ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সামরিক ব্যয় রেকর্ড বৃদ্ধি টোকিওর

পড়শীদের চাপে জাপানের প্রতিরক্ষা

প্রকাশিত: ০৪:২১, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬

পড়শীদের চাপে জাপানের প্রতিরক্ষা

উত্তর কোরিয়া ও চীনের ক্রমবর্ধমান হুমকি মোকাবেলার জন্য জাপানী মন্ত্রিসভা পরপর পাঁচ বছরের মতো সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করা এবং নতুন উন্নত সাবমেরিন তৈরি করার তহবিল বৃদ্ধি। খবর ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও এএফপির। মন্ত্রিসভা বৃহস্পতিবার এপ্রিলে শুরু হবে এমন অর্থ বছরের জন্য প্রতিরক্ষা ব্যয় হিসাবে ৫ দশমিক ১৩ ট্রিলিয়ন ইয়েন (৪ হাজার ৩শ’ ৬০ কোটি ডলার) অনুমোদন করেছে। উত্তর কোরিয়ার পরমাণু ও ক্ষপণাস্ত্র হুমকি ও চীনের সঙ্গে ভূখ-গত বিরোধকে সামনে রেখে এটিই জাপানের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা বাজেট। গত কয়েক বছর ধরেই সামরিক ব্যয় বাড়াতে জাপানের ওপর চাপ বেড়েছে। কারণ চীন জাপান শাসিত দ্বীপগুলোর প্রতি সার্বভৌমত্বগত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে এবং উত্তর কোরিয়া ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু অস্ত্র উন্নয়ন জোরদার করেছে। চলতি বছর চারটি উত্তর কোরীয় ক্ষেপণাত্র জাপানের উত্তরাঞ্চলীয় উপকূলের কাছে এস পড়ে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী তোমোমি ইনাদা চলতি সপ্তাহে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, জাপানের চারদিকের নিরাপত্তা পরিবেশ সব সময়েই আরও বেশি প্রতিকূল হয়ে উঠছে। জাপানের আগামী অর্থবছরের প্রতিরক্ষা বাজেট শতকরা ১ দশমিক ৪ ভাগ বেশি, কিন্তু তা যে পার্লামেন্টে অনুমোদিত হবে তা প্রায় নিশ্চিত।এমন কি সম্প্রতি জাপানের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়লেও তা দু’ দশকেরও বেশি সময় ধরে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) শতকরা ১ ভাগের কাছাকাছিই রয়ে গেছে। এটি বিশ্বের বড় বড় শক্তির মধ্যে প্রতিরক্ষা ব্যয়ের অন্যতম নিম্ন হার। সেই তুলনায় চীন প্রতিরক্ষার পিছনে জিডিপির শতকরা প্রায় ২ ভাগ এবং জাপানের তুলায় ডলারের হিসাবে পাঁচ গুণেরও বেশি ব্যয় করে থাকে। স্টকহোক ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সংকলিত উপাত্তে এটি দেখা যায়। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে তার দেশের সামরিক বাহিনী গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সংবিধান অনুযায়ী জাপানের ভূমিকা আত্মরক্ষার ক্ষেত্রেই সীমিত। তিনি সংবিধান সংশোধনের চেষ্টা করছেন। তিনি নতুন নিরাপত্তা আইন দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেন, যেগুলো চলতি বছর কার্যকর হয়। এতে দ্বিতীয় বিশ্বয্দ্ধু শেষ হওয়ার পর প্রথমবারের মতো জাপানী সৈন্যদের পক্ষে বিদেশে যুদ্ধ করা সম্ভব হবে। নতুন বাজেটের আওতায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় এক নতুন ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির জন্য তহবিল বরাদ্দ করে জাপানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে চান। নতুন ব্যয় বৃদ্ধিতে টোকিওর পূর্ব চীন সাগীয় জনমানবশূন্য দ্বীপগুলো রক্ষায় দৃঢ়সংকল্পও প্রতিফলিত হয়। সেনকাকু নামে পরিচিত ও জাপানের শাসনাধীন ঐসব দ্বীপের মালিকানা চীনও দাবি করে থাকে। চীনে সেগুলো দাইয়াওয়ু নামে পরিচিত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন উপলক্ষে প্রচার চলাকালে ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার সামরিক সমর্থনের বিনিময়ে আরও অর্থ পরিশোধ করতে মার্কিন মিত্রদের প্রতি অহ্বান জানালে জাপানের সামরিক ব্যয় এক ইস্যুতে পরিণত হয়। জাপানে যুক্তরাষ্ট্রর প্রায় ৫৪ হাজার সৈন্য মোতায়েন রয়েছে এবং এক দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা চুক্তি মোতাবেক যুক্তরাষ্ট্র জাপানকে রক্ষা করতে বাধ্য। জাপানের প্রতিরক্ষা বাজেটে উন্নত সোনারযুক্ত নতুন ধরনের সাবমেরিন তৈরি করতে ৭ হাজার ৩শ’ কোটি ইয়েন বরাদ্দ করা হয়েছে। এটি হবে পূর্ব চীন সাগরীয় নির্জন দ্বীপগুলোর ওপর টোকিওর সার্বভোমত্বের প্রতি চীনা চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে এক সুরক্ষা। জুন মাসে চীনা যুদ্ধ জাহাজ বিরোধপূর্ণ জলসীমায় প্রথমবারের মতো প্রবেশ করেছিল। নৌবাহিনীতে নতুন নতুন সাবমেরিন সংযোজন ঐ অঞ্চলে চীনের অগ্রগতি রোধে সহায়ক হবে। জাপানের অবসরপ্রাপ্ত ভাইস এ্যাডমিরাল তোশিয়ুকি ইতো একথা বলেন।
×