ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বীরাঙ্গনা রহিমা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চেয়েছেন

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬

বীরাঙ্গনা রহিমা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চেয়েছেন

রাজুমোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম ॥ স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর এসে বীরাঙ্গনাদের স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছেন কুড়িগ্রামের দেবালয় গ্রামের ৬৫ বছরের বিধবা রহিমা। দেশের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেও আজ পেটে ভাত নেই, অনাহারে-অর্ধাহারে রোগাক্লিষ্ট শরীরে দিন কাটছে রহিমার। সেই বিভীষিকাময় দিনের কথা মনে পড়লেই আজও তার গা শিউরে ওঠে আর চোখের কোণ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে অবাধ্য অশ্রু। লোকলজ্জার ভয়ে এতদিন মুখ না খুললেও সরকারের মহতী উদ্যোগের কারণে জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে মুক্তিযোদ্ধার শেষ সম্মানটুকু নিয়ে কবরে যেতে চেয়েছেন রহিমা, এ আশায় চাতক পাখির মতো প্রহর গুনছেন। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৩৭তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের ২৪ বীরাঙ্গনাকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেয়া হয়। এর মধ্যে কুড়িগ্রামের ১০ বীরাঙ্গনাকে দেয়া হয় মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। এতে রহিমার বুকেও আশার সঞ্চার হয়েছে। তার শেষ ইচ্ছা মৃত্যুর আগে সরকারীভাবে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। কুড়িগ্রাম জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি ও সরকারী মহিলা কলেজের শিক্ষক মাহাবুবুর রহমান জানান, ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের শেষের দিকে বিকেল বেলা পাকবাহিনী দেবালয় গ্রামে তা-ব চালায়। তারা প্রায় ৭০-৮০টি ঘর জ¦ালিয়ে দেয়। পরের দিন আবার ওই এলাকায় পাকবাহিনী খুতুব উদ্দিনের বাড়িতে প্রবেশ করা দেখে রহিমা চিৎকার করলে সবাই পালাতে শুরু করে। এ সময় রহিমা ইদারার পাড়ে এসে তাদের হাতে ধরা পড়ে। রহিমাকে পাকবাহিনী তুলে নিয়ে খুতুব উদ্দিনের কাঁচা ঘরে নিয়ে পালাক্রমে নির্যাতন করে। ঘটনার সময় রহিমার চিৎকার আর পাকবাহিনীর উল্লাসের আওয়াজ শুনতে পাই আমি পাশের জঙ্গল থেকে। প্রতিবেশী পাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সিনিয়র শিক্ষক তসর উদ্দিন জানান, রহিমার স্বামী ওমর আলী ছিলেন চায়ের দোকানদার। কাঁঠালবাড়িতেই ছিল তার ছোট দোকান। ২০০৯ সালে হাঁপানি রোগে আক্রান্ত হয়ে ওমর আলী মারা যান। তাদের ঘরে ছেলেমেয়ে তিনজন। এর মধ্যে ছোট ছেলেটি ৯ বছর বয়সে রক্ত আমাশয়ে মারা যায়। বড় মেয়ে পারুল বেগম (৩৫) ও ছোট রমিছা বেগমের (৩২) বিয়ে দেন। এরপর থেকে একা থাকেন বাড়িতে। অভাবী সংসারে মেয়েরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত দিন পার করলেও মাঝেমধ্যে তারা এসে একটু সাহায্য-সহযোগিতা করেন। এছাড়া বাকি দিন পাড়া-প্রতিবেশীর সহায়তা আর ভিক্ষাবৃত্তি করেই দিন যায় রহিমার। তাকে ’৭১-এরর বীরাঙ্গনা হিসেবে এলাকার সবাই জানে।
×