ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিবন্ধী তিন ভাইবোনকে উচ্ছেদের পাঁয়তারা

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬

প্রতিবন্ধী তিন ভাইবোনকে উচ্ছেদের পাঁয়তারা

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ মনিরামপুর উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের হাসাডাঙ্গা গ্রামের বয়োবৃদ্ধ আবুল হোসেন (৬২), ছায়েরা (৫৭) ও কতবানু (৫২)। একই মায়ের গর্ভে জন্ম এদের। তিনজনই জন্ম থেকেই অন্ধ, বোবা ও বধির। আবুল হোসেন প্রাপ্তবয়সে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু প্রতিবন্ধী হওয়ায় সংসার টেকেনি তার। স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে তাকে ছেড়ে চলে গেছে। আর প্রতিবন্ধী হওয়ায় ছায়েরা ও কতবানু নববধূর সাজে সাজতে পারেননি। ফলে হাসাডাঙ্গা গ্রামে পৈত্রিক ভিটায় মাটির ঘরে থাকতেন এই তিন ভাইবোন। চেয়েচিন্তে দিন চলত তাদের। গত বর্ষা মৌসুমে পরপর দু’দফা টানা বর্ষণে জলাবদ্ধতায় সেই ঘর ভেঙ্গে যাওয়ায় বাড়িঘর ছেড়ে অন্যদের সঙ্গে মহাসড়কের পাশে টংঘরে আশ্রয় নিয়েছিলেন তারা। বেশ কয়েকদিন হলো পানি সরেছে। অন্যরা আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে নিজ ভিটায় ফিরলেও ফেরা হয়নি এই তিন প্রতিবন্ধীর। একমাত্র বসতঘরটি ভেঙ্গে পড়ায় তারা আশ্রয় নিয়েছেন পাশের গ্রামের ছোট বোন খাদিজার বাড়িতে। সেখানে তিনিই এই তিন প্রতিবন্ধীর দেখভাল করেন। তবে সেই আশ্রয়টুকুও হারাতে বসেছেন তারা। চাচাত ভাই আব্দুর রহমান সেই সম্পত্তি নিজের বলে দাবি করছেন। আব্দুর রহমান খাদিজাসহ তার তিন প্রতিবন্ধী ভাইবোনকে ওই ভিটা থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে স্থানীয়রা জানান। কথা হয় তাদের আশ্রয়দাতা খাদিজার সঙ্গে। তিনি জানান, বাপ-মা মরার পর থেকে এই তিন ভাইবোনকে তিনিই দেখাশোনা করেন। তার স্বামী আব্দুল হামিদ ট্রাক ড্রাইভার। তাতেই সংসার চলে। তিনিও প্রতিবন্ধী এই তিনজনের যতœ নেন। খাদিজা বলেন, ১৬ শতক জমির ওপর ঘর করে আমরা থাকি। সেই জমিটা আমার চাচাত ভাই আব্দুর রহমান তার বলে দাবি করছে। আব্দুর রহমান জমিটি আমার আরেক ভাই মৃত আব্দুল বারিকের কাছ থেকে কিনেছে বলে দাবি করছে। তবে সে কোন প্রমাণ দেখাতে পারছে না। তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফা সালিশ হয়েছে। কিন্তু তা মানছে না আব্দুর রহমান। বরং খাদিজা ও তার স্বামীর নামে দফায় দফায় ১৪টি মিথ্যা মামলা দিয়েছে বলে দাবি খাদিজার। প্রতিবন্ধী তিন ভাইবোন সরকারী ভাতা পান কি-না জানতে চাইলে খাদিজা বলেন, আবুল হোসেন ও কতবানুর নামে প্রতিবন্ধীর কার্ড হয়েছে। কিন্তু অপরজনের কোন কার্ড হয়নি। তবে এই ভাতায় তাদের দিন চলে না বলে জানান তিনি। স্থানীয় চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনি জানান, ওই তিন প্রতিবন্ধী সরকারের পক্ষ থেকে ঘর পাবে। আগামী মাসেই ঘর নির্মাণের কাজ শুরু হবে বলে চেয়ারম্যান আশা প্রকাশ করেন। তাছাড়া আগামীতে তিনি ছায়রার নামে প্রতিবন্ধীর কার্ড করে দেবেন বলেও জানান। জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান জানান, প্রতিবন্ধী তিন ভাইবোনকে টিন দেয়া হবে।
×