ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লিটন আব্বাস

লড়াকু নারী জয়িতা রওশন আরা নীলা

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬

লড়াকু নারী জয়িতা রওশন আরা নীলা

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নারীদের অবদান কম নয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নারীরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তেমনি একজন সংগ্রামী নারী কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার রওশন আরা নীলা। মহীয়সী এ নারী সম্প্রতি সরকারীভাবে কুমারখালী উপজলো ও কুষ্টিয়া জেলার শ্রেষ্ঠ জয়িতা হিসেবে বেগম রোকেয়া পদক পেয়েছেন। সমাজকর্মে বিশেষ অবদানের জন্য তাকে এ সম্মানে ভূষিত করা হয়। গণঅভ্যুত্থানের সূচনালগ্নে ১৯৬৮ সালের শেষের দিকে রওশন আরার রাজনীতির শুরু। তিনি তখন কুমারখালী বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। সে সময় কুমারখালী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক রেজাউল করিম হান্নানের অনুপ্রেরণায় ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯৬৮-৬৯ সালে প্রায় প্রতিটি মিটিং-মিছিলে যোগ দিতেন। তখন বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ৬ দফা ও ১১ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম চলছিল। প্রতিটি মিছিলে তিনিই সামনে থেকে সেøাগান দিতেন। ‘জেলের তালা ভাঙব শেখ মুজিবকে আনব’, আপোস না সংগ্রাম-সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘জ্বালো জ্বালো, আগুন জ্বালো- জয় বাংলা’ প্রভৃতি সেøাগানে প্রতিদিন কুমারখালী শহর ধ্বনিত হতো। সারাদেশে শুরু হয়ে যায় মুক্তিকামী মানুষদের সঙ্গে পাকহানাদার আর রাজাকারদের রক্ষক্ষয়ী সংগ্রাম যুদ্ধ। যুদ্ধকালীন সময়ে রওশন আরা নীলা সব সময় হুমকি ধমকিতে থাকতেন। একদিন রাতে রাজাকাররা তাদের বাড়ি ঘিরে ফেলে। এক রাজাকার রাইফেল তাক করে থাকে। এর মধ্যে একজন রাজাকার তার সহপাঠী হওয়ায় সেদিনের মতো বেঁচে যান। ১৯৭৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম হান্নানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন রওশন আরা। দুই বছর দুর্গাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে পরে সরকারী চাকরি করেন দীর্ঘ ৩৫ বছর। ২০১১ সালের ৩০ নবেম্বর চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কুমারখালী শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে পালন করছেন। মহিলা পরিষদের মাধ্যমে সমাজ থেকে বাল্যবিয়ে নিরোধ, নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে গ্রাম থেকে গ্রামে চষে বেড়ান মহীয়সী এ নারী। এ নারী ১৩৭০ বঙ্গাব্দে (১৯৭০) কুমারখালী জেএন হাই স্কুলে নির্মিত কুমারখালীর প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণেরও অন্যতম রূপকার। মহীয়সী এ নারী এখন নিরন্তর ছুটে চলেছেন সমাজের অসহায় পিছিয়ে পড়া, সুবিধাবঞ্চিত হতদরিদ্র নারীদের কল্যাণে। বাল্যবিয়ে বন্ধ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার এ নারী দিন নেই রাত নেই আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছেন পাশাপাশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে এবং ইতিহাস-ঐতিহ্য সংস্কৃতি-মুক্তিযুদ্ধের ওপর যারা কাজ করে যাচ্ছেন তাদের নানাভাবে সহযোগিতা, পরামর্শ দান করে যাচ্ছেন। এ নারীর গর্ভে জন্ম নিয়েছে দুটি সন্তান- তারাও সমাজ সংস্কৃৃতির সঙ্গেই আছেন। বাবার চাকরি সূত্রে বগুড়া জেলার শান্তাহারে ১৯৫৪ সালরে ৬ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন তিনি। [email protected]
×