ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জয়পুরহাটে বধ্যভূমির সংখ্যা ৩৯

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬

জয়পুরহাটে বধ্যভূমির সংখ্যা ৩৯

জয়পুরহাটের বধ্যভূমিগুলো এখনও চিহ্নিত হয়নি। হাতে গোনা কয়েকটি বধ্যভূমি চিহ্নিত হলেও সেগুলোর দেখভাল করার পরিকল্পিত কোন উদ্যোগ নেই। জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবিতে পাকি সেনারা ১৯ এপ্রিল প্রথম হানা দিয়ে নৃশংস হত্যাকা- চালায়। এই দিনে পাঁচবিবিতে পাকি বাহিনী ও তার সহযোগীদের নৃশংসতা চলে। পরদিন পাকিবাহিনী চলে যায় পূর্বদিকে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে। পরবর্তীতে ২৪ এপ্রিল সান্তাহার এলাকা থেকে পাকি বাহিনী রেলযোগে জয়পুরহাটে এসে একই কায়দায় শুরু করে হত্যাযজ্ঞ। নির্যাতন চলে ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ নির্যাতন অত্যাচারে পাকি বাহিনীকে সহায়তা করে রাজাকারের শিরোমনি আব্দুল আলীম ও তার বাহিনী। বেছে বেছে তারা হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় হামলা, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকা- চালায়। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত সমর্থকদেরও খুঁজে খুঁজে হত্যা করে। যেসব এলাকায় বধ্যভূমি হিসাবে পাকি সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশী দোসর আলবদর রাজাকাররা নির্দিষ্ট করে সেগুলো হচ্ছে সদর উপজেলার ভারত সীমান্ত সংলগ্ন চকবরকত ইউনিয়নের পাগলা দেওয়ান গ্রাম। এই গ্রামে রয়েছে সব চেয়ে বড় বধ্যভূমি। বাঙালীরা জীবনের নিরাপত্তার জন্য পালিয়ে ভারতে যেতে এই পথ বেছে নিয়েছিল। পাকি বাহিনী তাদের এখানে হত্যা করে। শুধু তাই নয় পাকি বাহিনী এই পাগলা দেওয়ান গ্রামে জুমার দিন মসজিদে নামাজরত মুসল্লিদের ধরে এনে গুলি করে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। পাগলা দেওয়ান বধ্যভূমিটি ১৯৯২ সালের ৩০ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের গবেষক সংস্কৃতি সংগঠক আমিনুল হক বাবুল ও সাংবাদিক নন্দকিশোর আগরওয়ালা আবিষ্কার করেন। এই বধ্যভূমিতে যেখানেই কোদাল দিয়ে মাটি তোলা হয় সেখানেই মানুষের হাড়, মাথার খুলি বেরিয়ে আসে। প্রবীণরাও বলতে পারে না সংখ্যায় কত লোক এখানে হত্যা করা হয়েছে। তারা বলে মানুষের মিছিল আসছিল সে সময় আর পাকি সৈন্যরা তাদের ধরে ধরে হত্যা করে। তাদের সংখ্যা হাজার হাজার হবে। তাদের হাত থেকে নারী, শিশু, বৃদ্ধ কেউই রেহাই পায়নি। বিভিন্ন এলাকা থেকে এই পথে ভারতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে আসা পরিবার থেকে মেয়েদের ধরে রেখে তারা ৯ মাস ধর্ষণ করে। দেশ স্বাধীন হলে কয়েকটি ঘরে তাদের ধর্ষণের আলামত যেমন চুড়ি, শাড়ি, ব্লাউজ, পেটিকোট পাওয়া যায়। পাকি সৈন্যরা জয়পুরহাট শহরের কড়ই কাদিপুর গ্রামে ২৬ এপ্রিল হিন্দু অধ্যুষিত পালপাড়া গ্রামে বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। লুটপাট করে এবং নারী পুরুষকে গুলি করে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে পুকুরে ফেলে দেয়। একইভাবে জয়পুরহাট সরকারী ডিগ্রী কলেজের মাঠের পাশে ও মাঠসংলগ্ন বারোঘাটির পারে দুটি বধ্যভূমিতে হত্যার পর লাশ মাটিতে পুঁতে রাখে। মুক্তিযুদ্ধ গবেষক আমিনুল হক বাবুল জানান, এই জেলায় ছোট বড় মিলে ৩৯টি বধ্যভূমি রয়েছে। যা সরকারীভাবে এখনও চিহ্নিত হয়নি। -তপন কুমার খাঁ জয়পুরহাট থেকে
×