ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মীম নোশিন নাওয়াল খান

তারা জ্বলা আলোর পথ

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬

তারা জ্বলা আলোর পথ

রাতের আকাশে তাকালেই চোখে পড়ে ছোট ছোট জ্বলজ্বলে তারা। আচ্ছা ভাবুন তো, কেমন হবে এই তারাগুলো যদি পৃথিবীতে নেমে আসে? ধরুন, অমাবস্যা রাত। রাস্তার দুপাশের ল্যাম্পপোস্টের বাতি জ্বলছে না। অন্ধকার রাস্তা দিয়ে কীভাবে বাড়ি যাবেন সেই চিন্তায় যখন আপনি হিমশিম খাচ্ছেন, ঠিক তখনই আকাশ থেকে নেমে এলো এক ঝাঁক তারা। তারাগুলো সোজা মিশে গেল রাস্তার গায়ে। আর রাস্তাটাও হয়ে উঠল আলোকিত। কেমন হবে ব্যাপারটা? অবিশ্বাস্য! হ্যাঁ, এমন একটা গল্প শুনলে এই শব্দটাই সবচেয়ে আগে মাথায় আসে। এই গল্পটা কাল্পনিক হলেও রাস্তার গায়ে তারা জ্বলার ব্যাপারটা কিন্তু মোটেও কাল্পনিক নয়। ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজে রয়েছে এমন তারা জ্বলজ্বলে রাস্তা। এই রাস্তা দিয়ে রাতে হেঁটে যাওয়ার সময় রাস্তাজুড়ে মিটিমিটি নীলচে আলো জ্বলে। এজন্যই একে বলা হয় তারা জ্বলাপথ, বা স্টারপাথ। অদ্ভুত মায়াবী আর সুন্দর এইপথ ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় যে কেউ ভাবতেই পারেন, হেঁটে যাচ্ছেন স্বর্গের দিকে। স্টারপাথ প্রকৃতির কোন অমীমাংসিত রহস্য নয়। প্রোটেক নামক এক প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়নে প্রথম তৈরি হয় এই তারা জ্বলা আলোর রাস্তা। ক্যামব্রিজের ক্রাইস্টস পিসেস পার্কে প্রথম এমন পথ তৈরি করা হয়। এটা মূলত বিজ্ঞানের কারসাজি। এক ধরনের বিশেষ পদ্ধতিতে প্রোটেক কোম্পানি এই রাস্তা তৈরি করেছে। তারা মূলত রাস্তার ওপর বিভিন্ন পদার্থের একটি মিশ্রণ ছড়িয়ে দিয়েছে, যা রাতে পথটিকে আলোকিত করে। এই মিশ্রণকে বলা হয় ফটোলুমিনসেন্ট স্প্রে। এটি দিনের বেলায় ইউভি রশ্মি শুষে নেয় এবং তা ব্যবহার করে রাতের বেলায় জ্বলজ্বল করে। এই পদ্ধতির উদ্ভাবক প্রোটেক কোম্পানির স্বত্বাধিকারী হ্যামিশ স্কট। তার মাথা থেকেই পৃথিবীর রাস্তায় আকাশের তারা নামিয়ে আনার বুদ্ধিটা আসে। তিনি বলেন, এটি এমন একটি পদ্ধতি যা পরিবেশবান্ধব, আর এতে শক্তির অপচয় হয় না। মূলত শক্তির অপচয় রোধের ভাবনা থেকেই স্টারপাথ উদ্ভাবক করেন হ্যামিশ স্কট। তার কাছে মনে হয়েছিল, রাতে রাস্তাগুলোকে আলোকিত করতে যে পরিমাণ বিদ্যুত খরচ হয়, তা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব ফটোলুমিনসেন্ট স্প্রে ব্যবহার করে। এতে করে রাস্তার সৌন্দর্যে আলাদা মাত্রা যোগ হবে, আর রাস্তাও আলোকিত থাকবে। আলাদা করে কোন শক্তি অপচয় হবে না। এই চিন্তা থেকেই তিনি রাস্তার ওপরে ফটোলুমিনসেন্ট স্প্রে দেয়ার কথা ভাবেন। এই পদ্ধতিতে যেহেতু ল্যাম্পপোস্ট ছাড়াই রাস্তা আলোকিত করা হচ্ছে, তাই উদ্ভাবনের শুরুতে একে তখন বলা হচ্ছিল ভবিষ্যতের রাস্তা আলোকিত করার পদ্ধতি। আর ক্যামব্রিজে ক্রাইস্টস পিসেস পার্কের রাস্তাটিকে বলা হচ্ছিল ভবিষ্যতের রাস্তা। বর্তমানে হ্যামিশ স্কটের প্রোটেক কোম্পানি ফটোলুমিনসেন্ট স্প্রে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করছে। ২৫ কেজির একটি কন্টেইনারে এই স্প্রে পাওয়া যায়। রাস্তার ওপর ছড়িয়ে দেয়ার ৩ মিনিটের মধ্যেই এটি রাস্তার সঙ্গে মিশে যায়। আর মিশে যাওয়ার ৪ ঘণ্টা পর থেকেই স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারে যানবাহন ও পথচারীরা। হ্যামিশ স্কটের এই স্টারলাইট পদ্ধতি ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন ফটোলুমিনসেন্ট স্প্রে কিনতে। প্রোটেক কোম্পানির মতে এই প্রযুক্তি নিয়ে সবার অনেক বেশি আগ্রহের কারণ হচ্ছে এটি পরিবেশবান্ধব, স্বল্প খরচ ও আকর্ষণীয়। বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে রাস্তার বাতি নিভে গেলেও এই আলো জ্বলতেই থাকবে। এটির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আলাদা করে কিছু করার প্রয়োজন হয় না। একবার রাস্তার ওপরে মিশ্রণটি ছড়িয়ে দেয়ার পর নেই কোন বাড়তি খরচও। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষ ঝুঁকে পড়েছে স্টারপাথের প্রতি। স্বর্গ কোথায় তা কেউ বলতে পারে না। কিন্তু স্বর্গে যাওয়ার একটা অনুভূতি যদি পেতে চান, হেঁটে আসুন স্টারপাথ থেকে। প্রতিটা পা ফেলার সঙ্গে সঙ্গে মনে হবে, একধাপ এগিয়ে যাচ্ছেন স্বর্গের কাছাকাছি।
×