ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অপারেশন রূপসী শীতলক্ষ্যায় পাকিসৈন্যের টহলবোট ধ্বংস

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬

অপারেশন রূপসী শীতলক্ষ্যায় পাকিসৈন্যের টহলবোট ধ্বংস

কামরুল আলম খান খসরু স্বাধীনতা যুদ্ধ হলো গভীর আত্মত্যাগ, অবিশ্বাস্য সাহস ও বীরত্ব এবং বিশাল এক অর্জনের ইতিহাস। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালীর সফল বিজয় অর্জনের ফলে বিশ্বের মানচিত্রে ‘বাংলাদেশ’ নামে এক স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। আর এ নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের প্রতিদিনের আর প্রতিমুহূর্তের সংগ্রামের যে বীরত্বগাথা সারাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে তার খবর ক’জনই বা জানে! ঢাকা শহরের পূর্ব পাশ দিয়ে প্রবাহিত খরস্রোতা শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর টহলরত পাক সেনাদের টহলবোট ধ্বংসের কৃতিত্বের নিবিড় আলিঙ্গনে জড়িয়ে আছে তেমনই এক বীরত্বগাথা। সেদিন পাক সেনাদের টহলবোট ধ্বংস ছিল একক বীরত্বের এক লোমহর্ষক ও রোমাঞ্চকর কাহিনী। আজ সেই শিহরণ জাগানো কাহিনী দেশ ও জাতির সামনে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে লিখে জানাচ্ছি। যে বীরত্বগাথা বাঙালীর স্বাধীনতা ও সশস্ত্র যুদ্ধের ইতিহাস সচেতন পাঠকদের মন ও অনুভূতিকে গভীরভাবে স্পর্শ করবে। শীতলক্ষ্যা নদীর অবস্থান তৎকালীন ভৌগোলিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। শীতলক্ষ্যা ব্রহ্মপুত্রের পশ্চিম দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বর্তমানের নারায়ণগঞ্জ জেলাকে পূর্ব-পশ্চিমে দু’ভাগ করে শহরের ভেতর দিয়েই স্বচ্ছন্দ গতিতে এগিয়ে গিয়ে মিলিত হয়েছে শহরটি থেকে সামান্য দক্ষিণে বহতা নদী ধলেশ্বরীর সঙ্গে। শীতলক্ষ্যা নদীর এপারে প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকা ও ডেমরা ঘাট আর অপর তীরে তারাবো ঘাট। ওই সময়ে একমাত্র ডেমরা ঘাটের ফেরি দিয়ে নদী পার হয়ে তারাবো ঘাটে যেতে হতো। তারাবো ঘাট থেকে কিছুটা দূরে উত্তরে নদীর তীরে ছিল বর্তমানের রূপগঞ্জ থানার রূপসী বাজার। তারাবো থেকে রূপসী বাজার হয়ে একটি কাঁচা রাস্তা মুড়াপাড়ার দিকে চলে গেছে। আর অন্য একটি সরু গ্রামীণ পথ বাজারের পূর্ব পাশে শিল্পপতি জহুরুল ইসলামের অর্ধ নির্মিত ফ্যাক্টরি ও খান সাহেবের বাড়ির পাশ দিয়ে নরসিংদী রোডে গিয়ে মিলেছে। এছাড়াও ডেমরা ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প এলাকা। অসংখ্য কলকারখানা রয়েছে এ এলাকায়। শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় থেকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা চলে গেছে দু’দিকে। একটি নরসিংদী-সিলেট মহাসড়ক আর অন্যটি কুমিল্লা-চিটাগাং মহাসড়ক। তাই একাত্তর সালে সশস্ত্র যুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সৈন্যরা শীতলক্ষ্যার উভয় পাড়ে ভারি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঘাঁটি (বাঙ্কার) স্থাপন করে। বাঘের ঘরে ঘোগের বাসার মতো আমরাও এ এলাকায় আস্তানা গাড়ি এবং সুযোগ বুঝে তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ি। এলাকাটিতে আমাদের অবস্থানের দিক সংহত হতে থাকে। আমরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে এবং সুযোগের অপেক্ষায় থাকতাম। আর সুযোগ পেলেই পাকিস্তানী সৈন্যদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তাম, তাছাড়া ঢাকা গিয়েও অপারেশন করতে হতো। তবে আমাদের এ অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে একাত্তরের ডিসেম্বরে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে যখন মিত্রবাহিনী শীতলক্ষ্যা নদী পার হয়ে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল আমরাই তাদের কোনরকম বাধা বিঘœ ছাড়া নিরাপদে নদী পারাপারে সাহায্য করি। ভারতের উত্তর প্রদেশের দেরাদুনের ‘টানডাওয়া’ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে গেরিলা প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে আমরা এগারোজন (পরবর্তী সময়ে এ সংখ্যা আরও বেড়েছিল) গেরিলা যোদ্ধা সশস্ত্র অবস্থায় আগরতলা হয়ে শীতলক্ষ্যা নদী সংলগ্ন এলাকায় এসে আস্তানা গাড়ি। চলবে... লেখক : গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা
×