ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গাজীপুরে প্রথম টার্কি উৎসব

প্রকাশিত: ০৬:২১, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬

গাজীপুরে প্রথম টার্কি উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ দেশে প্রথমবারের মতো ‘টার্কি উৎসব’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ টার্কি বার্ডস ডেভেলপমেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের (বিটিবিডিএ) আয়োজনে শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল পর্যন্ত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সালনা এলাকায় উৎসব অনুঠিত হয়। আয়োজকরা জানান, টার্কি হচ্ছে বড় আকারের গৃহপালিত পাখি। এদের উৎপত্তি উত্তর আমেরিকায় কিন্তু ইউরোপসহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশে পালন করা হয় এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খাদ্য তালিকায় অন্যতম উপাদান। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে ওঠার ছয় থেকে সাত মাসের মধ্যে টার্কি ডিম দেয়। ছয় মাসের মেয়ে টার্কির ওজন হয় সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার কেজি। আর পুরুষগুলো প্রায় ছয় কেজি। আমেরিকায় টার্কির রোস্ট অভিজাত খাবার। আমাদের দেশে মুরগির মাংসের মতো করেই টার্কি রান্না করা হয়। রোস্ট ও কাবাব করা যায়। পশ্চিমা দেশগুলোতে টার্কি জনপ্রিয়। সবচেয়ে বেশি টার্কি পালন করা হয় যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য প্রভৃতি দেশে। টার্কি চাষীরা জানান, ডিম ফোটানো নিয়ে একটু বিপাকে পড়তে হয়। ‘ইনকিউবেটর’ যন্ত্র তৈরি করে বাচ্চা ফোটানো যায়। এতে একসঙ্গে এক হাজার ডিম ফোটানো যায়। কিন্তু যন্ত্রটি স্বয়ংক্রিয় না। এজন্য দিনে কয়েকবার ডিম উল্টে দিতে হয়। আর আর্দ্রতা ঠিক রাখার জন্য যন্ত্রের বাইরে পানি ছিটাতে হয়। ভেতরেও পানি রাখতে হয়। এ যন্ত্রের সাহায্যে ২৭ দিনে টার্কির ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। আর তিতিরের ২৪ দিন লাগে। বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ এ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজি শাখার সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার রেজাউল করিম মিয়া জানান, মাংস উৎপাদনের জন্য টার্কির সাতটি আদর্শ জাত রয়েছে। পাখিজাতীয় মাংস উৎসের মধ্যে মুরগি, হাঁস, তিতির, কোয়েলের পর টার্কি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। টার্কির মাংস অন্যান্য পাখির মাংস থেকে কম চর্বিযুক্ত, তাই অন্যান্য পাখির চেয়ে টার্কির মাংস বেশি পুষ্টিকর। বাংলাদেশ টার্কি বার্ডস ডেভেলপমেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের (বিটিবিডিএ) সভাপতি প্রকৌশলী শাহীন হাওলাদার জানান, টার্কি উৎসব বাংলাদেশে এবারই প্রথম। টার্কি চাষ বাংলাদেশে ধীরে ধীরে বাড়ছে। তবে অধিকাংশ চাষী সঠিকভাবে চাষ করতে পারে না। ফলে তারা ক্ষতির সম্মুক্ষীণ হয়। তাই চাষীদের সচেতনতার জন্যই উৎসবের আয়োজন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. সুবাস চন্দ্র দাস। ঠাকুরগাঁও নিজস্ব সংবাদদাতা ঠাকুরগাঁও থেকে জানান, পোল্ট্রি শিল্পের সীমাহীন লোকসানের মুখে যখন শতাধিক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। ঠিক সে সময়ে কয়েক যুবকের টার্কি নামে বড় আকারের গৃহপালিত পাখি পালন পোল্ট্রি শিল্পকে বাঁচাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তরুণ উদ্যোক্তা মিন্টু, স্বরাজ, ফারুকসহ কয়েকজন খামারি এক বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে টার্কি চাষ শুরু করেছেন। তারা সদর উপজেলার সালান্দর তেলিপাড়া এলাকায় এ টার্কির খামার গড়ে তুলেছেন। বাংলাদেশে কয়েকটি বাণিজ্যিক টার্কি খামার গড়ে তোলা হয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ে এটি প্রথম বাণিজ্যিক খামার। মিন্টু ও স্বরাজ বলেন, টার্কির খাবার নিয়ে মুরগির চেয়ে দুর্ভাবনা কম। এরা ঠা-া-গরম সব সহ্য করতে পারে। দানাদার খাবারের চেয়ে কলমিশাক, বাঁধাকপি বেশি পছন্দ করে। এগুলো যোগাড় করা সহজ। এছাড়া কোন দুর্গন্ধ ছড়ায় না। মিন্টুদের খামারে গিয়ে দেখা যায়, এর নাম দেয়া হয়েছে ‘কুটুম বাড়ি টার্কি ও তিতির খামার’। শুধু টার্কি নয়, তিতির, হরেক রকমের কবুতর ও ফেনসি বার্ডসহ কয়েক জাতের পাখিতে বাড়িটা চিড়িয়াখানা হয়ে গেছে। টার্কির ঘরে ঢুকতেই দলবেঁধে একদিকে দৌড়ে পালাচ্ছে। এ সময় ময়ূরের মতো লেজ ফুলিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে মোরগ টার্কি আর ডাকাডাকিতে ঘর মাথায় তুলছে। অন্যদিকে তিতির ও অন্যান্য পাখি বড় হচ্ছে। মিন্টু ও স্বরাজ বলেন, তাদের উদ্দেশ্য হলো বাণিজ্যিকভাবে মাংস উৎপাদন ও ব্রিডিং করে এ প্রজাতির বংশ বৃদ্ধি করা এবং বাচ্চাগুলো আগ্রহী খামারিদের মাঝে বিতরণ করা। অনেক বেকার এ টার্কি খামার গড়ে তুলে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করতে পারবে।
×