ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগকে ১০ দফা

বসতভিটা জমি ঘর ঠিক যেখানে ছিল সেখানটাতেই ফেরত চান সাঁওতালরা

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬

বসতভিটা জমি ঘর ঠিক যেখানে ছিল সেখানটাতেই ফেরত চান সাঁওতালরা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল পল্লীতে হামলা ও উচ্ছেদের ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতি উত্তরণে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের নেতারা পুরনো বসতভিটা ফেরত প্রদানসহ ১০দফা প্রস্তাব দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে। নেতারা বলেছেন, সাঁওতালরা তাদের পল্লীর বাইরে থাকার কথা ভাবছেন না। যেখানে সাঁওতালদের বসতবাড়ি ও জমি-ঘর ছিল- ঠিক সেই জায়গাটিই ফেরত চান তারা। শুক্রবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানম-ির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় বৈঠকে এসব কথা বলেন সাঁওতাল নেতারা। জাতীয় আদিবাসী পরিষদ ও সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির ব্যানারে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের সাত নেতা এই বৈঠকে যোগ দেন। প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তারা। সাঁওতালদের পক্ষে দেয়া দুই সংগঠনের দশ দফা প্রস্তাবের মধ্যে আরও রয়েছে, ওই ঘটনায় গ্রেফতার সাঁওতালদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মামলা প্রত্যাহার ও হয়রানি বন্ধ, নষ্ট করা ক্ষেতের ফসল ও পুকুরের মাছের ক্ষতিপূরণ প্রদান, নিহত-আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন, পুড়ে যাওয়া বাসস্থান, স্কুল ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তৈরি করে দেয়া, ফার্ম এলাকার আদিবাসীদের বসতঘেঁষা কাঁটাতারের বেড়া তুলে দেয়া, হামলার পরিকল্পনাকারী, ইন্ধনদাতা ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণসহ দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসা, পক্ষপাতদুষ্ট গোবিন্দগঞ্জের ইউএনও ও ওসিকে প্রত্যাহার ও শাস্তি প্রদান, সাঁওতালদের বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগকারী পুলিশ ও নির্দেশদাতাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্মের জমি অধিগ্রহণের শর্ত ভঙ্গ করে ইজারা দেয়ায় রংপুর চিনিকল মিল কর্তৃপক্ষের অবৈধ কাজ ও দুর্নীতির তদন্ত করা। বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের পক্ষে কোন বক্তব্য দেয়া হয়নি। তবে বৈঠক সূত্র জানায়, সেখানে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৈঠকে উপস্থিত সাঁওতাল নেতাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন ভাল শাসক। তাঁর চেয়ে আপন আপনারা অন্য কাউকে পাবেন না। আমাদের সকলকে একটু একটু ছাড় দিতে হবে। আপনাদের যেমন সমস্যা আছে। আমাদেরও তেমন সমস্যা আছে। আপনারা যদি মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন শেখ হাসিনার সরকার আপনাদের আপন। তাহলে নেত্রীর উপর বিষয়টি ছেড়ে দেন। আপনাদের (সাঁওতাল) আমরা সবাই ছেড়ে গেলেও শেখ হাসিনা ছেড়ে যাবেন না। তবে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লীতে হামলার পর সেখানকার সাম্প্রতিক ও সর্বশেষ পরস্থিতি পর্যালোচনা করে আওয়ামী লীগের কাছে ১০ দফা করণীয় তুলে ধরেছেন তারা। সরকার উচ্ছেদের শিকার সাঁওতালদের গুচ্ছগ্রামে পুনর্বাসনের প্রস্তাব দিলেও তারা গুচ্ছগ্রামে থাকতে অভ্যস্ত নন। কেননা যে জমি থেকে সাঁওতাল আদিবাসীদের উচ্ছেদ করা হয়েছে, সেখানে তাদের পূর্বপুরুষদের সমাধিসৌধ, উপাসনালয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা স্মৃতি চিহ্ন রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা আমাদের দাবি-দাওয়া পেশ করেছি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে এর সমাধান করার আশ^াসও দিয়েছেন। তবে তার কথায় আশ্বস্ত হলে তখনই স্বস্তি পাব, যখন দেখব ওই ঘটনায় গ্রেফতারকৃত নিরীহ সাঁওতালদের মুক্তি দেয়া হয়েছে, মামলাও প্রত্যাহার করা হয়েছে। আর্থিকভাবে সরকার সহায়তাও করছে তখনি। বৈঠকে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সহ-সভাপতি ফিলিমন বাস্কে, লরেন্স বেসেরা, গণেশ মুরমু, প্রভাত টুডু, মানিক সরেন, শাহজাহান আলী এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দিপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×