ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী

ধর্মের নামে যারা হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, জনগণ তাদের রুখে দিয়েছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬

ধর্মের নামে যারা হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, জনগণ তাদের রুখে দিয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রত্যক ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, প্রত্যেক ধর্মই মানবতা, সহনশীলতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা বলে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই চেতনা লালন করে গেছেন। বাংলাদেশে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান রয়েছে, যা বিশ্ববাসীকে আকৃষ্ট করেছে। এই চেতনাকে প্রতি মুহূর্তে পালন করা উচিত। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শুভ বড়দিন উদযাপন এবং কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি রোজারি, সিএসসির সম্মানে নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সহকারী বিশপ শরৎ গমেজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি রোজারিও, ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য জুয়েল আরেং এমপি, বাংলাদেশ খ্রীস্টান এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও প্রমুখ। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং, খ্রীস্টান এ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি জর্জ রোজারিও, সহ-সভাপতি বাবু মার্কুজ গমেজ, মহাসচিব হেমন্ত আই কোড়াইয়া, সহ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাংবাদিক নিখিল মানখিন, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক সৌরিং আরেং সেং প্রমুখ। আনন্দময় ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে বৃহস্পতিবার প্রাক-বড়দিন পুনর্মিলনী উদযাপন করেছে রাজধানীতে বসবাসরত খ্রীস্টান সম্প্রদায়। রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ উৎসবের প্রথম অধিবেশনে ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর’ গানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বরণ করে নেয়া হয়। পরবর্তীতে কেক কেটে সকলকে বড়দিনের শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রীসহ উপস্থিত সকলে গেয়ে ওঠেন বড়দিনের এই গান- ‘আজ এলো সেই বড়দিন...’। বড়দিনের আনন্দে মেতে ওঠেন উপস্থিত সকলে। নবনিযুক্ত কার্ডিনালকে অভিনন্দন জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, কার্ডিনাল মনোনীত হয়ে আর্চ বিশপ প্যাট্রিক ডি রোজারিও বাংলাদেশকে গৌরবান্বিত করেছেন। একজন বাঙালী ‘কার্ডিনাল’ হয়েছেন- এটি শুধু খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের নয়, গোটা বাঙালী জাতিকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর পেছনে খ্রীস্টান সম্প্রদায়েরও অবদান রয়েছে। বিএনপি-জায়ামাতের জ্বালাও-পোড়াও কর্মকা-ের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিখিয়ে গেছেন ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। ধর্মের দোহাই দিয়ে যারা জ্বালাও-পোড়াও ও মানুষ হত্যা করে, তাদের সঙ্গে ধর্মের কোন সম্পর্ক থাকতে পারে না। বিএনপি-জামায়াতের লোকজন সে রকম হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে দেশে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল। তাদের সেই জ্বালাও-পোড়াও কর্মকা- রুখে দিয়েছে দেশের জনগণ। দেশের উন্নয়ন কর্মকা-ের খ-চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের সার্বিক অবস্থা আজ বেশ স্বস্তিদায়ক। প্রত্যেক ধর্মের মানুষ আজ নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসব নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণভাবে পালন করছে। প্রত্যেক মানুষ দু’বেলা খেয়ে বেঁচে আছে। নিশ্চিত হয়েছে খাদ্য নিরাপত্তা। স্বাস্থ্য সেক্টরের উন্নয়ন আজ বিশ্বের অনেক দেশের অনুকরণীয়। দেশে গড়ে উঠেছে অনেক অত্যাধুনিক অবকাঠামো। মানুষের মাথাপিছু আয় ও গড় আয়ু বেড়েছে। সাধারণ মানুষের মুখে ফুটে উঠেছে হাসি। দেশের উন্নয়নে আরও অবদান রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি রোজারিও বলেন, বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বাস করছে খ্রীস্টান সম্প্রদায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের প্রতি বেশ যত্মশীল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে কার্ডিনাল বলেন, আমার কার্ডিনাল হওয়ার গৌরব বাংলাদেশ ও দেশের মানুষের। সকলের প্রার্থনার উপহারস্বরূপ সৃষ্টিকর্তা আমাকে কার্ডিনাল মনোনীত করে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সার্বিক দিক দিয়ে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। পরিবর্তন হয়েছে এ দেশের সামাজিক চিন্তাধারার। আন্তর্জাতিকভাবে সম্মান বেড়েছে। জাতিগত ঐক্য আরও মজবুত হয়েছে। আবহমান কাল থেকে এ দেশের মানুষ ভালবাসা ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ। বাংলাদেশে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা শিক্ষা ও সমাজ উন্নয়নে যে ভূমিকা রাখছে তা প্রশংসার দাবিদার। বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। এখানে আমরা সব ধর্মের মানুষ সহাবস্থানে বাস করি। ধর্ম মানুষকে সভ্য করেছে। প্রতিটি ধর্ম মানব সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করছে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
×