ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খনন কাজ ও বর্জ্য অপসারণ উদ্বোধন

বুড়িগঙ্গাকে হাতিরঝিলের মতো সাজানো হবে ॥ সাঈদ খোকনের ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬

বুড়িগঙ্গাকে হাতিরঝিলের মতো সাজানো হবে ॥ সাঈদ খোকনের ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবৈধ দখলমুক্ত করে বুড়িগঙ্গাকে হাতিরঝিলের ন্যায় সাজানোর ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার ইসলামবাগ টাঙ্কিঘাটে আদি বুড়িগঙ্গার অবৈধ দখল মুক্ত করার জন্য খনন কাজ ও বর্জ্য অপসারণ কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি। ডিএসসিসি মেয়রকে সঙ্গে নিয়ে অবৈধ দখলমুক্ত করার কাজের উদ্বোধন করেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর এম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা বার বার ক্ষমতায় এসেছেন তাদের অবহেলা, অযতেœ বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারপাশের নদী ধ্বংস হতে চলছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার তা আবার পুনরুদ্ধার শুরু করেছে। এ সময় মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, অবৈধ দখলদাররা যতই শক্তিশালী ও ক্ষমতাধর হোক না কেন জনগণকে সঙ্গে নিয়ে যে কোন মূল্যে উচ্ছেদ করবই। প্রয়োজনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, শুধু উদ্ধার করলেই হবে না, এটাকে রক্ষাও করতে হবে। এজন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জনগণকে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মোঃ আতাহারুল ইসলাম প্রমুখ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন জনকণ্ঠকে বলেন, বুড়িগঙ্গা উদ্ধারে হাতিরঝিলের আদলে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। তাই আগে নদী দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছি। যা আজ থেকে শুরু হলো। নদ-নদীসহ নগরীর পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কর্পোরেশনের কার্যক্রমের সুফল খুব অল্প সময়ে নগরবাসীর কাছে দৃশ্যমান হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, অনেক পুরনো জায়গা তাই একটু সময় লাগাটা স্বাভাবিক। এ সময় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বুড়িগঙ্গায় সাগরের মাছ ফিরে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিকভাবে আগামী ৩ মাস এ অভিযান চলবে। এর পর একটি প্রকল্পের আওতায় কাজ সম্পন্ন করা হবে। ইসলামবাগ হতে শিকদার মেডিক্যাল পর্যন্ত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, বর্জ্য অপসারণ এবং খনন কাজ করা হবে বলে বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে। ডিএসসিসি, বিআইডব্লিউটিএ এবং ঢাকা জেলা প্রসাশন যৌথভাবে বুড়িগঙ্গা তীরবর্তী অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কাজ পরিচালনা করবে। জানা যায়, ৮০’র দশক থেকে বুড়িগঙ্গা ভরাট করে ঘরবাড়ি নির্মাণের হিড়িক পড়ে। এরপর ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত মিটফোর্ড হাসপাতালের পেছন থেকে নবাবগঞ্জ, হাজারীবাগ, মিরপুর হয়ে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত নির্মিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভেতরে চলে যায় বুড়িগঙ্গার বৃহৎ অংশ। এদিকে, কয়েক বছর ধরে ঢাকার আশপাশের নদ-নদী ও জলাশয়গুলো উদ্ধারে অভিযান চালিয়ে আসছে কর্তৃপক্ষ। শুরুতে বেশ তোড়জোড় থাকলেও কিছুদিন পরে তা থমকে যায়। উচ্ছেদ অভিযানের পরপরই আবার বেদখল হয়ে যায়। এতে বিআইডব্লিউটিএর কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ঢাকার প্রাণখ্যাত বুড়িগঙ্গাকে দৃষ্টিনন্দন করতে একটি মাস্টার প্ল্যান করেছে ডিএসসিসি। নদীটি সৌন্দর্যম-িত করতে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ইন্টিগ্রেটেড আরবান ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড স্মার্ট সিটি ম্যানেজমেন্ট’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে তারা। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০ বছর। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিকভাবে বুড়িগঙ্গা ২য় সেতু থেকে সদরঘাট পর্যন্ত সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা হবে। এরপর হাজারীবাগ থেকে সদরঘাট হয়ে নারায়ণগঞ্জের পাগলা পর্যন্ত এ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় অবকাশ জাপনের জন্য নদীর তীরে বিলাশবহুল রিসোর্ট, হাঁটার রাস্তা, পার্ক, বসার স্থান, ভাসমান বিনোদন কেন্দ্র ও রেস্তরাঁ থাকবে। চারপাশে সবুজ দেশীয় গাছগাছালির পাশাপাশি থাকবে দেশ-বিদেশের নানা প্রকার ফুল।
×