ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বপ্নীল মাহফুজ

অদ্ভুত জাদুঘর

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬

অদ্ভুত জাদুঘর

জাদুঘরের সঙ্গে আমরা প্রায় সবাই পরিচিত। ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্পসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি পরিচিত করাতে বিশ্বের সবদেশেই বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামূলক জাদুঘর যেমন রয়েছে, তেমনি বিশ্বের অনেক দেশে আবার ব্যক্তিগত উদ্যোগে রয়েছে অদ্ভুত ও উদ্ভট বিষয়াদির জাদুঘর। যেমন তেলাপোকার জাদুঘর, পুতুলের জাদুঘর, পোড়া খাবারের জাদুঘর প্রভৃতি। আজ আপনাদের জানাব এ ধরনেরই অদ্ভুত একটি জাদুঘর সম্পর্কে। মিউজিয়াম অব ব্রোকেন রিলেশনশিপ অর্থাৎ ভাঙা সম্পর্কের জাদুঘর। ভেঙে যাওয়া সম্পর্কের ফেলে যাওয়া স্মৃতির সংরক্ষণ নিয়েই এই জাদুঘর। সবার জীবনে ভালবাসা শুভ পরিণয় পায় না। আবার কারও কারও পরিণয় হলেও বিভিন্ন কারণে ভেঙে যায় সম্পর্ক। রয়ে যায় অসংখ্য স্মৃতি। কখনও সেই স্মৃতির সাক্ষী হয় নানা বস্তু। হতে পারে তা প্রিয়জনের দেয়া উপহার কিংবা দুজনের একসঙ্গে গিয়ে কিনে আনা কোন আসবাবপত্র। এমন অনেক বস্তুই থেকে যায়। থাকে না সেই সুন্দর সম্পর্কটি। এ কথা চিন্তা করেই ক্রোয়েশিয়ার জাগ্রেব শহরে গড়ে তোলা হয়েছে মিউজিয়াম অব ব্রোকেন রিলেশনশিপ। ২০০৬ সালের দিকে এই জাদুঘর তৈরির পরিকল্পনা করেন দুই ক্রোয়েশিয়ান ওলিনকা ভিটিকা ও ড্রাফেন গ্রুবিটিক। ভেঙে যাওয়া সম্পর্কের ফেলে যাওয়া নানা কিছু সংগ্রহের ক্ষেত্রে তারা বলতে থাকেন পরিচিত সব বন্ধু-বান্ধবদের। সংগ্রহ বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে পুরো পরিকল্পনাটি এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে ২০১০ সালের দিকে নিজেদের জন্য একটা পাকাপোক্ত স্থান ঠিক করে ফেলেন এই দুজন আর স্থাপন করেন মিউজিয়াম অব ব্রোকেন রিলেশনশিপ বা ভেঙে যাওয়া সম্পর্কের জাদুঘর। বর্তমানে প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার দর্শনার্থী আসে জাদুঘরটি দেখতে এবং এখনও পর্যন্ত জাগ্রেব শহরের একমাত্র ব্যক্তিগত মালিকানার জাদুঘর হিসেবে নিজেদের কাজ বেশ ভালভাবেই চালিয়ে যাচ্ছে এটি। কি নেই এখানে? খুব ব্যক্তিগত আর আবেগপূর্ণ চিঠি, ভালবাসায় ভরপুর অর্ধেক ছেঁড়া ছবি, পুতুল, বিয়ের পোশাক, অন্তর্বাস- এখানে গেলে আপনি দেখতে পাবেন এ রকম প্রায় কয়েক শ’ রকমের জিনিস। যার আবার রয়েছে নানা রকম ও নানা ধরনের বিভাগ। আর সেটা করা হয়েছে সম্পর্কের ধরন আর মেয়াদের ভিত্তিতে। এর অনেকগুলো হাসির হলেও বেশিরভাগই কষ্টের স্মৃতি বহন করছে। যেমন- একজোড়া ফিতার পাশে এটা লেখা আছে, ‘আমি কখনও এগুলোকে পরিনি। যদি পরতাম তাহলে হয়ত আমাদের সম্পর্ক আরও বেশিদিন টিকত।’ ২০১১ সালে জাদুঘরটি ইউরোপীয়ান মিউজিয়াম এ্যাওয়ার্ডসে সবচেয়ে উদ্ভাবনী জাদুঘর হওয়ার স্বীকৃতি পায়। ২০১৬ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের লস এ্যাঞ্জেলসে এই জাদুঘরটি নতুন আরেকটি শাখা স্থাপন করা হয়েছে।
×