ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ছাতনী শহীদদের স্বীকৃতি মেলেনি

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬

ছাতনী শহীদদের স্বীকৃতি মেলেনি

মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার চোখের সামনে নিরীহ বাঙালীকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নির্যাতন করেছে। রাতে বাড়ি থেকে ধরে এনে জবাই করেছে। মুখে এসিড মেরেছে। হত্যাযজ্ঞ অভিযানে পাক-বাহিনী রাজাকারের সহায়তায় যাদের পেয়েছে তাদের পিঠমোড়া দিয়ে বেঁধে বধ্যভূমিতে নিয়ে জবাই, গুলি করে হত্যা করে। আমার বাবা সে সময় জনপ্রতিনিধি হওয়ায় তাকেও তারা ধরে নিয়ে হত্যা করে। ছাতনী বধ্যভূমিতে এক কবরে সাত-দশজনকে একসঙ্গে মাটি চাপা দেয়া হয়। সেদিনের কথা মনে করে আজও গা শিউরে ওঠে। বলছিলেন ছাতনী গণহত্যার শিকার শহীদ মনির উদ্দিন সরকারের ছেলে দুলাল সরকার। দুলাল সরকারের মতো অনেকে সেদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আজও চোখের জলে ভাসে। চোখের সামনে পরিবারের অন্য সদস্যদের শহীদ হওয়ার জলন্ত ইতিহাস কখনই ভুলে যাবার নয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনীর হেডকোয়ার্টার ছিল নাটোর রাজবাড়ীতে। তবে নাটোরে ময়নার সম্মুখ সমর ছাড়া পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর তেমন কোন বড় লড়াই হয়নি। তবে মুক্তিযুদ্ধকালীন হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদররা নাটোরের বিভিন্ন স্থানে নির্বিচারে যে গণহত্যা চালায়, তার মধ্যে ছাতনী গণহত্যা ছিল অন্যতম নৃশংস। নাটোর শহর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার পশ্চিমে ছাতনী গ্রাম। নাটোরের প্রয়াত অবিসংবাদিত আওয়ামী লীগ নেতা শংকর গোবিন্দ চৌধুরীর জন্ম এই গ্রামে। নাটোরের সবচেয়ে জনপ্রিয় এ নেতাকে কাছে পেয়ে এখানকার স্বাধীনতাকামী বাসিন্দারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ কারণে পাকিস্তানী বাহিনী এবং তাদের এ দেশী দোসর রাজাকার-আলবদরদের আক্রোশের শিকার হয় স্থানীয়রা। ১৯৭১ সালের ৪ জুন। এদিনে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা ছাতনীসহ আশপাশের ১০টি গ্রামের সাড়ে চারশ’ ঘুমন্ত নিরীহ মানুষকে সøুইসগেট এলাকায় ধরে নিয়ে গিয়ে পিঠমোড়া দিয়ে বেঁধে জবাই করে, গুলি করে, ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। এরপর মৃতদেহের ওপর এসিড ঢেলে সøুইসগেটসহ আশপাশের পুকুর ও ডোবায় গর্ত করে পুঁতে রাখে। ছাতনী বধ্যভূমির পাশের পুকুর-ডোবায় ফেলে দেয় অনেক মৃতদেহ। পরবর্তীতে শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে রাস্তার পাশেই শহীদ মনির উদ্দিন সরকারের ১০ শতাংশ জমিতে ছাতনী শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন শংকর গোবিন্দ চৌধুরী। ১৯৯২ সালে শহীদ মনির উদ্দিনের ছেলে দুলাল সরকার নিজ উদ্যোগে শহীদদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেন। তবে জটিলতার কারণে স্থানীয় ৬৬ শহীদ ব্যতীত বাইরের শহীদদের তালিকা তৈরি করতে ব্যর্থ হন। বর্তমানে ছাতনী স্মৃতিস্তম্ভের শহীদদের নামফলকে এই ৬৬ শহীদের নাম রয়েছে। ছাতনী শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর কয়েক ধাপে নির্মাণ চললেও এখনও তা পূর্ণতা পায়নি। মেলেনি শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। Ñকালিদাস রায় নাটোর থেকে
×