ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফের বাধা, বড়দিনে শীতের আশা ক্ষীণ

প্রকাশিত: ২০:৩৫, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬

ফের বাধা, বড়দিনে শীতের আশা ক্ষীণ

অনলাইন ডেস্ক ॥ ‘নাডা’ এবং ‘ভারদা’, চলতি মাসের গোড়াতেই পরপর দু’টি ঘূর্ণিঝড়ের চোখরাঙানি ছিল। সেই কাঁটা ঠেলেই হাজির হয়েছিল শীত। কিন্তু নতুন প্রাকৃতিক বাধা তাকে থিতু হতে দিচ্ছে না। বরং বড়দিনের আগে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আরও বেড়ে যাওয়ারই ইঙ্গিত মিলছে। এতটাই যে, বড়দিনে জব্বর শীতের আশা তলানিতে ঠেকেছে। পৌষের প্রথম সপ্তাহ পেরিয়ে গিয়েছে। হরেক শাকসব্জি, নলেন গুড়, কমলালেবুতে ছেয়ে গিয়েছে বাজার। ধর্মতলা, নিউ মার্কেট চত্বরের ফুটপাথে রংবাহারি সোয়েটার, মাফলার, টুপির ঢল। বড়দিনের কেক, ক্রিসমাস ট্রি, সান্তাটুপির পসরায় আলো হয়ে আছে বাজার। অর্থাৎ সব সঙ্গীই হাজির। শুধু সে নিজেই যে রীতিমতো ঝিমিয়ে! সে অর্থাৎ শীত বিনা সব আয়োজনই যেন পানসে!! আবহাওয়ার মতিগতি দেখে কোনও আশ্বাসবাণী শোনাতে পারছে না আলিপুর আবহাওয়া দফতর। সেখানকার অধিকর্তা গণেশকুমার দাসের কথায়, ‘‘বড়দিনের চেনা শীত এ বার বোধ হয় মিলবে না।’’ ডিসেম্বরের শুরুতেই ঘূর্ণিঝড়ের ধাক্কায় বিপাকে পড়ে গিয়েছিল শীত। তবে সেই বাধা কাটিয়ে ধীরে ধীরে জুড়ে বসছিল সে। তৃতীয় সপ্তাহের পারদ-পতনে তার দাপটের ইঙ্গিত ছিল ষোলো আনা। জেলাগুলিতে রাতের তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ধারেকাছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমছিল খাস কলকাতাতেও। কিন্তু আচমকাই শীতের সেই আগমনি দাপট উধাও। বৃহস্পতিবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা উঠে গিয়েছে ১৪.৭ ডিগ্রিতে, যা এই সময়ের স্বাভাবিকের থেকে এক ডিগ্রি বেশি। হাওয়া অফিসের খবর, জেলাগুলিতেও শীতের কামড় নেই বললেই চলে। শ্রীনিকেতন, বাঁকুড়া, আসানসোলের মতো পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতেও শীতের জারিজুরি তেমন নেই। ওই সব জায়গায় রাতের তাপমাত্রা ১১-১২ ডিগ্রির আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে। কলকাতার তুলনায় সেখানে শীত একটু বেশি মালুম হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু সাধারণ ভাবে পৌষের প্রথমে ওই সব জায়গায় শীতের যে-কামড় থাকে, তার নিরিখে এ বার সে অনেক ম্রিয়মাণ। কনকনে ভাবটাই নেই। দেখা দিয়েও কোথায় গেল শীত? ডিসেম্বরের শেষে এসেও শীতের মেজাজে এখনও ভাটার টান কেন? হাওয়া অফিসের আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, পৌষে স্বাভাবিক দাপটের বদলে শীতের এ ভাবে মুষড়ে পড়ার মূলে আছে কয়েকটি প্রাকৃতিক প্রবণতা। শীতকে শক্তি জোগায় মূলত পশ্চিমি ঝঞ্ঝা আর হিমালয়ের তুষারপাত। কিন্তু গত কয়েক দিনে কাশ্মীরে কোনও রকম জোরালো পশ্চিমি ঝঞ্ঝা আছড়ে পড়েনি। ফলে সেখানে তুষারপাতও হচ্ছে না। উত্তুরে হাওয়ার জোরটাও কমে গিয়েছে। এর মধ্যে ত্রিপুরার উপরে থাকা একটি ঘূর্ণাবর্তের টানে জোলো হাওয়া ঢুকে পড়েছে পরিবেশে। ফলে আরও আটকে যাচ্ছে উত্তুরে হাওয়া। দিল্লির মৌসম ভবনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এখন আশা বলতে উত্তর পাকিস্তানের উপরে থাকা একটি ঝঞ্ঝা। ‘‘ওই ঝঞ্ঝা যদি তুষারপাত ঘটাতে না-পারে, তা হলে কনকনে শীত পড়ার আশা কম,’’ মন্তব্য এক আবহবিজ্ঞানীর। আবহবিদদের একাংশ জানাচ্ছেন, উত্তুরে হাওয়াকে ঠেলে ঢোকানো এবং শীতকে থিতু করে দেওয়ার জন্য মধ্য ভারতে উচ্চচাপ বলয় (একটি নির্দিষ্ট এলাকার বায়ুর চাপ আশপাশের এলাকার থেকে বেশি হয়) প্রয়োজন। কিন্তু সেই বলয় এখন নেই। এই পরিস্থিতিতে আসন্ন বড়দিনে জোরালো ঠান্ডা তো নয়ই। ডিসেম্বরে শীতের থিতু হওয়ার আশাও তেমন নেই বলে মনে করছেন আবহাওয়া দফতরের কর্তারা। তাঁদের মতে, দুর্বল উত্তুরে হাওয়া এবং সাগর থেকে ঢুকে পড়া জোলো হাওয়ার অসম টক্করে শীতের কপালে বেশ দুঃখ রয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×