ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভোটের উৎসব

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬

ভোটের উৎসব

উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছিল ভোটাররা। ‘এমন সুন্দর নির্বাচন জীবনে দেখিনি’ বলে তাদের স্বতঃস্ফূর্ত আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। ভোটার ও সাধারণ মানুষের আগ্রহ দেখে মনে হওয়াই স্বাভাবিক যে, এ যেন ভোট নয়, বড় কোন মহোৎসব। কেউ কেউ পরিবেশের জন্য আপ্লুত হয়ে উচ্চারণ করেছেন, ‘এ এক মডেল নির্বাচন। এ এক ঐতিহাসিক নির্বাচন।’ শান্তিপূর্ণ, সন্তোষজনক এমন ভোটের পরিবেশ নিকটকালে দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে, তা বলা যাবে না। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের অনুষ্ঠিত নির্বাচন ছিল অভূতপূর্ব। আনন্দময় পরিবেশ গড়ে তোলার ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা এবং ভোটদানপর্ব মিলিয়ে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা প্রতিফলিত হয়, এমন নির্বাচনই প্রত্যক্ষ করেছে দেশবাসী। ভোটাররা নির্বিঘেœ ভোটকেন্দ্রে এসেছে। লাইনে দাঁড়িয়েছে। কোন হুমকি-ধমকি, চোখ রাঙানো, প্রাণভীতি এসবের কিছুই পরিলক্ষিত হয়নি। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার অতীতের বহু নির্বাচনের দৃশ্যপট এখানে মেলেনি। শীতলক্ষ্যার শান্ত পানির মতোই নারায়ণগঞ্জ শান্তিপূর্ণ ভোটের উৎসবে মাতোয়ারা হয়েছিল। এই নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটে জিতেছেন ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী। প্রতিদ্বন্দ্বীদের সমর্থকদের মধ্যে বিরূপ বিদ্বেষ, অপপ্রচার, কটূক্তির কোন লেশ মেলেনি এই নির্বাচনে। নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে এতটা উত্তেজনাহীন শান্তির ভোট সর্বশেষ কবে হয়েছে, কারও জানা নেই। দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশে, সুষ্ঠুভাবে। কেন এমনটা সম্ভব হলো, প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার ব্যাখ্যা যা দিয়েছেন তা বাস্তবসম্মতই। সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং রাজনৈতিক দলÑ এই তিনটি প্রতিষ্ঠান পারস্পরিক সহযোগী হলে সুষ্ঠু নির্বাচন যে সম্ভব, তা আবারও প্রমাণিত হলো। সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা পাওয়া গেলে গোলযোগবিহীন ভোটগ্রহণ যে সম্ভব তা নারায়ণগঞ্জ প্রমাণ করেছে। কোন ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেনি নির্বাচনের পূর্বাপর সময়ে। যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। সব প্রার্থী এবং তাদের সমর্থক ও ভোটাররাও চেয়েছেন শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। নির্বাচনী আচরণবিধি তারা হুবহু মেনে যে চলেছেন, তা স্পষ্ট। কারণ কারও বিরুদ্ধে তেমন কোন অভিযোগ ওঠেনি। মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থীরা পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সম্মানটুকু বজায় রাখতে পেরেছেন। এই নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছিল। নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন সব প্রার্থীর সঙ্গে মতবিনিময় করেছে। সমস্যা নিরসনে নেয়া হয়েছিল পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও সমর্থকরা সহযোগিতা করার কারণে সহিংসতার কোন ঘটনা ঘটেনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন ছিল প্রচুর পরিমাণে, তারা সবদিকে তীক্ষèনজর রেখেছিল, কোথাও কোন শৈথিল্য ছিল না। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের উদাহরণ হয়ে থাকল। বর্তমান ইসি তার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে এমন সুষ্ঠু ও বিধিসম্মত নির্বাচন উপহার দিয়েছে, যাতে আগামী ২০১৯ সালের সংসদ নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর করার ক্ষেত্র প্রশস্ত হলো। রাজনৈতিক দল যেভাবে সহিষ্ণুতা ও সংযমের পরিচয় দিয়েছে, তা অতুলনীয় ও অভূতপূর্ব। রাজনৈতিক দলগুলোর এমন দায়িত্বশীল আচরণই জনগণের প্রত্যাশা। এমন নির্বাচনের জন্য নারায়ণগঞ্জবাসী ও ভোটার, রাজনৈতিক দল এবং তাদের সমর্থক, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসনসহ নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় জড়িত সবাই অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য। তাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার ফসল নাসিক নির্বাচন সহিংসতামুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে। আর দু’মাস পর বিদায় নেবে বর্তমান ইসি। শেষ মুহূর্তে তারা যে দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন, তা অভাবনীয়। ভোট হোক উৎসবমুখর, রক্তপাতহীন, মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা জাগিয়ে তুলুক। পবিত্র আমানত ভোটের যাতে সদ্ব্যবহার হয় সেটাই প্রত্যাশা।
×