ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিমানের শনির দশা, একের পর এক দুর্ঘটনা

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬

বিমানের শনির দশা, একের পর এক দুর্ঘটনা

শংকর কুমার দে ॥ যেন শনির দশায় পেয়েছে বাংলাদেশ বিমানকে। একের পর এক বিমান দুর্ঘটনার কবল থেকে অলৌকিকভাবে রক্ষা পাচ্ছেন আরোহীরা। গত ২৭ নবেম্বর থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র ২৫ দিনের ব্যবধানে বিমানের ৩টি বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে, যা থেকে রক্ষা পেয়েছেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ ভিআইপি আরোহীরা। গত ৩ বছরে বিমান বাংলাদেশের ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে ৯টি। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ওমান থেকে আসা চটগ্রামগামী একটি বিমানের দু’টি ফাটা চাকা নিয়ে ৫ ঘণ্টা উড্ডয়নের পর ঢাকায় জরুরী অবতরণ করে দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে। বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ সূত্রে এ খবর জানা গেছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে বিমানের বিজি-১২২ ফ্লাইটটি ১৪৯ জন যাত্রী নিয়ে ওমানের মাসকট থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে উড্ডয়ন করে। এ সময় উড়োজাহাজের একটি চাকা ফেটে যায়। ফাটা চাকা নিয়েই পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় উড়ে ঢাকায় আসে বিমানটি। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ৭ মিনিটে সরাসরি ঢাকায় জরুরী অবতরণ করে বিমান। বিমানের বিজি-১২২ ফ্লাইটের ১৪৯ জন যাত্রী ও সাতজন ক্রুর সবাই নিরাপদে রয়েছেন বলে বিমানের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে বিমানের এই দুর্ঘটনার কারণে দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকে বিমান ওঠা-নামা। দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিমানবন্দরে ফ্লাইটের ওঠা-নামা শুরু হয়। বাংলাদেশ বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ জানিয়েছেন, বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজটি বৃহস্পতিবার ভোরে রওনা হওয়ার পর সকাল পৌনে ৯টায় চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা থাকলেও সামনের দুটো চাকার একটি ফেটে যাওয়ায় পাইলট ঢাকায় জরুরী অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন। এই কর্মকর্তার স্বাক্ষর করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট বিজি-১২২ বাংলাদেশ সময় ভোর চারটা ৪৮ মিনিটে মাসকট থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা করে। বোয়িং ৭৩৭-৮০০ ফ্লাইটটি টেক অফের পর মাসকট বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে ক্যাপ্টেনকে জানানো হয়, রানওয়েতে টায়ারের কিছু অংশ পাওয়া গেছে, তা সম্ভবত বিমানের ফ্লাইটের হতে পারে। এ অবস্থায় ফ্লাইটের ক্যাপ্টেন অধিকতর নিরাপত্তার স্বার্থে চট্টগ্রামের পরিবর্তে ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থানীয় সময় ১০টা ০৭ মিনিটে নিরাপদে অবতরণ করেন। এ সময় ঢাকায় জরুরী অবতরণের জন্য সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়। ল্যান্ডিংয়ের পূর্বে ফ্লাইটটি রানওয়ের ওপর দুবার লো-লেভেল ফ্লাই করে, তখন লক্ষ্য করা যায়, উড়োজাহাজের পেছনের বাঁদিকে ২ নম্বর টায়ারটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যাত্রীদের সরিয়ে নেয়ার পর উড়োজাহাজের মেরামতের কাজ শুরু করা হয়। মেরামত করে দুপুর সাড়ে ১২টার পর বিমানবন্দরে আবারও ফ্লাইটের ওঠা-নামা শুরু হয়। বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মাসকট থেকে উড্ডয়নের পরেই বিমানের পেছনের বাঁদিকের একটি চাকা ফেটে যায়। এ কারণে এটি