ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের হয়ে প্রথম আইসিসি বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রিকেটার

ইতিহাস গড়লেন মুস্তাফিজ

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬

ইতিহাস গড়লেন মুস্তাফিজ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ একদিনে দুই প্রাপ্তি মিলল বাংলাদেশ ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজুর রহমানের। প্রথমত, আট মাস পর জাতীয় দলের জার্সি গায়ে খেলতে নামলেন। দ্বিতীয়ত, এর চেয়েও বড় অর্জন মিলল। আইসিসির বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রিকেটার হলেন এ পেসার। আর এ অর্জনে দেশের হয়ে প্রথমবার আইসিসির কোন বর্ষসেরা ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জিতে ইতিহাসই গড়ে ফেললেন মুস্তাফিজ। এখন পর্যন্ত আইসিসির বর্ষসেরা কোন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জেতেননি বাংলাদেশের কোন ক্রিকেটার। বাংলাদেশ ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজুর রহমান সেই অর্জন বাংলাদেশকে এনে দিলেন। ২০১৫-১৬ মৌসুমে আইসিসির বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রিকেটারের পুরস্কারটি জিতে নিলেন। এমন দিনে অর্জনটি মিলল, যেদিন, বৃহস্পতিবার নিউজিল্যান্ড একাদশের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচেও খেললেন মুস্তাফিজ। বৃহস্পতিবারই আবার আইসিসি বর্ষসেরা ক্রিকেটারদের তালিকা ঘোষণা করল। বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রিকেটার হয়ে মহাখুশি মুস্তাফিজও। গত বছর টি২০ দিয়ে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ান মুস্তাফিজ। ১৩টি টি২০ ম্যাচ খেলেন। ২২ উইকেট নেন। একই বছর ওয়ানডে ও টেস্টেও অভিষেক হয় মুস্তাফিজের। ৯ ওয়ানডে খেলে ২৬ উইকেট নেয়ার সঙ্গে ২ টেস্ট খেলে ৪ উইকেট নেন। এ বছর মার্চে টি২০ বিশ্বকাপের পর আইপিএল খেলতে গিয়ে ইনজুরিতে পড়েন। এরপর ঠিক হয়ে আবার ইংল্যান্ডের ন্যাটওয়েস্ট টি২০ ব্লাস্টে খেলেন। ইংল্যান্ডে খেলতে গিয়ে ২ ম্যাচ খেলেই জুলাইয়ে আবার ইনজুরিতে পড়েন। এরপর হয় কাঁধে অস্ত্রোপচার। সেই থেকে চলে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া। বৃহস্পতিবারের আগ পর্যন্ত জাতীয় দলের হয়ে কোন ম্যাচ খেলতে পারেননি। বৃহস্পতিবার নিউজিল্যান্ড একাদশের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেন। ভাল বলও করেন। ৭ ওভার বল করে ৩৯ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য মুস্তাফিজের ফেরা সুসংবাদই বয়ে আনে। সেই সঙ্গে মুস্তাফিজ যে আইসিসির বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রিকেটার হন, তা আরও বড় সংবাদ হয়ে ধরা দেয়। মুস্তাফিজও নিজের অভিব্যক্তি আইসিসির কাছে প্রকাশ করতে ভুল করেননি। জানিয়েছেন, ‘এখন পর্যন্ত এটা আমার ক্যারিয়ারে সেরা প্রাপ্তি। এই পুরস্কার সামনের বছরগুলোতে আমাকে আরও ভাল খেলতে উৎসাহিত করবে। এ পুরস্কার জিতে আমি নিজেকে গর্বিত মনে করছি। বিশেষ করে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এই অর্জনে সত্যিই আমি আনন্দিত।’ ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পারফরম্যান্স বিবেচনায় মুস্তাফিজকে এই পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করা হয়। এই সময়ে তিন ওয়ানডেতে মুস্তাফিজ নিয়েছেন ৮ উইকেট। ১০টি টি২০ ম্যাচ খেলে তিনি নিয়েছেন ১৯ উইকেট। এ বছর এখন পর্যন্ত কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচই খেলা হয়নি মুস্তাফিজের। তবে গত বছর উজ্জ্বলতা ছড়িয়েছেন। ক্রিকেট বিশ্বে তোলপাড় লাগিয়ে দিয়েছেন। ২০১৫ সালে দেশের ক্রীড়াঙ্গন ছাড়িয়ে দেশের বাইরেও মুস্তাফিজের নাম আলোচনার জন্ম দেয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে টি২০ দিয়ে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ান তিনি। এরপর মুস্তাফিজ শুধু আশ্চর্যেরই জন্ম দেন। জুলাইয়ে অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৪ উইকেট শিকার করেন। বাংলাদেশের প্রথম পেস বোলার হিসেবে অভিষেকেই ম্যাচ সেরার রেকর্ড গড়েন। জুনে অভিষেক ওয়ানডেতেই ভারতের বিপক্ষে ৫ উইকেট শিকার করেন। বাংলাদেশের প্রথম পেস বোলার হিসেবে অভিষেক ওয়ানডেতেই ম্যাচ সেরা হওয়ার রেকর্ডও গড়েন। তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে প্রথমবারের মতো ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জিতে। মুস্তাফিজ একাই (৫, ৬, ২ উইকেট) ১৩ উইকেট নেন। সিরিজ সেরা হন। তার বোলিংয়েই ভারতকে প্রথমবারের মতো সিরিজে হারায় বাংলাদেশ। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জেতে বাংলাদেশ। মুস্তাফিজ (০, ৩, ২ উইকেট) ৫ উইকেট নেন। উইকেট সংখ্যা কম হলেও দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটসম্যানদের চাপে রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। এরপর বছরের শেষদিকে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজে (০, ৩, ৫ উইকেট) ৮ উইকেট নেন মুস্তাফিজ। এশিয়া কাপ টি২০ ও টি২০ বিশ্বকাপে এ বছর ইনজুরির জন্য ঠিকমতো খেলতে পারেননি। তাই পারফরম্যান্সও আকাশচুম্বী হয়নি। তবে এত বেশি আলোচনায় ছিলেন মুস্তাফিজ যে আইসিসির বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রিকেটার পুরস্কারটি প্রাপ্তিতে তার ধারেকাছে কেউ থাকারও কথা নয়। তাকে টেক্কা দেয়ার মতো কেউ ছিলেন না। তাই মুস্তাফিজই এ ক্যাটাগরিতে সেরা হয়েছেন। এমন প্রাপ্তিতে মুস্তাফিজ আরও এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন। বলেছেন, ‘সব ক্রিকেটারেরই স্বপ্ন থাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার। এখানে খেলাটা সবসময়ই আকাক্সিক্ষত এবং আনন্দের। আমার জন্য এই স্বপ্নটা সত্যি হয়ে ধরা দিয়েছে। যারা আমাকে সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছেন, তাদেরকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তাদের কারণেই এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। আশা করছি, ভবিষ্যতে আমি আরও বেশি আনন্দের উপলক্ষ বয়ে আনতে পারব।’ আইসিসি বর্ষসেরা পুরস্কারে এর আগেও বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা ছিলেন। সাকিব, তামিমসহ অনেকেই তালিকায় ছিলেন। কিন্তু ব্যক্তিগত কোন ক্ষেত্রে আইসিসির বর্ষসেরা হতে পারেননি বাংলাদেশের কোন ক্রিকেটার। তবে ২০০৯ সালে বর্ষসেরা টেস্ট দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন সাকিব। গত বছর বর্ষসেরা ওয়ানডে দলেও ছিলেন মুস্তাফিজ। এবার ব্যক্তিগত অর্জন নিজের করে নিলেন। আইসিসির বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রিকেটারের পুরস্কার জিতলেন। দেশের হয়ে প্রথমবারের মতো কোন ক্যাটাগরিতে বর্ষসেরা হয়ে ইতিহাসই গড়ে ফেললেন মুস্তাফিজ।
×