ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

লক্ষ্মীপুরে আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু তিন দিনের ইজতেমা

প্রকাশিত: ০১:৫৪, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬

লক্ষ্মীপুরে আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু তিন দিনের ইজতেমা

নিজস্ব সংবাদদাতা, লক্ষ্মীপুর ॥ লক্ষ্মীপুরে শুরু হয়েছে জেলা ভিত্তিক ৩ দিন ব্যাপী আঞ্চলিক বিশ্ব ইজতেমা। শুক্রবার সদর উপজেলার সুতার গোপ্টা এলাকায় জুমার নামাজের পর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ ইজতেমা। ২৭ একর জমির ওপর সাড়ে ৯ লাখ বর্গফুটের মাঠে তাবলীগ জামাতের প্রায় ৩ লাখ মুসল্লী অংশ নেয়। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত পাকিস্তানসহ বিদেশী ২০জন তাবলীগ জামাতের মুরব্বী এতে বয়ান করবেন। ইজতেমায় জুমার খুতবা পাঠ করেন, ঢাকাস্থ কাকরাইল জামে মসজিদের খতীব মাওলানা যোবাইর হোছাইন। আছর পর্যন্ত বিরতি দিয়ে আবার শুরু হয় বয়ান। বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের পাশাপাশি মাঠের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে লাগানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। এ দিকে শুক্রবার আবারও ইজতেমা ময়দান পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী, পুলিশ সুপার আ স ম মাহাতাব উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) শরীফুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, ভবানীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল হাসান রনি সহ আরো অনেকে। তবে মাঠে সার্বক্ষনিক অবস্থান নিয়েছেন লক্ষ্মীপুর পৌরসভা চেয়ারম্যান বিশিষ্ট, মুক্তিযোদ্ধা মো. আবু তাহের। পুলিশ সুপার আ.স.ম মাহাতাব উদ্দিন জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে রয়েছে তিনস্তরের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ছয়’শ পোশাকধারী পুলিশ ছাড়াও গেইট সহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। যানজট নিরসনে রয়েছে ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সর্বপরি ইজতেমা সফল করতে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা করেছে। নিরাপত্তা পর্যবেক্ষনের জন্য ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী জানান, প্রশানের পক্ষে যা যা করার সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তার জন্য সর্ব্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে তাঁরা আমাদের কাছ থেকে কোনো কিছু চায়নি, সবকিছুই তাঁরা করছেন। পুলিশ, র‌্যাবসহ অন্যান্য আইন শৃংখলা বাহিনী সব্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে। রবিবার সকালে আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে তিনদিন ব্যাপী এ আঞ্চলিক বিশ^ ইজতেমা। প্রথম দিনেই ছিলো উপচে পড়া লাখো মুসল্লিদের ভীড়। ইজতেমার মাঠে দায়িত্বপ্রাপ্ত মুরুব্বী শাহ মো. এমরান জানান, ইজতেমায় অংশগ্রহন কারীগের পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য এতে বিভিন্ন ভাগে প্রায় এক হাজার থেকে ১২’শ টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। তাছাড়া রয়েছে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানির ট্যাংক, লাখো লোকের ওযুর জন্য ট্যাপ এবং গোসল করার জন্য ময়দানের চতুর্দিকে ১০টি পুকুরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বয়ান শুনার জন্য ১০০ এর বেশী মাইক স্থাপন করা হয়েছে। এতে মূল বয়ান করবেন, ঢাকাস্থ কাকরাইল জামে মসজিদের খতিব মওলানা জোবায়ের আহম্মদ। বয়ান শুনার জন্য ১০০ এর বেশী মাইক স্থাপন করা হয়েছে। তাবলীগ জামায়াতের লক্ষ্মীপুর জেলা আমীর অধ্যক্ষ প্রফেসর আলী মুর্শেদ জানান, ইজতেমায় দেশের খ্যাতিমান ব্যক্তিসহ বিদেশী ২০জন মেহমান এতে অংশগ্রহন করছেন। ইজতেমার প্যান্ডেলে এক লাখ মুসল্লি অবস্থান করতে পারবেন। তবে পাঁচ লাখেরও বেশী লোকের সমাগম হবে বলে ইজতেমার মুরুব্বীরা জানান। তাদের সুযোগ সুবিধার জন্য সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। জেলার ৫টি উপজেলা সহ প্রতিবেশী জেলা গুলো থেকে দলে দলে মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেছে। ইজতেমায় আগত অসুস্থ মুসুল্লিদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, যুবলীগ, রওশন জাহান ইস্টার্ণ মেডিকেল ও হাসপাতাল, রেড ক্রিসেন্ট এর পক্ষ থেকে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প বসানো হয়েছে। এ ছাড়াও মুসুল্লিদের সার্বিক সহযোগিতায় বেশ ক’টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বেচ্ছায় নিয়োজিত রয়েছে। বিদ্যুৎ সরবাহের জন্য তিনটি ২৪ মেগাওয়াটের জেনারেটর স্থাপন করা হয়েছে জানিয়েছেন, পল্লী বিদ্যুতের জিএম শাহজাহান কবির। বসানো হয়েছে, অস্থায়ী মোবাইল টাওয়ার। ইতিমধ্যে সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ইজতেমার স্থলে মুসল্লিরা ইতোমধ্যে আসতে শুরু করেছে। ইজতেমাকে ঘিরে সেখানে অস্থায়ী হোটেল রেস্তেÍারা, দেশীয় বিভিন্ন পন্যের ষ্টল বসেছে কয়েক’শ। ইজতেমা সফল করার জন্য স্বেচ্ছায় শ্রম দিচ্ছেন স্থানীয়রা সহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। ইজতেমায় আসা মুসুল্লিদের বিশ্বাস এখানে এসে মেহনত আর দ্বীনী দাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং রাসূল (সাঃ) কে অনুসরণ করে পরকালে নাযাত লাভ করতে পারবে। জেলা ভিত্তিক ইজতেমা অনুষ্ঠিত হওয়ায় মুসুল্লিরা সু-শৃঙ্খলভাবে শান্তিতে এই তিন দিন ইজতেমা ময়দানে অবস্থান করতে পারবেন বলে প্রত্যাশা করছেন আগত মুসুল্লিরা।
×