সরাসরি ঢাকায় অবতরণ করে। এ কারণে প্রায় দুই ঘণ্টা এই বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ ওঠা-নামা বন্ধ ছিল। ওমান থেকে আজ বৃহস্পতিবার ভোরে উড্ডয়নের পরই চাকা ফেটে যায় বলে বিমান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। বিমানের বিজি-১২২ ফ্লাইটটির ১৪৯ জন যাত্রী ও সাতজন ক্রুর সবাই সুস্থ ও নিরাপদে রয়েছেন বলে বিমানের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ওই বিমানটি মেরামতের জন্য হ্যাংগারে রাখা আছে। আরেকটি বিমানে করে যাত্রীদের চট্টগ্রাম পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এর আগে গত ২৭ নবেম্বর হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তুর্কমেনিস্তানে জরুরী অবতরণে বাধ্য হয়। উড়োজাহাজের ইঞ্জিন অয়েলের ট্যাংকের একটি নাট ঢিলা থাকায় ওই বিপত্তি ঘটে। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি মনুষ্যসৃষ্ট বা নাশকতা হওয়ার বিষয়ে প্রমাণ পায় গঠিত তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিমানবন্দর থানায় ৯ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় গত বুধবার রাতে। বৃহস্পতিবার বিমানের ৭ জনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ দিনই বিমানের দুই কর্মকর্তা আত্মসমর্পণ করলে তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের ঘটনার রেশ না কাটতেই বৃহস্পতিবার আবারও বিমানের চাকা ফেটে যাওয়ার ঘটনার মতো দুর্ঘটনা ঘটল। এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদকে বহনকারী রাষ্ট্রপতির ফ্লাইটেও কেমিক্যালযুক্ত পানি দিয়ে বিমানের ইঞ্জিন ধোয়ার মাধ্যমে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটিয়ে দুর্ঘটনা ঘটার আশংকার ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। মাহবুব নামে এক টেকনিক্যাল অফিসারকে সাময়িক বরখাস্ত করার পর ঘটনাটি গত ১৯ ডিসেম্বর ফাঁস হয়ে যায়। রাষ্ট্রপতিকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের ফিরতি ফ্লাইটে কেমিক্যাল যুক্ত পানি দিয়ে ইঞ্জিনের বেড পরিষ্কারের অভিযোগ ওঠার ঘটনায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছেন রাষ্ট্রপতির ওই ফ্লাইট। ওই ফ্লাইটটির উড্ডয়নের আগে কেমিক্যাল যুক্ত পানি দিয়ে বিমানের ইঞ্জিনের বেড ধোয়ার চেষ্টা হচ্ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রপতির ফ্লাইটের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে এই ভয়াবহ ঘটনা হাতেনাতে ধরা পড়ে। রাষ্ট্রপতিকে সিঙ্গাপুর থেকে আনার জন্য ওই ফ্লাইটটিকে ভিভিআইপি ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। গত ৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যান। তিনি ১১ ডিসেম্বর দেশে ফিরে আসেন। বিমান কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রপতিতে দেশে আনার জন্য বোয়িং কোম্পানি তৈরি বি-৭৩৭ নামের একটি নতুন এয়ারক্রাফট ভিভিআইপি হিসাবে ঘোষণা দেন। ১০ ডিসেম্বর ওই ফ্লাইটটির সব ধরনের চেক ও প্রকৌশলজনিত কাজ শেষে সেটি রাষ্ট্রপতি নিরাপত্তা বিভাগের কাছে হস্তান্তর করে। তারা শাহজালালের হ্যাঙ্গারের একটি জায়গায় ফ্লাইটটি নিরাপত্তা ফিতা দিয়ে প্রস্তুত রাখেন। গত ১০ ডিসেম্বর বিমানের প্রকৌশল বিভাগের জুনিয়র টেকনিক্যাল অফিসার মাহবুবুল ইসলাম ফ্লাইটটির ইঞ্জিন ধোয়ার জন্য এক কনটেনার পানি নিয়ে আসেন। অভিযোগ, মাহবুব নিরাপত্তা বেষ্টনীর গেট দিয়ে না ঢুকে ফিতা টপকে ভিতরে প্রবেশ করেন। এটি ফ্লাইটের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের চোখে পড়ে। তবে বিষয়টি প্রথমে গোপন রাখার চেষ্টা করা হলেও পরে জানাজানি হওয়ার ভয়ে বিমান কর্তৃপক্ষ অতি গোপনে বিষয়টি তদন্ত শুরু করেছে। