ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চায়ের সুবর্ণ দিন

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬

চায়ের সুবর্ণ দিন

ফিরে আসছে চা শিল্পের সুবর্ণ দিন। উৎপাদন এবং রফতানি হ্রাসের দিন ফুরিয়ে আসছে। ১৬২ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে দেশের ১৬২টি বাগানে এবার ৮৫ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হবে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর চলতি উৎপাদন মৌসুম শেষ হচ্ছে। অনুকূল আবহাওয়া ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রণীত নীতির সহায়তার কারণে গত কয়েক বছর ধরে চা উৎপাদন বেড়েছে। গৌরব হারানোর পথ থেকে চা শিল্প ফিরে পাচ্ছে তার হৃতরাজ্য। চা বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী শিল্প এবং সত্যিকারের একটি অর্থকরী ফসল। এক সময় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে পাটের পরেই ছিল চায়ের অবস্থান। দেশের জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই গত একদশকে চায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তা আমদানি পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এ দেশের চা বেশ উন্নতমানের। বিশ্ববাজারে এর প্রচুর চাহিদা, তদুপরি আমদানি বেড়েছে। কমেছে রফতানি। চায়ের উৎপাদনের প্রবৃদ্ধির চেয়ে ভোগ চাহিদার প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। ফলে চা রফতানিকারক দেশ হয়ে গেছে আমদানিকারক। তাই দেশীয় চা শিল্পকে সহায়তা প্রদানের জন্য আমদানির ওপর ট্যারিফ আরোপ করা হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের মতে, চাহিদার চেয়ে বেশি উৎপাদন করা গেলে আমদানির প্রবণতা আর থাকবে না। আমরাও মনে করি তাই যেন হয়। চা আর আমদানি নয়, রফতানি পণ্য হিসেবে ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে তৎপরতা চলছে। এ লক্ষ্যে চা শিল্প উন্নয়নে একটি পরিপূর্ণ রোডম্যাপ বা পথ নক্সা করা হচ্ছে। চায়ের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কৌশল নেয়া হয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে সমতলে চা চাষ করা হচ্ছে। চা উৎপাদন সর্বকালের সব রেকর্ড ভাঙ্গতে যাচ্ছে বাংলাদেশে। ইতোমধ্যেই উচ্চ ফলনশীল ও আকর্ষণীয় গুণগতমানের ২০টি ক্লোন উদ্ভাবন ছাড়াও এ পর্যন্ত চার ধরনের বীজ উদ্ভাবন করেছে চা গবেষণা ইনস্টিটিউট। এসব চায়ের উৎপাদন ক্ষমতা হেক্টরপ্রতি তিন হাজার কেজি থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে চার হাজার কেজি। অদূর ভবিষ্যতে আরও দুটি নতুন ক্লোন বিটি-১৯ ও বিটি-২০ চা শিল্পের জন্য অবমুক্ত করা হবে। দেশের ১৭টি জেলায় মোট ১ লাখ ১ হাজার ৭২ হেক্টর ক্ষুদ্রায়তনের চাষযোগ্য জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। গত ৪৫ বছরে আবাদী জমি ৪২ দশমিক ৬ হাজার হেক্টর থেকে বেড়ে ৬০ হাজার হেক্টর হয়েছে। চলতি বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৭৫-৭৮ মিলিয়ন কেজি চা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ৮৫ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হতে যাচ্ছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে প্রতিবছর প্রায় ১ দশমিক ৩ মিলিয়ন কেজি চা বিদেশে রফতানি করা হয়। এর পরও চলতি বছর ৬ দশমিক ৯ মিলিয়ন কেজি চা আমদানি করা হয়েছে। দেশের জিডিপিতে চা খাতের অবদান শূন্য দশমিক ৮১ শতাংশ। দেশের ১৬২টি বাগানের ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে উৎপাদিত চা দেশীয় চাহিদার ৯৬ শতাংশ মেটাতে পারে। উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়ছে না। তীব্র আর্থিক সঙ্কটের সম্মুখীন এ শিল্পটি। বিদ্যমান ব্যাংক সুদের হার বেশি হওয়ায় বিনিয়োগের জন্য ঋণের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করা উৎপাদনকারীদের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্যাস সরবরাহ ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ সমস্যা, জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ ও শিল্পের উন্নয়নের পথে অন্তরায় হলেও তা দূরীকরণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ রয়েছে বলে সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বলেছেনও। ২০২১ সালের ভিশন বাস্তবায়নে চা শিল্পের উন্নয়ন ও প্রসারে অর্থনৈতিকসহ অধিক সহযোগিতা প্রদানে সরকার এগিয়ে আছে। শিল্পটির প্রসারে আগামী জানুয়ারিতে ঢাকায় চা উৎপাদনের আয়োজন করা হয়েছে। চা শিল্পকে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতেই হবে। এ জন্য শ্রমঘন এ শিল্পকে সুরক্ষা দিতে হবে।
×