ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভোট পড়েছে ৬৫ শতাংশ

কোন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ॥ সিইসি

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬

কোন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ॥ সিইসি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হলেও শেষ পর্যন্ত ৬৩ থেকে ৬৫ ভাগ ভোট পড়েছে বলে ধারণা করছে কমিশন। বিকেল চারটায় ভোটগ্রহণ শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তা নুরুজ্জামান তালুকদার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নির্বাচনে ৬৩ থেকে ৬৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। তবে এর কম বা বেশি হতে পারে। পরে বিস্তারিত জানা যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে ইসি। নির্বাচন শেষে এক প্রতিক্রিয়ায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, প্রার্থী ও সমর্থকসহ সবার সহযোগিতার কারণে নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও সমর্থকরা সহযোগিতা করলে নির্বাচনে সহিংসতা ঘটার কোন আশঙ্কা থাকে না বলে উল্লেখ করেন। সকাল ৮টা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। অবশ্য কমিশন থেকে জানানো হয়, ভোটগ্রহণ শুরুর চার ঘণ্টার মধ্যে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোট পড়ে ৩০ পার্সেন্ট। তখন কমিশনের পক্ষ থেকে ৬০ ভাগ ভোট পড়বে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত কমিশনের ধারণার চেয়ে আরও ৫ ভাগ ভোট বেশি পড়েছে। অথচ গত ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৬৯ পার্সেন্ট। গতবারের চেয়ে এবার প্রায় ৫ ভাগ ভোট কম পড়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সারাদিনই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দেন ভোটাররা। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। ইসির হিসাব অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ সিটিতে মোট ভোটার রয়েছে ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯৩১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৬২ জন। অপরদিকে মহিলা ভোটার ২ লাখ ৩৫ হাজার ২৬৯ জন। এসব ভোটারের ভোট প্রদানের সুবিধার্থে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয় ১৭৪টি। ভোটকক্ষ তৈরি করা হয় ১ হাজার ৩০৪টি। বৃহস্পতিবার সকাল আটটায় শুরু হয়ে বিরতিহীনভাবে চলে বিকেল চারটা পর্যন্ত। তবে নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি কম ছিল বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াত আইভী ও বিএনপি প্রার্থী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। ভোটারদের উপস্থিত কম লক্ষ্য করে একপর্যায়ে ভোটারদের কেন্দ্রে এসে ভোটাধিকার প্রয়োগের আহ্বান জানান আইভী। অপরদিকে সাখাওয়াত হোসেনও মন্তব্য করেন, মানুষ ভীত হয়ে বা কারও প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে ভোটকেন্দ্রে আসছেন না। নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে কমিশনে বসেই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য কমিশনাররা। দুপুর ১২টার দিকে কমিশন সচিব সাংবাদিকদের বলেন, চার ঘণ্টায় নারায়ণগঞ্জ সিটিতে ৩০ ভাগ ভোট পড়েছে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩০ শতাংশ ভোট পড়ার গড় হিসাব ধরে শেষ পর্যন্ত ভোটের হার ৬০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু ভোটগ্রহণ শেষে সব মিলিয়ে ৬৫ শতাংশ ভোট পড়েছে এ নির্বাচনে। এ নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। বিকেল চারটায় ভোটগ্রহণ শেষে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা পাওয়ায় গোলযোগহীন ভোটগ্রহণ সম্ভব হয়েছে। কোন ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ছাড়াই নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের কাছ থেকে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এ সময় তিনি উল্লেখ করেন, ‘আল্লাহর অসীম রহমতে কোন মারামারি হয়নি।’ তিনি বলেন, প্রতিবারই ইসির পক্ষ থেকে শান্তিপূর্ণ ভোটের উদ্যোগ নেয়া হয়ে থাকে। নারায়ণগঞ্জ ছোট এলাকা। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য ছিল। সব প্রার্থী ও ভোটার আমাদের সহযোগিতা করেছেন, যার ফলে একটা শান্তিপূর্ণ ভোট উপহার দেয়া সম্ভব হয়েছে। ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সিইসি বলেন, নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছিল। নির্বাচনের আগে সব প্রার্থীর সঙ্গে মতবিনিময়ও করা হয়েছে। সমস্যা নিরসনে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নির্বাচনে ব্যাপকসংখ্যক সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষক ছিলেন। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের খবর মনিটরিং করা হয়েছে এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যার ফলে নারায়ণগঞ্জে একটা শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোট হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এ নির্বাচনে প্রার্থী এবং সমর্থকরা সহযোগিতা করেছিলেন। রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও সমর্থকরা সহযোগিতা করলে সহিংসতা ঘটার কোন আশঙ্কা থাকে না। নারায়ণগঞ্জে আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে তিনজনকে ৮ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া বড় ধরনের কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ভোটের ফল মেনে নেবেন বলে ইতোমধ্যে দুই প্রধান মেয়র প্রার্থী জানিয়েছেন। এ নির্বাচনের মতো পরবর্তী নির্বাচনেও সবাই জনগণের রায় মেনে নেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ জানান, ভোটের আগের দুই দিন ও ভোটের দিনের মতো পরের একদিনও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তৎপর থাকতে বলা হয়েছে। তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে সবদিকে তীক্ষè দৃষ্টি রাখতে। শৈথিল্য না দেখাতে। কেউ যাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে। যারা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে, তাদের দুষ্কৃতকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। তারা শাস্তির আওতায় আসবে। ইসির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে সিইসির সঙ্গে ছিলেনÑ নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক, মোঃ আবু হাফিজ, মোঃ জাবেদ আলী ও ইসি সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ।
×