ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জলি রহমান

কর্মজীবী নারীদের পথচলা

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬

কর্মজীবী নারীদের পথচলা

একই অভিজ্ঞতা সঞ্জয় করে চলছি গত দু’বছর ধরে। ঠিক পাঁচটার সময় অফিস থেকে বের হয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকি কখন কাক্সিক্ষত গাড়ি আসবে, আমাকে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে তখন একের পর এক গাড়ি চলে যাচ্ছে একই কথা শুনিয়ে নেয়া যাবে না। ‘কেন‘ প্রশ্নের উত্তর আসে ‘মহিলা নেব না সিট নেই’। প্রতিদিন নতুন করে নিজেকে বুঝে নিতে হয় আমি পুরুষের পাশে দাঁড়াতে পারব না। যখন দেশ ও জাতির অগ্রগতিতে নারী জাতি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে, পুরুষের থেকে কম নয় তখন কেন এই শ্রেণীভেদ? একদিন ভিড় ঠেলে এক গাড়িতে উঠে নামার সময় প্রশ্ন করলাম আমি তো সিট চাইনি তবে তোমাদের সমস্যা কোথায়? বেশ স্বাভাবিক ছিল উত্তরটি ‘মহিলাদের গায়ে ধাক্কা লাগলে অনেক ঝামেলা করে।’ কিন্তু একজন সচেতন নারী অবশ্যই বোঝে পাশাপাশি দাঁড়ালে এমনটা হতে পারে। কিন্তু সেটা যদি হয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তখনই খুব খারাপ লাগে। কিছু অমানুষ আছে যারা যানবাহন-রাস্তাঘাটে অনেক জায়গা থাকলেও মেয়েদের পাশ ঘেঁষে দাঁড়ায়। একটি বাসে মেয়েদের জন্য ষাটটি সিটের মধ্যে মাত্র নয়টি সিট বরাদ্দ থাকে, যেখানে প্রতিটি কর্মস্থলে পুরুষ ও মহিলা প্রায় সমান সংখ্যক। যদি মহিলাদের দাঁড়িয়ে নেয়াটা সমস্যা হয় তাহলে তাদের জন্য বাসের অর্ধেক সিট বরাদ্দ করা উচিত। অথবা আলাদা পরিবহনের ব্যবস্থা করা উচিত। অফিস-বাসা দুটোই সামলাতে হয় কর্মজীবী নারীদের। একজন কর্মজীবী পুরুষের থেকে একজন কর্মজীবী নারীকে বাসায় পৌঁছানো অনেক বেশি প্রয়োজন। কিন্তু তাকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় কারণ সে নারী। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সকল ক্ষেত্রেই অনন্য উচ্চতায় নারীর পদচারণা সত্ত্বেও কিছু নিম্ন শ্রেণীর লোক এখনও নারীদের কুসংস্কারের বেড়াজালে আটকে রাখতে চায়। নারীরা আজ উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত। সকল বাধা তারা অতিক্রম করতে জানে। ইতোমধ্যে তার অনেক প্রমাণ মিলেছে। তেমনি খাদিজার স্বতঃস্ফূর্ত হাসি এক নরপশু জখম করেও থামাতে পারেনি। মহাশূন্য থেকে মহাকাশ সব জায়গায় নারীর পদচারণা। বর্তমান বাংলাদেশে সামাজিক উন্নয়ন, ধারাবাহিক অর্থনৈতিক গতিশীলতা, ভোটের হিসেবে বেশি অংশগ্রহণ, পোশাক রফতানিতে প্রথম সারিতে স্থানলাভ সবকিছুর পিছনেই নারীর অবদান উল্লেখযোগ্য। নেপোলিয়ানের সেই বিখ্যাত উক্তি ‘আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি একটি শিক্ষিত জাতি দেব’। আজ অধিকাংশ জাতি শিক্ষিত। জাতি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে এসব কুসংস্কার, বৈরী মনোভাব দূর করার জন্য উদ্যোগী হতে হবে। বিশ্বায়নের যুগে তথ্যপ্রযুক্তি উন্নয়নের সঙ্গে আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন। শিশু ও নারী ধর্ষণ, বাল্যবিবাহ, এসিড নিক্ষেপ এসব অমানুষিক কর্মকা- রোধ করতে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও প্রচার মাধ্যমকে আরও জোরদার করতে হবে। প্রতিটি বাবা-মা তার সন্তানকে শিশু বয়স থেকে ভাল পরিবেশ ও শিক্ষা দিতে উদ্যোগী হতে হবে। একটি শিক্ষিত মায়ের সন্তান, একটি ভাল পরিবেশে বেড়ে ওঠা মানুষ কখনও সমাজকে কলুষিত করতে পারে না।
×