ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষকরা এবার পেঁয়াজ-রসুন আবাদে ঝুঁকছে

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬

কৃষকরা এবার পেঁয়াজ-রসুন আবাদে ঝুঁকছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা ॥ চলতি রবি মৌসুমে দেশে পেঁয়াজ ও রসুনের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদি কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয় তাহলে এবার পিঁয়াজ ও রসুন উৎপাদনের পূর্বের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে চলতি মৌসুমে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার হেক্টরে এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১ লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন। ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে পিঁয়াজ উৎপাদন হয়েছিল ১০ লাখ মেট্রিক টন। এবার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ধার্যকৃত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও প্রায় ১২ হাজার হেক্টরে বেশি পিঁয়াজ আবাদ হয়েছে। অর্থাৎ ধার্যকৃত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৭৮ হাজার মেট্রিক টন বেশি পিঁয়াজ উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত ২০০৭-০৮ অর্থবছরে পিঁয়াজের বাম্পার ফলন হওয়ায় দাম ছিল কেজিপ্রতি ১৮ থেকে ২০ টাকায়। গত বছর (২০০৮-০৯) পিঁয়াজের আবাদ কম হওয়ায় এবার বাজারে পিঁয়াজের দাম বেশি হয়েছে। অর্থাৎ পিঁয়াজ ও রসুনের দাম দ্বিগুণ হয়ে যায়। গত বছর গমের দাম বেশি থাকায় কৃষকরা পিঁয়াজ ও রসুনের পরিবর্তে গম চাষ করে বেশি। এবার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত। কৃষকরা তাই ঝুঁকেছে পিঁয়াজ-রসুনের আবাদে। এবার পিঁয়াজের দানা (বীজ) বিক্রি হয় অর্ধেকেরও কম দামে। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে প্রতিকেজি বীজ বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৫ শ’ টাকা দরে। এবার বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা দরে। রসুন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭০ হাজার হেক্টর। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার মেঃ টন। গত বছর মৌসুমের শুরু থেকেই রসুনের বাজার ছিল চড়া। এবার কৃষকরা রসুন চাষের জন্য কার্তিক মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই জমি প্রস্তুত রাখে। প্রতি হেক্টরে পিঁয়াজ উৎপাদন গড় হিসাব ধরা হয়েছে সাড়ে ৬ মেট্রিক টন এবং রসুন উৎপাদন মাত্রা ৬ মেট্রিক টন। উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা পিঁয়াজ ও রসুনের জমিতে সেচ দেয়া শুরু করেছে। কোথাও ৩টি আবার কোন এলাকায় ৪টি সেচ দেয়া হয়। গত ৪/৫ বছর ধরে পাবনা, রাজবাড়ী, ফরিদপুর এবং রাজশাহীর কৃষকরা পিঁয়াজ ও রসুনের জমিতে সেচ দেয়া শুরু করেছে। এই অঞ্চলসমূহের কৃষকরা পিঁয়াজ ও রসুনের জমিতে রাসায়নিক সারের পাশাপাশি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এ ব্যাপারে কৃষকদের উৎসাহ দিচ্ছে। ট্রিপল সুপার ফসফেট (টি.এস.পি), মিউরেট অব পটাশ (এমপি) এবং ইউরিয়া সারের দাম কমায় কৃষকেরা পরিমাণ মতো সার প্রয়োগ করতে পারছে। সর্বাধিক পিঁয়াজ উৎপাদন হয় পাবনা ও ফরিদপুর জেলায়। পাবনা জেলায় আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছে ৩৩ হাজার ৯৫ হেক্টরে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৩৪ হাজার ৮ শ’ ৯০ মেঃ টন। সুজানগর উপজেলায় ১০ হাজার ৯ শ’ হেক্টরে, সাঁথিয়ায় ১০ হাজার হেক্টরে এবং পাবনা সদরে ৬ হাজারে ৮ শ’ ১০ হেক্টরে। এছাড়াও ঈশ্বরদীতে ২ হাজার ৬০ হেক্টর এবং বেড়ায় ২ হাজার ৩ শ’ হেক্টরে। ফরিদপুর জেলায় পিঁয়াজ আবাদ ও লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে যথাক্রমে ২৬ হাজার ২৫ হেক্টর ও ১ লাখ ৬২ হাজার ৬ শ’ ৫২ মেঃ টন। রাজশাহী জেলায় পিঁয়াজ আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৯ শ’ ২৫ হেক্টর ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৮৬ হাজার ৫ শ’ ৭২ মেঃ টন। রাজবাড়ী জেলায় ১৩ হাজার ৮৮৭ হেক্টর ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৭৯ হাজার ৮ শ’ ২৮ মেট্রিক টন। নাটোর জেলায় ৪ হাজার ৭ শ’ ৬৭ হেক্টরে পিঁয়াজ আবাদ হয়েছে এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২২ হাজার ২৫ মেঃ টন। কুষ্টিয়া জেলায় ৮ হাজার ৫৮৫ হেক্টরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছে ৫১ হাজার ৮৭৮ মেঃ টন। ঝিনাইদহ জেলায় ৫ হাজার ৭ শ’ ৯৮ হেক্টরে উৎপাদন হবে ৩৬ হাজার ৯ শ’ মেট্রিক টন। মাগুরা জেলায় ৪ হাজার ৮ শ’ ৭০ হেক্টরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছে ৩০ হাজার ৬ শ’ ৪১ মেট্রিক টন। মানিকগঞ্জ জেলায় আবাদ হয়েছে ৫ হাজার ৯ শ’ ৬৬ হেক্টরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩৬ হাজার ৪ শ’ ১২ মেট্রিক টন। এছাড়াও মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলায় যথাক্রমে ৩ হাজার ৯ শ’ ৫৭ হেক্টর ও ৩ হাজার ৬ শ’ ৩ হেক্টরে পিঁয়াজ আবাদ হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুর, রংপুর, গাইবান্ধা ও নীলফামারী জেলায় ক্রমশই পিঁয়াজ উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিভূতি ভূষণ সরকার জানান, এবার পিঁয়াজ বীজের দাম কম ছিল এবং বীজের মানও ভাল ছিল। সুজানগর উপজেলার মানিকহাট, উলাট, বামনদি, চরদুলাই, বনকোলা এলাকার কৃষকরা জানান, এবার পিঁয়াজ বীজে ভাল চারা হয়েছে। বিস্তীর্ণ গাজনা বিল এলাকা এবং সাঁথিয়ার ঘুঘুদহ বিল এলাকার গৌরিগ্রাম, বিষ্ণুপুর, ক্ষেতুপাড়া, চরপাড়া, রঘুরামপুর, মাছগ্রামের কৃষকরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জমিতে চারা রোপণ করছে। ক্ষেত-মজুরদের দারুণ চাহিদা। প্রতিদিন একজন ক্ষেত-মজুরকে দিতে হচ্ছে নগদ ৩ শ’ ৫০ টাকা থেকে ৪ শ’ টাকা। এছাড়া এক বেলা খাবারও দিতে হচ্ছে।
×