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ইঞ্জিন ও ইঞ্জিনের বেড পরিষ্কার কিংবা ধোয়ার নিয়ম হলো সাধারণ ভাল পানি দিয়ে। কোন ধরনের দাহ্য পদার্থ ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষেধ। কারণ দাহ্য পদার্থ ইঞ্জিনের গায়ে লাগলে আকাশে উড্ডয়ন অবস্থায় ওই দাহ্য পদার্থে আগুন ধরে বিমান ক্র্যাশ করার আশঙ্কা থাকে। এর আগে গত জুন মাসে সৌদি আরব সফর শেষে দেশে ফিরছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার আগ মুহূর্তে রানওয়েতে ধাতব বস্তুর মতো কিছু একটা দেখতে পান পাইলট। অবতরণ না করে ট্রাফিক কন্ট্রোলে যোগাযোগ করেন তিনি। সেই ধাতব বস্তু সরানোর পর প্রধানমন্ত্রীর বিমানটি রানওয়েতে অবতরণ করে। এর আগে ২০ মিনিট ধরে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটি আকাশেই থাকতে হয়েছে। ধাতব বস্তুর ওপর অবতরণ করা হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা ছিল। বিমান বাংলাদেশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ নবেম্বর হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় প্রধানমন্ত্রীকে বহন করা বাংলাদেশ বিমানের আরেকটি উড়োজাহাজ। হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে জরুরী অবতরণের পর বিমানের ত্রুটি সারিয়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছানো হলেও এই ঘটনা নিয়ে এখন মামলা দায়ের, গ্রেফতার, তদন্ত শুরু করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনা ধরা পড়ার পরের দিন ২৮ নবেম্বরে ঢাকা-কলকাতা ফ্লাইটও দুই দফা যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে পড়ে। এ নিয়ে আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর আগে গত ৩ মার্চ হযরত শাহজালালের রানওয়ের শেষ প্রান্তেরর ব্যারিয়ার ভেঙ্গে উড্ডয়ন করে জেদ্দাগামী বাংলাদেশ বিমানের ব্র্যান্ড নিউ এয়ারক্রাফট। তবে অলৌকিকভাবে ভয়াবহ দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পায় বিমানটি। প্রাণ বেঁচে যান ৩৭৪ যাত্রী। বিমান সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, চলতি বছর ৩ মার্চ ৩৭৪ যাত্রী নিয়ে ঢাকা জেদ্দাগামী ০৩৫ ফ্লাইটটি রানওয়ের নির্ধারিত সীমারেখা থেকে টেকঅফ করতে পারেনি। শাহজালালের রানওয়ের শেষ প্রান্তের ব্যারিয়ার ভেঙ্গে উড্ডয়ন করে জেদ্দাগামী ব্র্যান্ড নিউ এয়ারক্রাফট। ওই দিন এয়ারক্রাফটের মোট ওজনের সঙ্গে ইঞ্জিনের শক্তির সমন্বয় না করায় নির্ধারিত সীমারেখা থেকে টেকঅফ করার মতো গতি সঞ্চয় করতে পারেনি ফ্লাইটটি। এতে ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়। কিন্তু রানওয়ের শেষ প্রান্তে এসে ব্যারিয়ার যা উড়োজাহাজ থামানোর জাল ভেঙ্গে অলৌকিকভাবে বিমানটি টেকঅফ করতে সক্ষম হওয়ায় সবকিছুই রক্ষা পায়। ২০১৫ সালের ৩০ মার্চ সিঙ্গাপুর থেকে ছেড়ে আসা বিমান দুর্ঘটনার হাত থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সেই ফ্লাইটে যাত্রী ও ক্রু মিলে ২০৬ জন ছিলেন। সিঙ্গাপুর থেকে উড্ডয়নের পরপরই সেখানে আগুন ধরে যায়। প্রায় ৫ ঘণ্টা আকাশে কাটানোর পর শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে ফ্লাইটটি। তবে অল্পের জন্য রক্ষা পান সেই যাত্রীরা। ওই ফ্লাইটে আরও ছিলেন পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। চলতি বছরের ৭ আগস্ট ওমানের রাজধানী মাস্কাটগামী বিমানের ফ্লাইট জরুরী অবতরণ করে ভারতের রায়পুর বিমানবন্দরে। অল্পের জন্য রক্ষা পান ১৭৩ যাত্রী। সম্প্রতি বিমানের আরেকটি ফ্লাইট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ১৩৬ যাত্রী নিয়ে সিঙ্গাপুর যাত্রা করেছিল। বিমানটি রানওয়ে থেকে উড্ডয়নের পরপরই বড় ধরনের ত্রুটি ধরা পড়ে। অবস্থা বেগতিক দেখে পাইলট জরুরী অবতরণ করতে বাধ্য হন। পরে মেরামতের ৩ ঘণ্টা পর ফ্লাইটটি শাহজালাল বিমানবন্দর ছাড়ে। গত ৭ জুন হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের মুহূর্তে