ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গীতিকার ও সুরস্রষ্টা আবদুল গফুর হালী আর নেই

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ২২ ডিসেম্বর ২০১৬

গীতিকার ও সুরস্রষ্টা আবদুল গফুর হালী আর নেই

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের কিংবদন্তি, গীতিকার ও সুর¯্রষ্টা আবদুল গফুর হালী আর নেই। বুধবার ভোরে নগরীর সার্সন রোডের মাউন্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। তিনি দুই ছেলে, দুই মেয়েসহ অসংখ্য ভক্ত ও গুণগ্রাহী রেখে যান। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির মাইজভান্ডার দরবার শরীফে প্রথম নামাজে জানাজা, একই দিন বাদে মাগরিব নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ ময়দানে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা এবং নিজ গ্রামের বাড়ি পটিয়া উপজেলার রশিদাবাদ গ্রামে তৃতীয় নামাজে জানাজা শেষে তাঁকে দাফন করা হবে। গফুর হালীর মৃত্যুতে চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। আবদুল গফুর হালী চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ও মাইজভান্ডারী গানের কিংবদন্তি গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী। শেফালী ঘোষ, সন্দীপন, শিরিনসহ অনেক শিল্পীর উত্থান গফুর হালীর গান গেয়ে। হালীর গান নিয়ে জার্মানির হাইডেলর্বাগ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাগ্রন্থ। এই কিংবদন্তীর বংশের একমাত্র শিল্পী তার নাতনী ফেরদৌস হালী গফুর হালীর লেখা গান বেতারে গেয়ে থাকেন। শিল্পী শেফালী ঘোষের গাওয়া ‘ও শ্যাম রেঙ্গুম নঅ যাইরে’, সন্দীপনের কণ্ঠে ‘সোনাবন্ধু তুই আমারে করলিরে দিওয়ানা’, শিরিনের কণ্ঠে ‘পাঞ্জাবিওয়ালা’ ও ‘মনের বাগানে ফুটিল ফুলরে’ এবং কল্যাণী ঘোষের গাওয়া ‘দেখে যারে মাইজভান্ডারে হইতেছে নূরের লেখা’ এমন অসংখ্য কালজয়ী গান লিখেছেন আবদুল গফুর হালী। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ও মাইজভান্ডারী গানের শিল্পী আবদুল গফুর হালী ১৯২৯ সালে পটিয়া উপজেলার রশিদাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আবদুস সোবহান, মা গুলতাজ খাতুন। লেখাপড়া করেছেন রশিদাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জোয়ারা বিশ্বম্বর চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ে। প্রথাগত শিক্ষা শেষ না করে স্ব-শিক্ষিত আবদুল গফুর হালী পঞ্চাশের দশক থেকে সঙ্গীতজীবন শুরু করেন। একটানা ৬০ বছর ধরে গান লিখে ও গেয়ে আঞ্চলিক গানে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি লাভ করেন। ছোটবেলায় আধ্যাত্মিক ও মরমী গান এই শিল্পীর মনে দারুন প্রভাব ফেলে। আবদুল গফুর হালী শুধু মাটির গান করেননি, ভাবের রসে মত্ত করেছেন ভক্তদের। গণসঙ্গীত শিল্পীদের মতই কণ্ঠসৈনিক হিসেবে তাকে পাওয়া যেত স্বাধীতার আন্দোলনে। আঞ্চলিক, মাইজভান্ডারী ও ভাবের গানসহ সব মিলিয়ে প্রায় দু’হাজার গান লিখেছেন তিনি। ৮৮ বছর বয়সেও গান লিখে ও গেয়ে সংসার চলত তাঁর। ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বেতারে তার লেখা গান প্রচার শুরু হলেও গীতিকার, সুরকার হিসেবে তালিকাভুক্ত হন ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে। ১৯৭৫ সালের দিকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে নাটক লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রচারিত আঞ্চলিক নাটক ‘গুলবাহার’, ‘নীলমনি’, ‘সতী মায়মুনা’, ‘কুশল্যা পাহাড়’, ‘আশেক বন্ধু আজব সুন্দরী’। গীতিকার ও সুরকার আবদুল গফুর হালীর মৃত্যুতে পিএইচপি পরিবারের চেয়ারম্যান সুফী মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের সভাপতি গবেষক সোহেল মোহম্মদ ফখরুদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুর রহিম এবং চট্টগ্রামের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে।
×