ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আকিল জামান ইনু

দরিদ্র ৯ মার্কিন প্রেসিডেন্ট

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬

দরিদ্র ৯ মার্কিন প্রেসিডেন্ট

কোন সন্দেহ নেই যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদটি কঠোর পরিশ্রমের, একই সঙ্গে থ্যাঙ্কলেস জব। রিচার্ড নিক্সন বলেছেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার চাইতে মেঝে ঘষা আর বেডপ্যান পরিষ্কারও অনেক সম্মানজনক।’ তবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুবিধাও কিন্তু কম নয়। বেশিরভাগ মার্কিন প্রেসিডেন্টই আর্থিকভাবে ছিলেন সচ্ছল। যাদের গড় সম্পদ ৬২ মিলিয়ন ডলার, যা সাধারণ আমেরিকানের চেয়ে ২০০ গুণ বেশি। সম্প্রতি ওয়াল স্ট্রিট মার্কিন প্রেসিডেন্টদের সম্পদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। তারা ঐতিহাসিক রেকর্ড ঘেঁটে প্রত্যেক প্রেসিডেন্টের সম্পদের মূল্যমান যাচাই করে। তালিকায় দেখা যায় মার্কিন প্রেসিডেন্টদের এই সম্পদ মানের উত্থান-পতন বেশ নাটকীয়। অনেকেই হোয়াইট হাউসে প্রবেশের পূর্বে ভাগ্য গড়েছেন। আবার কেউবা অল্প সম্পদের মালিক হয়ে হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করার পর বই লিখে আর লেকচার দিয়ে বিপুল বিত্তের অধিকারী হয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে ২০১০-এর আর্থিক মূল্যমান অনুযায়ী যাদের মোট সম্পদের অর্থ মূল্য ১ মিলিয়ন ডলারের কম তাদের বলা হচ্ছে দরিদ্রতম মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আর গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড আলাদা করে দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় তালিকায় ৪৪ জনের বদলে ৪৩ জনকে বিবেচনা করা হয়। শপথ গ্রহণ না করায় কেনেডির পর একমাত্র বিলিওনিয়ার ও নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিবেচনায় আসেননি। আসুন জেনে নেই দরিদ্র নয়জন মার্কিন প্রেসিডেন্টের গল্প। জেমস বুচানন ডেমোক্র্যাট বুচানন ১৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ১৮৫৭-১৮৬১ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধের ঠিক আগে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। পেনসিলভেনিয়া থেকে হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ও সিনেটে দায়িত্ব পালন করেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে। যুক্তরাজ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনকালীন ‘অস্টেন্ড ম্যানিফেস্টো’ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বুচানন। আব্রাহাম লিংকন রিপাবলিকান আব্রাহাম লিংকন ১৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ১৮৬৫ সালের ১৫ এপ্রিল আততায়ীর হাতে নিহত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন তিনি। দাসপ্রথার বিলুপ্তি আর নতুন আমেরিকা গঠনে তার ভূমিকা তাকে ঠাঁই করে দিয়েছে মার্কিন রাষ্ট্রপতিদের মধ্যে শীর্ষে অথবা জর্জ ওয়াশিংটনের সমান্তরালে। তার গেটিসবার্গের ভাষণ বিবেচনা করা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি শ্রুত ও পঠিত ভাষণ এবং সাম্য, স্বাধীনতা আর গণতন্ত্রের দিকনির্দেশনা বলে। মার্কিন সংবিধানে ১৩তম সংশোধনীর মাধ্যমে দাসপ্রথার চিরতরে বিলুপ্তি তার একক অবদান বলে স্বীকৃত। ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতা নিয়ে তিনিই মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা। যদিও দরিদ্রতম তালিকায় তার অবস্থান দ্বিতীয়। এ্যান্ড্রু জনসন দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া জনসনের কর্মজীবন শুরু শিক্ষানবীশ টেইলর হিসাবে। ডেমোক্র্যাট এ্যান্ড্রু জনসন ন্যাশনাল ইউনিয়নের টিকেটে লিংকনের রানিংমেট হিসাবে ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। আততায়ীর হাতে লিংকন নিহত হলে ১৭তম প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহন করেন তিনি। জনসনই প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি হাউস অফ রিপ্রেজেনন্টেটিভে ইমপিচমেন্টের শিকার হয়েও মাত্র ১ ভোটের ব্যবধানে সিনেটে রক্ষা পান। ইউলেসিস গ্রান্ট ইউলেসিস গ্র্যান্ট ছিলেন ৬ষ্ঠ কমান্ডিং জেনারেল অফ ইউনাইটেড স্টেট আর্মি। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৮তম প্রেসিডেন্ট। সংকটকালীন সময়ে দায়িত্ব পালন করে যুক্তরাষ্ট্রকে ঐক্যবদ্ধ রাখায় তার ভূমিকা ঐতিহাসিক। তার চাইতেও বেশি জননন্দিত ছিলেন আমেরিকান সিভিল ওয়ারে তার বীরত্বের জন্য। দারিদ্র্য কখনও পিছু ছাড়েনি তার। মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে দরিদ্রতমদের তালিকায় তার অবস্থান চতুর্থ। জেমস গারফিল্ড জেমস আব্রাহাম গারফিল্ড সাবেক মেজর জেনারেল। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ২০তম প্রেসিডেন্ট। ৪ মার্চ ১৮৮১ সালে তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ৪৯ বছর বয়সে আততায়ীর হাতে নিহত হন এই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট। চেস্টার এ আর্থার তিনি পরিচিত ছিলেন ‘নিউ ইয়র্ক’স রিপাবলিকান পলিটিক্যাল মেশিন’ বলে। চেস্টার এ আর্থার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২১তম প্রেসিডেন্ট। গারফিল্ড আততায়ীর হাতে নিহত হলে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সিভিল সার্ভিস পুনর্গঠনে তার অবদান অপরিসীম যা আজও পরিচিত ‘পেনডালটন সিভিল সার্ভিস রিফর্ম এ্যাক্ট’ নামে। উড্রো ইউলসন ১৯১৩ থেকে ১৯২১ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ২৮তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। মূলত শিক্ষাবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে জন হপকিনস ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টরেট ডিগ্রীধারী এই ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টের দ্বিতীয় মেয়াদে শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। বিশ্বকে গণতন্ত্রের জন্য নিরাপদরূপে গড়ে তুলতে তিনি কংগ্রেসে যুদ্ধে যোগদানের প্রস্তাব করেন। ১৯১৮-এর গ্রীষ্মে প্রতিদিন ফ্রান্সে ১০ হাজার সৈন্য প্রেরণ করেন। তহবিল সংগ্রহ করেন বিলিয়নস অফ ডলার লির্বাটি বন্ড বিক্রি করে। তবে নিজের আর্থিক ভাগ্যের তেমন উন্নতি ঘটেনি। দরিদ্রদের মধ্যে তার অবস্থান সপ্তম। কেলভিন কলডিজ ওয়ারেন হার্ডিংয়ের আকস্মিক মৃত্যুতে ভাইস প্রেসিডেন্ট কেলভিন কলডিজ ১৯২৩ এ প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯২৪ এ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ৩০তম প্রেসিডেন্ট । রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্টের পরিচিত কম কথা, বেশি কাজ ও তার রসবোধের জন্য। তাকে বলা হতো ম্যান অফ এ্যাকশন। হ্যারি এস ট্রুমান মডারেট ডেমোক্র্যাট বলে পরিচিত। হ্যারি এস ট্রুমান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ মাসে রুজভেল্টের মৃত্যুর পর ৩৩তম মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। মেয়াদকাল ১৯৪৫-৫৩। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তার মার্শাল প্ল্যান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তার হাত ধরে নতুন রূপ পায় স্নায়ুযুদ্ধ। দরিদ্র প্রেসিডেন্টদের মধ্যে তার অবস্থান নবম।
×