ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তিন শিক্ষক সাসপেন্ড ॥ এমপির সঙ্গে দ্বন্দ্ব শিক্ষা কর্মকর্তার

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬

তিন শিক্ষক সাসপেন্ড ॥ এমপির সঙ্গে দ্বন্দ্ব শিক্ষা কর্মকর্তার

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহীতে সরকাীর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিন শিক্ষককে সাসপেন্ড ও শোকজ করার ঘটনা নিয়ে এবার প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন জেলা প্রথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কাশেম। প্রাথমিক বৃত্তি জালিয়াতির পর বদলির পর আবারও স্বপদে ফিরে তিনি পবা উপজেলার তিন শিক্ষককে সাসপেন্ড করেন। এ নিয়ে এবার রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের এমপি আয়েন উদ্দিনের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ান। এ নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা দফতরে উত্তেজনাও চলছে। সর্বশেষ বুধবার মোবাইল ফোনে তাদের রীতিমতো বাগ্যুদ্ধ হয়েছে। এমপি আয়েন উদ্দিন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তা আক্রোশে পবা উপজেলার পুরস্কারপ্রাপ্ত ও জনপ্রিয় তিনজন শিক্ষককে অন্যায়ভাবে সাসপেন্ড করেন। এমপি হিসেবে তিনি তাদের বিষয়ে ফোন করেন। কিন্তু শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কাশেম তর্কে জড়িয়ে পড়েন। এমপিকে চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দেন ওই কর্মকর্তা। এমপির অভিযোগ, তিনি শিক্ষা কর্মকর্তার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে হতবাক হয়েছেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি করে যাচ্ছেন ডিপিইও আবুল কাশেম। প্রচুর টাকা ঘুষের মাধ্যমে কামাই করেছেন। অভিজাত এলাকা পদ্মা আবাসিকে ১০তলা বাড়ি বানাচ্ছেন। তার দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ শিক্ষকরা। কিন্তু আতঙ্কে কেউ প্রতিবাদ করতে পারছে না। তবে জেলা প্রথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কাশেম বলেন, ‘এতদিন তার তদবিরে আমি তারই ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনদের সুবিধামতো স্কুলে বদলি করে দিয়েছি। তখন তিনি (এমপি) আমাকে ভাই ভাই করতেন। আর এখন আমার সঙ্গে এমপি চাকরের মতো আচরণ করছেন। একজন সংসদ সদস্যের যে ভাষায় কথা বলা উচিত তাতে তিনি ন্যূনতম শিষ্টাচার রেখে কথা বলেননি বলে পাল্টা অভিযোগ করেন তিনি। তাকে অকথ্য ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেছেন বলেও দাবি করেন শিক্ষা কর্মকর্তা। তবে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া শিক্ষক আব্দুস সামাদ বলেন, গত ৮ ডিসেম্বর আকস্মিকভাবে স্কুল পরিদর্শন করেন ডিপিইও। এ সময় তিনি আমাকে গালি দেন। এর প্রতিবাদ করলে তিনি আমাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন। পরে ওই দিনই সন্ধ্যায় স্কুলের অন্য শিক্ষকদের তার কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ লিখিয়ে নেন। পারিলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলামকেও একই অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন জেলা প্রথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। তবে রবিউল ইসলাম বলেন, আমি একটি অনুষ্ঠানে মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে গত ১৪ ডিসেম্বর উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ডাকে প্রশিক্ষক ছিলাম। কিন্তু ওই দিন স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে আমাকে না পেয়ে ডিপিইও সাহেব ফোন করে স্কুলে ডেকে নেন। পরে আমাকে গালিগালাজ করে চলে যান। এরপরই সাময়িক বরখাস্তের চিঠি পাঠানো হয়। এদিকে একই দিন পরিদর্শনে গিয়ে উপজেলার খড়খড়ি সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাইদুর রহমানকে তাৎক্ষণিক হাজির পাননি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কাশেম। পরে তাকে শোকজ করা হয়। তবে সাইদুর রহমানের দাবি, প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে ওই সময় তিনি শিক্ষকদের জন্য নাস্তা কিনতে বাইরে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাকে শোকজের পর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী মহসিন ডিপিইওর নামে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। টাকা দিলে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে না বলেও জানান মহসিন। কিন্তু টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তাকেও হয়রানি করা হচ্ছে। ভুক্তভোগী শিক্ষকরা বলেন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তিনি নগরীর আবাসিক এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন। প্রাথমিক বৃত্তি জালিয়াতির পর তাকে সম্প্রতি বরিশালে বদলি করা হলেও এখন আবার স্বপদে ফিরে শিক্ষকদের পেছনে লেগেছেন।
×