ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় এ্যাথলেটিক্সের প্রথম দিনে ১০০ মিটার হার্ডলসে স্বর্ণ জিতলেন সেনাবাহিনীর এই হার্ডলার

হ্যাটট্রিক সৌরভ ছড়ালেন জেসমিন

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬

হ্যাটট্রিক সৌরভ ছড়ালেন জেসমিন

রুমেল খান ॥ ফুলের নামে নাম তার। জেসমিন। জেসমিন আক্তার। বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত জাতীয় এ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় মেয়েদের ১০০ মিটার হার্ডলসে ১৪.৮০ সেকেন্ড সময় নিয়ে স্বর্ণ জেতেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই হার্ডলার। এই আসরে এ নিয়ে হ্যাটট্রিক সোনা জিতলেন তিনি। ছড়ালেন হ্যাটট্রিক সাফল্যের সৌরভ। স্বর্ণজয়ের পর জনকণ্ঠকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে জেসমিন বলেন, ‘জাতীয় এ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় ১০০ মিটার হার্ডলসে এ নিয়ে হ্যাটট্রিক স্বর্ণ জিতলাম। খুব ভাল লাগছে। এর আগে এই আসরে স্বর্ণ জিতেছি ২০০৭ এবং ২০০৯ সালে। ২০১০ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এসএ গেমসে হার্ডলস ইভেন্টে বাংলাদেশের পক্ষে তাম্রপদক জিতেছিলাম।’ জেসমিন সেনাবাহিনীতে যোগ দেন ২০১৪ সালে। এর আগে খেলেছেন আনসার এবং নোয়াখালী জেলা ক্রীড়া সংস্থার হয়ে। ২০০৯ সালে স্বর্ণ জেতেন আনসারের হয়ে। নোয়াখালীর মেয়ে জেসমিন। সেখানকার স্বনামধন্য এ্যাথলেট কোচ রফিকউল্লাহ আক্তার মিলনের মাধ্যমে এ্যাথলেটিক্স অঙ্গনে পা রাখেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, ‘এ পর্যন্ত যা অর্জন বা সাফল্য এসেছে, তা ওই মিলন স্যারের কারণেই।’ বর্তমানে সেনাবাহিনীতে জেসমিনের কোচ মাহবুবা আক্তার বেলী। এবার স্বর্ণজয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ^াস কতটা ছিল? ‘বা হাঁটুতে কিছুটা কিছুটা ব্যথা থাকায় সামান্য চিন্তিত ও নার্ভাস ছিলাম। তবে জেতার ব্যাপারে আত্মবিশ^াসের কোন কমতি ছিল না।’ জেসমিনের স্বগতোক্তি। তারকা হার্ডলার সুমিতা রানী দাস ইনজুরির কারণে এবার অংশ নেননি। তিনি থাকলে কি জিততে পারতেন? ‘আমি সব প্রতিদ্বন্দ্বীকেই সমান সমীহ করি। সুমিতা আপু কেন এবার খেলেননি, তা আমার জানা নেই। তবে তিনি খেললে এবং তাকে হারাতে পারলে নিশ্চয়ই আরও ভাল লাগত। তবে এবার যারা অংশ নিয়েছে, তারাও বেশ কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন।’ হার্ডলসে জেসমিনের চেয়ে সুমিতার স্বর্ণসংখ্যা কিন্তু অনেক বেশি। এটি জেসমিনকে স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি কিছুটা ক্ষুব্ধকণ্ঠে বলেন, ‘তার কারণ তিনি আমার সিনিয়র এবং আমার অনেক আগে থেকে খেলছেন। তার সমানে খেলা শুরু করলে আমিও নিশ্চয়ই পিছিয়ে থাকতাম না। তবে এখন আমি যতটুকু সাফল্য পেয়েছি সেটা কিন্তু কম নয়।’ ২৪ বছর বয়সী জেসমিন এখনও বিয়ে করেননি। কবে বিয়ে করবেন এবং বিয়ের পরেও কি খেলা চালিয়ে যাবেন? গেলে কতদিন? ‘বিয়ে কবে করব জানি না। করলে স্বামীর ইচ্ছার ওপরেই নির্ভর করবে আমার ট্র্যাক ক্যারিয়ার। তবে আমার ইচ্ছা- যতদিন ফর্ম-ফিটনেস থাকবে, ততদিনই খেলে যাব।’ জেসমিনের প্রিয় হার্ডলার মাহফুজুর রহমান মিঠু। খেলা নিয়ে ভবিষ্যত লক্ষ্য? ‘এসএ গেমসে মেয়েদের ১০০ মিটার হার্ডলসে বাংলাদেশ এখনও স্বর্ণ জেতেনি। এই অপূর্ণতা আমি ঘোচাতে চাই। এজন্য দরকার দীর্ঘমেয়াদী ও উন্নত প্রশিক্ষণ। সেটা পাব কিনা, তা নির্ভর করবে এ্যাথলেটিক ফেডারেশনের সদিচ্ছার ওপর।’ আগামী জানুয়ারিতে বিএসএস ফাইনাল পরীক্ষা দেবেন জেসসিন। জেসমিনের বয়স যখন দুই মাস, তখন তার বাবা যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বড় বোন জাহানারা আক্তার জানু ছিলেন জাতীয় এ্যাথলেট। ২০০ এবং ৪০০ মিটার দৌড়ে অংশ নিতেন তিনি। মূলত তাকে দেখেই স্প্রিন্টার হতে আগ্রহী হন জেসমিন। স্কুলে পড়ার সময়ই ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্টে ভাল দৌড়াতে পারতেন জেসমিন। পাশাপাশি লং জাম্পেও তাই। এই দুটি ইভেন্টে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে প্রচুর স্বর্ণপদক জিতেছেন। এছাড়া জ্যাভলিন থ্রো এবং শটপুটেও তাই। লং জাম্পেও জাতীয় পর্যায়ে স্বর্ণ জিতেছেন ২০০৯ সালে। লং জাম্প আর এখন খেলেন না জেসমিন। কারণটাও জানালেন, ‘২০১০ সালে এসএ গেমসের পর কোলকাতাতে ইন্দো-বাংলা গেমস খেলতে গিয়েছি (এ আসরে ২০০৮ সালে হার্ডলসে স্বর্ণ জিতেছেন, ২০০৭ ও ১০ সালে জেতেন রৌপ্য)। সেখান থেকে দেশে ফিরে নোয়াখালীতে সাইক্লিং করতে গিয়ে এ্যাক্সিডেন্ট করি। বা হাঁটুর লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায়। পাক্কা দেড় বছর লেগেছে ইনজুরিমুক্ত হতে। এ সময়টাতে কোন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারিনি। ওই এ্যাক্সিডেন্টের পর থেকে আর লং জাম্পে অংশ নিইনি।’ জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে ২০০৮ সালে তাম্রপদক জেতেন জেসমিন। জাতীয় পর্যায়ে ২০০ এবং ৪০০ মিটার দৌড় ইভেন্টেও অংশ নেয়ার অভিজ্ঞতা আছে তার। তবে সময়ের পরিক্রমায় থিতু হয়েছেন হার্ডলসেই। এসএ গেমসে প্রস্তুতি নিতে ২০০৯ সালে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে গিয়ে তিন মাসের ট্রেনিং নিয়েছিলেন জেসমিন। পাঠিয়েছিল ফেডারেশন, অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে। জেসমিনের সঙ্গে ছিলেন বিউটি, আল-আমিন, ইমরান এবং সূর্য। ওখানে গিয়ে একটি ফ্রেন্ডশিপ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। তাতে ১০০ মিটার হার্ডলসে অংশ নিয়ে প্রথম হয়েছিলেন জেসমিন। এ্যাথলেটিক্স ছাড়া জেসমিনের অন্য প্রিয় খেলা ফুটবল।
×