ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের স্বার্থ সবার ওপরে

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬

দেশের স্বার্থ সবার ওপরে

ঢাকার আশুলিয়ায় অর্ধশতাধিক তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। সেসব কারখানার শ্রমিকরা মজুরি বাড়ানোর দাবিতে ধর্মঘটে গেছেন, পক্ষান্তরে মালিকপক্ষ কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। সরকারের একাধিক মন্ত্রী সঙ্কটের সুরাহার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন, কিন্তু পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি ঘটছে না। উৎপাদন বন্ধ রাখা কিংবা কারখানার ক্ষতি করা হলে তার প্রভাব শ্রমিক ও মালিকদের ওপর পড়ে, সার্বিক অর্থনীতিতেও পড়ে। বাংলাদেশের শিল্প ও রফতানি খাতের অন্যতম ভিত হচ্ছে তৈরি পোশাক শিল্প। কর্মসংস্থানেরও প্রধান খাত। নারীর ক্ষমতায়নেও এ শিল্পের অবদান ব্যাপক। আর মাত্র ৫-৬ বছরে এ শিল্প থেকে বছরে ৫০ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ লক্ষ্য অর্জিত হলে মালিক, শ্রমিক সব পক্ষই উপকৃত হবে এবং তাতে দেশেরও কল্যাণ। এরকম একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ছবি যেখানে পাওয়া যাচ্ছে সেখানে হঠাৎ করেই অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়া কোন ষড়যন্ত্রের অংশ কিনা এমন প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়। দেশে সাড়ে পাঁচ হাজারের মতো গার্মেন্টস কারখানা রয়েছে। প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ এসব কারখানায় কর্মরত। অনেক বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও বাংলাদেশে এই খাতটি দ্রুত এগিয়ে চলেছে। সে কারণেই খাতটি অনেকের ঈর্ষার কারণ হয়ে উঠতে পারে। অতীতেও কোন কোন মহল বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতকে অস্থিতিশীল করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র করেছে। ২০১৩ সালের এপ্রিলে রানা প্লাজা ধসের পর ওই বছরের ২৭ জুন জিএসপি স্থগিত করে আমেরিকা। দেশটির বাজারে বাংলাদেশের মোট রফতানি আয় ৫৫০ কোটির ৯০ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক রফতানি থেকে। ফলে জিএসপি স্থগিত হলেও বাংলাদেশের রফতানি আয়ে তেমন কোন প্রভাব পড়েনি, এটা সত্যি। এর প্রভাব ক্রমান্বয়ে মারাত্মক হতে পারে বলে আশঙ্কা গবেষক ও ব্যবসায়ীদের। তার ওপর নিজ দেশেই যদি নতুন করে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয় তাহলে তা অশনি সংকেত বৈকি! সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতির উন্নতি হবে- এই সম্ভাবনায় হঠাৎ করেই মুখথুবড়ে পড়ে ঢালাওভাবে শ্রমিক ধরপাকড়ের ঘটনায়। বুধবার দিনের বেলা একটি গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ ২৪৯ শ্রমিকের বিরুদ্ধে ‘উসকানি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের’ অভিযোগে দুটি মামলা দায়ের করে। এছাড়া বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ১২১ শ্রমিককে সাময়িক বরখাস্ত করে। ওইদিন রাতে আরেকটি কারখানা কর্তৃপক্ষ পাঁচ শতাধিক শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এই দুটি ঘটনা কি স্বাভাবিক! নিয়মবহির্ভূতভাবে হুট করে কারখানার কাজ বন্ধ করে দেয়া যেমন সমর্থনযোগ্য নয়, তেমনি এটাও মনে রাখতে হবে জোরজবরদস্তি করেও কারখানার চাকা সচল রাখা অসম্ভব। তাই শ্রমিক ও মালিকপক্ষের একটি গ্রহণযোগ্য সমঝোতায় আসা ছাড়া কোন বিকল্প রয়েছে কি? শ্রমিক মজুরি বাড়ানোর দাবির সূত্র ধরে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পে অচলাবস্থা বিরাজের বিষয়টি অনভিপ্রেত ও উদ্বেগের। মালিক-শ্রমিক উভয়পক্ষকে মনে রাখতে হবে যে সবকিছুর ওপরে দেশের স্বার্থ। বাংলাদেশ সম্পর্কে বহির্বিশ্বে কোনক্রমেই ভুল বার্তা পৌঁছে দেয়া সমীচীন হবে না। উভয়পক্ষকে বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে সঙ্কট নিরসনের আন্তরিক উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে আলোচনার কোন বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে, উস্কানিদাতার অভাব হবে না, কিন্তু ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান প্রত্যাশিত। সব অপশক্তিকে পরাস্ত করে গার্মেন্টস সেক্টরে সুবাতাস বয়ে আসুক- এটাই দেশবাসীর চাওয়া।
×