দুর্ঘটনায় পড়ে বিমানের বোয়িং-৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজ। বিমানের বিজি ০৪৯ ফ্লাইটটির পাইলট রানওয়ে থেকে উড্ডয়নের আগেই উড়োজাহাজের ২ নম্বর ইঞ্জিনটি গরম হয়ে বিকল হয়ে যায়, যার সংকেত বৈমানিক ডিসপ্লে থেকে দেখতে পান এবং উড্ডয়ন বাতিল করেন। একইভাবে ২০১৫ সালের ২৮ মার্চ সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকায় আসার পথে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় পড়ে বিমানের একটি এয়ারবাস এ-৩১০ উড়োজাহাজ। ফ্লাইট নম্বর বিজি ০৮৫ সিঙ্গাপুরের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে বাংলাদেশের আকাশসীমায় প্রবেশের পর চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে উড়োজাহাজের দ্বিতীয় ইঞ্জিনে আগুনের সংকেত পান বৈমানিক। সে যাত্রায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে উড়োজাহাজটি। ওই সময় পুরো বিমানবন্দরে জারি করা হয় সতর্কতা সংকেত। বিমানবন্দর ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলো নেয়া হয় রানওয়েতে। এর আগে ২০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পর দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয় বিমানের বোয়িং-৭৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজ। দুই ইঞ্জিনবিশিষ্ট ৭৭৭-২০০ ইআর (বিজি ০৪৭) উড়োজাহাজটি চট্টগ্রাম থেকে ওইদিন রাত ১২টা ৩৩ মিনিটে দুবাইয়ের উদ্দেশে রওনা হয়। এতে যাত্রী ছিলেন ২৪১ জন। উড্ডয়নের মাত্র ৮ মিনিটের মাথায় হঠাৎ বিকট শব্দ হয়। তাতে সব যাত্রী আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর বিমানের ক্যাপ্টেন ঘোষণা দেন, একটি ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেছে। অন্য ইঞ্জিনটি দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করে উড়োজাহাজটি নিয়ে নিরাপদে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন বৈমানিক। একইভাবে ২০১৪ সালের ২৮ মার্চ সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকায় আসার পথে দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয় বিমানের এয়ারবাস এ-৩১০ উড়োজাহাজ। ওই ফ্লাইটের বৈমানিক ছিলেন ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ সালেহ ও ক্যাপ্টেন ইয়ামেনী। উড্ডয়নের পর বৈমানিক দুই নম্বর ইঞ্জিনে আগুনের সতর্কতা সংকেত পান। তবে ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই বিমানটি রক্ষা পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটি তদন্তে গঠিত তদন্ত কমিটির একজন কর্মকর্তা বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভিভিআইপি ফ্লাইট থেকে শুরু করে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের যাত্রা এমনই ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। বার বার অলৌকিকভাবেই দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন ভিভিআইপি এবং যাত্রী সাধারণ। পাইলট, প্রকৌশলী, বিমান ব্যাবস্থাপনা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের অদক্ষতা, অজ্ঞতা খামখেয়ালিপনায় বিমান যাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। বিমান বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এসব কি ইচ্ছা করেই করা হচ্ছে নাকি নিছক দুর্ঘটনা তা খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। তবে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটিটি মনুষ্যসৃষ্ট নাশকতা হওয়ার পর তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখায় দ্রুততার সঙ্গে দায়ী ও দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করার ঘটনায় সকল আতঙ্ক, উদ্বেগ, শঙ্কা, ভয়া দূর করে বিমান বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সহায়ক হবে।
×