানির জন্য অনুমোদন চাওয়া হয় এরমধ্যে তিনটিই যৌথমূলধনী কোম্পানি। এরমধ্যে বাংলাদেশেরও দুটি কোম্পানি রয়েছে। যাদের এলএনজিখাতের অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এলএনজি পরিবহন এবং রিগ্যাসিফিকেশন একটি উচ্চকারিগরি এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। নতুন যে চারটি কোম্পানিকে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য প্রস্তাব দিয়েছে সেগুলো হচ্ছে স্যাম গ্যাস থাইল্যান্ডের সঙ্গে জে এন্ড জে হোল্ডিংস লিমিটেডের যৌথ মূলধনী কোম্পানি, ইন্ট্রাকো এলএনজি এবং এক্সমার শিপ ম্যানেজমেন্ট যৌথ মূলধনী কোম্পানি, কোগ্যাস এমজিসিবি এবং কেএসবিএল’র কনসোর্টিয়াম এবং সিঙ্গাপুরের কোম্পানি গেলেনকোর প্রাইভেট লিমিটেড। নতুন যে কোম্পানি চারটি অনুমোদন চায় জ্বালানি বিভাগ সেখানে জে এন্ড জে হোল্ডিংস লিমিটেডের ওয়েব সাইটে গিয়ে দেখা গেছে তারা রিয়েলএস্টেট ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তারা আবাসন শিল্প মালিকদের সংগঠন রিহ্যাবের সদস্য। আর ইন্ট্রাকো দেশে সিএসজি রূপান্তরের ব্যবসা করে। এদের কারও এলএনজির কোন অভিজ্ঞতা নেই। সরকার একটি এলএনজি টার্মিণাল নির্মাণের জন্য চুক্তি সই করেছে মার্কিন এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে। এছাড়া বিশেষ বিধানে এমওইউ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে সেগুলো হচ্ছে ভারতীয় কোম্পানি পেট্রোনেট এলএনজি লিমিটেড, চায়না হুয়ানকিং কন্ট্রাক্টিং এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (এইচকিউসি), সিঙ্গাপুরের সেম্বক্রপ ইউটিলিটিজ পিটি লিমিটেড, হংকং সাংহাই মানজেলা পাওয়ার লিমিটেড এবং গ্লোবাল এলএনজি এন্ড পেট্রোনাস মালেশিয়া এর সঙ্গে গঠিত যৌথ মূলধনী কোম্পানি। এখন বিশ্ব বাজারে এলএনজির দর কম। কিন্তু দেশে টার্মিনাল না থাকায় এলএনজির কোন সুবিধা নিতে পারছে না সরকার। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদনের ক্ষেত্রে কয়লা পরিবহন এবং রক্ষণাবেক্ষণে বিরাট ঝক্কি পোহাতে হয়। অন্যদিকে এলএনজি টার্মিনাল থাকলে সরাসরি গ্রিডে গ্যাস দেয়া সম্ভব। এই গ্যাস দিয়ে বিদ্যুত এবং শিল্প উৎপাদন করা যায়। এলএনজি প্রাকৃতিক গ্যাস বলে এতে পরিবেশ দূষণ হয় না। ঝঞ্ঝাটমুক্ত পরিবহন, কম দাম এবং ক্লিন ফুয়েল বলেই এলএনজির প্রতি সরকার সম্প্রতি জোর দিচ্ছে। এছাড়া এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এলএনজি বিক্রির জন্য দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি করতে আগ্রহী। সরকার মনে করছে এতে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পেলেও এলএনজির ক্ষেত্রে তার কোন প্রভাব পড়বে না। সরকার বলছে, গত কয়েক বছরে দেশের স্থলভাগে বড় কোন মজুদের খবর দিতে পারেনি পেট্রোবাংলা। আর বাইরে বাপেক্স যে দ্বিতীয় মাত্রার জরিপ পরিচালনা করছে সেখানেও বড় কোন সুখবরের কথা কেউ বলছেন না। সঙ্গত করণে এলএনজি দেশে গ্যাস সঙ্কটের প্রধান বিকল্প। সরকার ২০১১ সালে কাতার থেকে এলএনজি আমদানির জন্য একটি এমওইউ সই করে। পরে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে বিলম্ব হওয়ায় আর চুক্তি হয়নি। এখন এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের চুক্তি করার পর আশা করা হচ্ছে ২০১৭ সালের শেষে দেশে এলএনজি আসবে। এলএনজি ক্রয়ে দরকষাকষির জন্য সম্প্রতি জ্বালানি সচিবকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটিও করেছে সরকার।
×