ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাইমারী শিক্ষার উন্নয়নে দুই প্রকল্পে ব্যয় হবে ১৫ হাজার কোটি টাকা

একনেকে ২৪ হাজার ৪১১ কোটি টাকার ১৫ প্রকল্প অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬

একনেকে ২৪ হাজার ৪১১ কোটি টাকার ১৫ প্রকল্প অনুমোদন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নে দুটি বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এজন্য সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) চার নম্বর গোল ‘মানসম্মত শিক্ষা’ অর্জনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার এ দুটিসহ মোট ১৫টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৬ হাজার ৪১১ কোটি টাকা। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে একনেকের সভায় এসব প্রকল্পে অনুমোদন দেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রথমবারের মতো একনেকের একক সভায় রেকর্ডসংখ্যক ১৬টি প্রকল্প উপস্থাপিত হয়েছে। এটি পরিকল্পনা কমিশনের সক্ষমতা ও উন্নয়নের প্রতি সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের পরিচায়ক। উত্থাপিত প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাই শেষে ১৫টিতে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। একসঙ্গে এতগুলো প্রকল্প এর আগে কখনও অনুমোদন দেয়া হয়নি। তাই বলা যায়, এটিও একটি রেকর্ড। মন্ত্রী জানান, অনুমোদিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সরকারী তহবিল থেকে ব্যয় হবে প্রায় ২২ হাজার ৭৯ কোটি টাকা। বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেয়া হবে প্রায় ৩৮৫ কোটি টাকা। আর বৈদেশিক সহায়তা হিসেবে পাওয়া যাবে প্রায় ৩ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা। সভায় ‘চাহিদাভিত্তিক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন (১ম পর্যায়)’ এবং ‘চাহিদাভিত্তিক নতুন জাতীয়করণকৃত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন (১ম পর্যায়’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এ দুটি প্রকল্প বাস্তবায়নে যথাক্রমে প্রায় ৯ হাজার ১২৪ কোটি টাকা এবং প্রায় ৫ হাজার ৭৪১ কোটি ব্যয় হবে। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এসডিজির চার নম্বর লক্ষ্য অর্জনে প্রাথমিক শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। কেননা ভিত্তি মজবুত হলে ভবিষ্যত ভাল হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুসারে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছেলেমেয়েদের জন্য আলাদা টয়লেট হবে। এসব টয়লেট পুরুষ এবং নারী শিক্ষকরাও ব্যবহার করবেন। এতে শিক্ষার্থীদের পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের অভ্যাস গড়ে উঠবে। মন্ত্রী জানান, এ দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে ৬৫ হাজার শ্রেণীকক্ষ নির্মাণ, ১০ হাজার বিদ্যালয়ে পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা, ৫৯ হাজার ৫০০ শ্রেণীকক্ষ ও সাড়ে ৫ হাজার শিক্ষক কক্ষে চেয়ার-টেবিল ও আলমারি স্থাপনসহ অন্যান্য সুবিধা দিয়ে শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়ন করা হবে। ২০২২ সালের মধ্যে এ দুটি প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের বাস্তবায়ন কাজ শেষ হবে। মন্ত্রী জানান, দেশের কোথাও আর বেইলি সেতু থাকবে না। এগুলো খুব ঝুঁকিপূর্ণ। দেশের যেসব জায়গায় বেইলি সেতু রয়েছে, সেগুলো স্থায়ী কংক্রিটের সেতু দ্বারা প্রতিস্থাপন করতে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী দেশে এবং বিদেশ সফরে পাওয়া রাষ্ট্রীয় উপহারসমূহ তেজগাঁওয়ে নির্মাণাধীন ‘বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরে’ প্রদর্শন ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান পরিকল্পনামন্ত্রী। যথাযথ কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র না থাকায় ‘জাতীয় রাজস্ব ভবন নির্মাণ (১ম সংশোধনী)’ প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ফেরত পাঠানো হয়। অনুমোদিত অন্য ১৩ প্রকল্প ॥ সভায় সদর দফতর ও জেলা কার্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর শক্তিশালীকরণ প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এর ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৮৩ কোটি টাকা। অনুমোদন পেয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, এর প্রাক্কলিত ব্যয়ের পরিমাণ প্রায় ৩৬৪ কোটি টাকা। অনুমোদন পাওয়া বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর নির্মাণ প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭৬ কোটি টাকা। অনুমোদিত রাজশাহী হাইটেক পার্ক (বঙ্গবন্ধু সিলিকন সিটি) স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে প্রায় ২৩৮ কোটি টাকা। এছাড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য হোস্টেল নির্মাণ ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের জন্য ব্যয় হবে প্রায় ৬১ কোটি টাকা। পতেঙ্গা হতে সাগরিকা পর্যন্ত চিটাগং সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্প (২য় সংশোধিত) বাস্তবায়নে ব্যয় হবে প্রায় ২ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। ৩৭ জেলা শহরে পানি সরবরাহ প্রকল্প (২য় সংশোধিত) প্রকল্প, যার ব্যয় প্রায় ৯০০ কোটি টাকা। চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইম্যানের বহিঃসীমানা দিয়ে লোপ রোড নির্মাণসহ ঢাকা ট্রাঙ্ক রোড হতে বায়েজিদ বোস্তামি পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২০ কোটি ৪ লাখ টাকা। এর বাইরে অনুমোদন পেয়েছে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত প্রধান প্রধান ১১টি ছড়ার পার্শ্বে আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ প্রকল্প। এর সম্ভাব্য ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২৩৬ কোটি টাকা। মুন্সীগঞ্জ সড়ক বিভাগের অধীন ঝুঁকিপূর্ণ সেতুসমূহ স্থায়ী কংক্রিট সেতু দ্বারা প্রতিস্থাপন প্রকল্পে ব্যয় হবে প্রায় ১৪৮ কোটি টাকা। গুচ্ছগ্রাম ২য় পর্যায় প্রকল্পে ব্যয় হবে ৯৪১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অবকাঠামো উন্নয়ন (৩য় পর্যায়) প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৯৯৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা এবং খুলনা ৩৩০ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৩ হাজার ২৫৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
×