ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইসরাইলী বসতি নির্মাণের সমালোচনা করে নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব পাস

ভেটো দিল না যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬

ভেটো দিল না যুক্তরাষ্ট্র

ফিলিস্তিনী ভূখণ্ডে ইহুদী বসতি নির্মাণের সমালোচনা শুক্রবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ একটি প্রস্তাব পাস করেছে। এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইল বিরোধী প্রস্তাবে ভেটো দেয়নি। প্রস্তাবটি পাস হতে দেয়ায় ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনের কঠোর সমালোচনা করেছে। ফিলিস্তিনী কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা পরিষদের প্রশংসা করেছে। খবর এএফপি ও বিবিসি অনলাইনের। অধিকৃত ফিলিস্তিনী ভূখ-ে ইসরাইলী অবৈধ বসতি নির্মাণ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে শুক্রবার একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। এসব বসতি নির্মাণ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং তা বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে ওই প্রস্তাবে। প্রস্তাবটি পাস হওয়ায় ফিলিস্তিনী কর্তৃপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করলেও, ইসরাইল জানিয়েছে ‘অবৈধ প্রস্তাব’ তারা মেনে নেবে না। প্রথমে মিসর এই প্রস্তাবটি এনেছিল, কিন্তু এর বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করার জন্য পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অনুরোধ করে ইসরাইল। এরপর মিসর প্রস্তাবটি ফিরিয়ে নেয়। কিন্তু পরে মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড, সেনেগাল আর ভেনিজুয়েলা আবার প্রস্তাবটি নিরাপত্তা পরিষদে তোলে। ১৫ সদস্যের পরিষদে ১৪-০ ভোটে প্রস্তাবটি পাস হয়। যুক্তরাষ্ট্র ভোটদানে বিরত ছিল। এ ধরনের ভোটাভুটিতে সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র ভেটো বা আপত্তি দিয়ে থাকে। তবে এই প্রস্তাবের ভোটের সময় দেশটি ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকে। জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত সামান্থা পাওয়ার বলেছেন, প্রস্তাবের সব শব্দ বা বক্তব্যের সঙ্গে একমত নয় বলে এর পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র নয়। আবার আমরা বিরুদ্ধেও যাইনি, কারণ সমস্যার সমাধানে যে দুই দেশ নীতিতে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে, এই প্রস্তাব তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। প্রস্তাবটি পাসে সন্তোষ প্রকাশ করে ফিলিস্তিনী নেতারা বলেছেন, এই প্রস্তাব আন্তর্জাতিক আইনের বড় বিজয় এবং ইসরাইল যে উগ্র কর্মকা- করছে, সেটির প্রত্যাখ্যান করেছে বিশ্ব। তবে ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দফতর জানিয়েছে, ইসরাইল এই প্রস্তাবের শর্ত মানবে না বরং এই প্রস্তাবের কার্যকারিতা ঠেকাতে তারা ট্রাম্পের জন্য অপেক্ষা করবেন। ট্রাম্প এর মধ্যেই বলেছেন, আসছে জানুয়ারি তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পর পরিস্থিতি অন্যরকম হবে। বসতি নির্মাণের বিষয়টি ইসরাইল-ফিলিস্তিনের মধ্যে সবচেয়ে উত্তেজনাকর বিষয় এবং শান্তি আলোচনার বড় বাধা বলে বিবেচনা করা হয়। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে দখল করা জমিতে ১৪০টি বসতি তৈরি করেছে ইসরাইল, যেখানে প্রায় ৫ লাখ ইহুদি বসবাস করেন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আনা একটি প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি স্থগিত রাখা হয়েছে। ইহুদী বসতি নির্মাণ নিয়ে প্রস্তাবটি এনেছিল মিসর। পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বিষয়ে বিরোধিতা করার পর মিসর এই সিদ্ধান্ত নিল। যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে অনুপস্থিত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে একজন মার্কিন কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের এই পদক্ষেপের কারণে প্রস্তাবটি আর আলোর মুখ দেখবে না। জানা গেছে, প্রস্তাবটির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র যেন জাতিসংঘে হস্তক্ষেপ করে সে লক্ষ্যে ইসরাইল ট্রাম্প ট্রানজিশন টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। অধিকৃত ভূখ-ে বসতি স্থাপন যে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন মিসরের ওই প্রস্তাবে সে কথা বলা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা পরিষদে ওই প্রস্তাবের ওপর ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের কিছু আগে মিসর প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করে নেয়। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, এ বিষয়ে আরও পরামর্শের জন্য সময় দিতে ভোটাভুটি স্থগিত করা হয়েছে। তবে কবে প্রস্তাবের ওপর নতুন করে ভোটাভুটি হবে তা ঠিক হয়নি। জাতিসংঘে নিযুক্ত মিসরের রাষ্ট্রদূতকে প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আস-সিসি নিজেই প্রস্তাবটি স্থগিত করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপের পর তিনি এ নির্দেশ প্রদান করেছেন। সিসির কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, টেলিফোনে দুই প্রেসিডেন্ট আঞ্চলিক সম্পর্ক, মধ্যপ্রাচ্যের উন্নয়ন এবং ইহুদী বসতির বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদে খসড়া প্রস্তাবের বিষয়ের আলোচনা হয়েছে। এর আগে প্রস্তাবটি তোলার পর ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এতে ভেটো দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। নিরাপত্তা পরিষদে ভোটো ক্ষমতার অধিকারী যুক্তরাষ্ট্র বরাবর নিন্দাসূচক প্রস্তাব থেকে ইসরাইলকে রক্ষা করে এসেছে। সর্বশেষ মার্কিন এ উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘কেবলমাত্র সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি আসতে পারে। জাতিসংঘের চাপিয়ে দেয়া প্রস্তাবের মাধ্যমে নয়।’ এর আগে ইসরাইলের কর্মকর্তারা বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করেছিল তারা যেন নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবটি আটকানোর চেষ্টা করে অন্যথায় তারা পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য আবেদন করবেন। ট্রাম্প আগামী মাসের ২০ তারিখ ক্ষমতা গ্রহণ করবেন। এদিকে মিসর প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করে নিলেও নিউজিল্যান্ড, ভেনিজুয়েলা, মালয়েশিয়া ও সেনেগাল বলেছে, ভোটাভুটির জন্য প্রস্তাবটি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনার অধিকার তাদের রয়েছে। এই চারটি দেশের একটিও নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য নয়। কেবল দু’বছরের জন্য সদস্য নির্বাচিত হয়েছে।
×