ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নাজনীন বেগম

আউং সান সুচি নির্বিকার

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬

আউং সান সুচি নির্বিকার

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নির্বিচারে হত্যা, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং অসহায় নারী ও শিশুদের যে পরিমাণ নির্যাতন এবং নিপীড়ন চালানো হচ্ছে তা যেমন মানবেতর একইভাবে সভ্যতা-বিবর্জিত। মানুষ মানুষের জন্য এই মর্মবাণী আজ ধুলায় লুণ্ঠিত হচ্ছে। নিরুপায় এবং আক্রান্ত, গৃহছাড়া রোহিঙ্গারা আজ দেশ ছাড়তেও বাধ্য হচ্ছে। বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সীমান্ত এলাকা দিয়েই এসব বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা অভিবাসীরা দলে দলে প্রবেশ করছে। বিব্রতকর অবস্থায় আমাদের রাষ্ট্র ও সরকার। তার পরেও শরণার্থী শিবির খুলে অনিশ্চিতের পথে ঠেলে দেয়া এদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব গৃহহীন, আশ্রয়হীন মানুষের যথার্থ গন্তব্য কোথায় সে প্রশ্নের উত্তর আসলেই কারও জানা নেই। সবচেয়ে বিস্ময়কর যা তাহলো গণতান্ত্রিক, নির্বাচিত সরকার এই জঘন্য নৃশংসতাকে যেভাবেই হোক সমর্থন করে যাচ্ছে। নারীদের ওপর যে অকথ্য নিষ্ঠুরতা চলছে তার ব্যাপারে আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে সে দেশের নারী নেত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আউং সান সুচির নীরব দর্শকের ভূমিকা। নোবেল বিজয়ী এই নেতার সমৃদ্ধ এক রাজনৈতিক ঐতিহ্য আছে যা তাকে আজকের এই পর্যায়ে এনে দাঁড় করায়। দীর্ঘ সেনাশাসন ও সেনাসমর্থিত শাসনের বিলুপ্তি ঘটিয়ে মিয়ানমারের নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার যেভাবে অগণতান্ত্রিক উপায়ে মুসলমান রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ-উন্মত্ততায় মেতেছে তা সত্যিই লজ্জাকর এবং দুঃখজনক। আর নোবেল বিজয়ী সুচি তো নারী হয়েও নারী-নিপীড়নের বিরুদ্ধে কোন উচ্চবাচ্য করছেন না; গুরুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্র দফতার হাতে থাকার পরও তিনি তার দেশের রোহিঙ্গাদের এভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশে বাধ্য করার বিষয়েও কোন মন্তব্য করেননি। দায়িত্ব অবহেলা তো বটেই, তার নোবেল অর্জনও আজ প্রশ্নবিদ্ধ। শান্তির জন্য নোবেল বিজয়ী এই নারী নেত্রী রাখাইন এলাকায় এই অশান্তির আগুন নিভানোর জন্য এক পাও এগিয়ে আসলেন না। সেটা কি শুধু ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য নাকি সাম্প্রদায়িক চেতনা? মুসলিম বিদ্বেষের নজির এর আগেও মিয়ানমারে ঘটেছে। ২০১২ সালে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের নিপীড়নের শিকার হয়ে এক লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাস্তুহারা দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছে। বাংলাদেশসহ তাবত বিশ্ব সুচির এই নির্বিকার নিরুদ্বেগ মানসিকতায় বিস্মিত হচ্ছেÑ শান্তির জন্য তার ভূমিকা আজ প্রশ্নর মুখোমুখি। যে কোন সংঘাত-সংঘর্ষে নারী নির্যাতন একটি আবশ্যকীয় শর্ত হিসেবে অনিবার্যভাবেই এসে যায়। মুসলমান অধ্যুষিত রাখাইন এলাকার এই সহিংস ঘটনাও নারী নিপীড়নের লোমহর্ষক ভূমিকার ব্যাপারে ব্যত্যয় কিছু দেখাতে পারল না। বিদেশ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ অবস্থানে থেকেও সুচি এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ এবং নারীদের সম্ভ্রহানিতার বিরুদ্ধে কোন কথাই কেন বলতে পারছেন না সেটা আজ সবাইর প্রশ্ন। এই নিগৃহীতা, লাঞ্ছিতা নারীদের ভাবী জীবন কিভাবে গড়ে উঠবে সে জবাবও আজ কারও কাছে জানা নেই। নিজ দেশে আপন ঠিকানায় আদৌ কি তারা পুনর্বাসিত হতে পারবে? নাকি লাঞ্ছিত নারীরা বাংলাদেশে নারী-জঙ্গীতে রূপ নেবে না তার চেয়েও বেশি অসামাজিক কার্যকলাপে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে বাধ্য হবে। এ ধরনের অমানবিক, পাশবিক ঘটনা প্রবাহের সুস্থ এবং সুষ্ঠু সমাধান সেভাবে কখনও হয়ও না। সমাজ নির্ধারিত বিধিনিষেধবহির্ভূত অত্যাচার-নিপীড়ন সংঘটিত হতে সময় লাগে না। কিন্তু এর যথাযথ সমাধান করা হয়ে যায় সুদূরপরাহত। সমস্যা তৈরি হতে কোন বিপত্তি ঘটে না কিন্তু সুরাহা করতে গেলেই সমস্ত সামাজিকবোধ পথ আগলে দাঁড়ায়।
×